মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের জব্দ যন্ত্রাংশ কাগজ তৈরী করে নেয়ার চেষ্টা !

চাঁদপুর: বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড: মো: আমিরুল ইসলাম এর দপ্তরের গোডাউনে রক্ষিত থাকা সরকারের কোটি টাকার সম্পদের মধ্য থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যবানের অনুমান ৪ টন ওজনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ টেন্ডার, নিলাম বিহীন ও সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ন বেআইনিভাবে প্রকাশ্যে দিনের আলোতে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত রোববার (২৮মে) দুপুরে শহরের পুরানবাজার কলেজ রোডস্থ লিটন গাজীর ভাঙারি দোকানে ও ভাঙারি রাখার গোডাউন থেকে পুলিশ বিক্রিত মাল জব্দ করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের হয়নি। ঘটনার ৩দিন অতিবাহিত হলেও যারা চাঁদপুর মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউট থেকে অবৈধভাবে গোডাউনের তালা ভেঙে এসব মূল্যবান প্রায় ১০লক্ষ টাকার ৪টন সরকারি যন্ত্রাংশ বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিল, তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার মামলা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।

এ ঘটনাটি ঘটার পরপরই এ যন্ত্রাংশ পাচার করে শহরের পুরানবাজার এলাকায় একজন পুরাতন লোহা ও ভাঙারি মাল বিক্রেতা ব্যবসায়ী মো: লিটন গাজী (২৬) এর গোডাউনে রক্ষিত অবস্থায় পুরানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ অভিযান চালিয়ে যন্ত্রাংশ জব্দ করে। জব্দকৃত প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যবান মালামালের মধ্যে ছিল-অনুমান ৪টন ওজনের বড় আকারের ২টি মটর, ২টি ইঞ্জিন, পানি সেচের ২টি মেশিন, লোহার পাইসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।

ওই সময় মো: লিটন গাজী (২৬) ও মো: আরিফুর রহমান আরিফ (৫৪) নামে ২জনকে ছায়া আটক দেখিয়ে তদন্ত করছে বলে চাঁদপুর মডের থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান।

এ অভিযান পরিচালনা করেন চাঁদপুর পুরানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক আমিরুল ইসলামে নেতৃত্বে ফাঁড়ির এএসআই সনেট, এটিএসআই মোহাম্মদ আলীসহ পুলিশ সদস্যরা। জব্দকৃত যন্ত্রাংশ ও মালামাল পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চাঁদপুর মডেল থানায় এনে জব্দ তালিকা করে রেখেছেন বলে এটিএসআই মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন।

এ ঘটনাটি উৎঘাটনের জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের দায়িত্বরত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড: মো: আমিরুল ইসলাম এর নির্দেশে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি হচ্ছে, বৈজ্ঞানিক উর্ধ্বতন কর্মকতা ড: আশ্রাফুর রহমান আশ্রাফ, বৈজ্ঞানিক কর্মকতা মনিরুজ্জামান ও আবু কাউছার।

তদন্ত কমিটি গত ৩দিনেও কোন ব্যবস্থা বা প্রতিবেদন দিতে পারেনি। বরং তারা এ ঘটনার সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাচাঁবার জন্য ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউটের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের ময়মনসিংহের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে গোপন সমজোতার মাধ্যমে ভুয়া নিলাম দেখানো কাগজ পত্র সৃষ্টি করে পুলিশকে বুঝিয়ে দিয়ে মালামাল ছাড়িয়ে নেওয়ার জোর চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই অফিসের কর্মকর্তারা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ- আরিফ ও লিটন এরা দীর্ঘদিন যাবত এভাবে অবৈধভাবে চোরাই মালামাল ক্রয় ও বিক্রি করে যাচ্ছে। তারা বলে থাকে তাদের সাথে প্রশাসনের মাসওয়ারী চুক্তি রয়েছে। এ অফিসের ফিল্ড এ্যাসেসটেন্ড(ক্ষেত্র সহকারী) মো: নূরুজ্জামান, হেচারী বিভাগের এলএলএম (পিয়ন) সামছুল আলম মানিকসহ কয়েকজন এক জোট হয়ে এক প্রকার চোরাইভাবে গোপনে ফিল্ড এ্যাসেসটেন্ড (ক্ষেত্র সহকারী) মো: নূরুজ্জামানের নির্দেশে শহরের কয়েকজন ভাঙারি দোকানদারকে মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরে এনে দরকষাকষির মাধ্যমে দূর্দান্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে রোববার(২৮মে) বেলা আড়াই টায় ১লাখ ৭হাজার টাকায় এ যন্ত্রাংশ বিক্রি করে দেয়। এসব মালামাল ক্রয়কারি ভাঙারি ব্যবসায়ী মো: লিটন গাজী ও সামছুল আলম মানিকের মেয়ের জামাতা আব্দুর রহমান এ মালামাল বিক্রির সত্যতা স্বীকার করেছেন।

ক্ষেত্র সহকারী মো: নূরুজ্জামানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার দিন আমি চাঁদপুরে ছিলাম না সিলেটে ছিলাম। চাঁদপুর এসে সোমবার জানতে পেরেছি। তবে বিষয়টি একটু ভুলের কারণে হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি শেষ করার চেস্টা করছে। একটু অপেক্ষায় থাকুন।

হেচারী বিভাগের এলএলএম (পিয়ন) সামছুল আলম মানিকের মেয়ের জামাতা আব্দুর রহমান বলেন, আমি বিভিন্ন স্থান থেকে পুরাতন রড ক্রয় করে চাক্কি বানাই। ফিল্ড এ্যাসেসটেন্ড (ক্ষেত্র সহকারী) মো: নূরুজ্জামানের অনুরোধে আমি কয়েকজন ভাঙারি ব্যবসায়ীকে মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউট নদী কেন্দ্রে আনলে তারা ক্ষেত্র সহকারী মো: নূরুজ্জামানের সাথে মোবাইলে দরদাম ঠিক করে রোববার (২৮মে) বেলা আড়াইটায় ১ লাখ ৭হাজার টাকায় পুরানবাজারের ভাঙার দোকানদার লিটনের কাছে এ সব মালামাল বিক্রি করে দেয়।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড: মো: আমিরুল ইসলাম জানান, আমাদের এখানে যেসব পুরাতন মালামাল রয়েছে, তার তালিকা আমরা আমাদের প্রধান কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। সে অনুযায়ী কমিটি গঠন করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তা কমিটি নিলাম(ওয়াকসানের) মাধ্যমে বিক্রি হবে। যে যন্ত্রাংশ পুলিশ জব্দ করেছে, সে মালামাল আমাদের অগোচরে বিক্রি হয়েছে। এ বিষয়ে আমি নিলামের কাগজ সংগ্রহ করে করে পুলিশকে দিব বলেছি। আমাদেরকে একটু সময় দিন দেখেন আমরা কি করি।

এ ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে, তার প্রধান বৈজ্ঞানিক উর্ধ্বতন কর্মকতা ড: আশ্রাফুর রহমান জানান, এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি ব্যাপক তদন্ত করে যাচ্ছে। ঘটনার সাথে এ অফিসের অনেকে আছে। আমরা চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ সাহেবের সাথে দেখা করে কথা বলেছি। বিষয়টি শেষ করার চেস্টা চলছে। আমরা নিলামের কাগজ দিব বলেছি ওসি সাহেবকে।

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, মালামাল জব্দ করে ঘটনাস্থল থেকে চাঁদপুর মডেল থানায় এনে রাখা হয়েছে। তারা টেন্ডার প্রক্রিয়ার কি কাগজ পত্রআছে, তা েেদখাবে বলেছে। তা দেখাতে পারেনি। মঙ্গলবার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড: মো: আমিরুল ইসলাম বলেছেন তারা কাগজ পত্র দিবেন। অপেক্ষা করুন। তানাহলে বিয়য়টি তদন্ত করে দেখে আইনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম