।। এস ডি সুব্রত।। অদিতি ডাক নাম। পুরো নাম আনিকা রহমান অদিতি। স্বামী তৌহিদুল ইসলাম তওফিক। এক ছেলে এক মেয়ে।সোনার সংসার। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অদিতি। রান্না করতে হবে। তারপর বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবে। ন’টায় যাবে নিজের অফিসে। এতটুকু আলসেমি নেই। অনিন্দ্য অবাক হয় অদিতির নিয়মানুবর্তিতা দেখে। অনিন্দ্য অদিতির ফ্রেন্ড, ফেসবুক ফ্রেন্ড। অনিমেষ শুভ্র অনিন্দ্য।সবাই অনিন্দ্য নামে ই চেনে। স্ত্রী অনিকা অন্নি ।এখন পর্যন্ত সংসারে কোন নতুন অতিথির আগমন ঘটেনি। দুজন দুই ডিপার্টমেন্ট এ চাকুরি। কুমিল্লা কোটবাড়িতে একটি ক্যাফেটেরিয়া তে দুজনের পরিচয় হয়।এরপর থেকে দুজন ভালো বন্ধু হয়ে উঠে।একজন আরেক জনের ভালমন্দ খোঁজ খবর নেয়। অনিন্দ্য অদিতির কথা শুনে যারপর নাই বিমোহিত হয়। এত সরলতা,এত কর্মনিষ্ঠা অনিন্দ্য আর কোন মহিলার মধ্যে দেখেনি। স্বামী সংসার সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নিজের অফিসে সকল কাজকর্ম অত্যন্ত সুচারুরুপে সম্পন্ন করেন। একজন সৎ ও কর্মনিষ্ঠ অফিসার। অফিসে কাজের চাপ থাকায় প্রায়ই রাত করে বাড়ি ফিরতে হয়। তবু ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন না। স্বামী তওফিক সাহেবও ইতিবাচক মানুষ। স্ত্রী কে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। অনিন্দ্য মন খারাপ হলেই অদিতির দ্বারস্থ হয়। মেসেঞ্জারে অদিতির সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও অদিতি অনিন্দ্য কে সময় দেয়ার চেষ্টা করে।
অনিন্দ্য অদিতির সাথে কথা বলে আনন্দ পায়, একধরনের ভরসা পায়।অনেক কষ্ট ভুলে যায়।
একদিন অনিন্দ্য অদিতিকে বলে , আচ্ছা আমি আপনাকে এত জ্বালাই, আপনার রাগ হয় না?
না ,রাগ করব কেন? আপনি তো খারাপ কিছু বলেন না। আমার সাথে একটু কথা বলে যদি আপনার কষ্ট কিছুটা লাঘব হয় তাতে আমার তো ক্ষতি নেই।
সত্যি ই আপনি একজন অসম্ভব ভালো মানুষ। আপনার কাছে আমি ঋণী হয়ে থাকব। অনিন্দ্য অদিতিকে উদ্দেশ্য করে বলে।
ঋণের কথা বলছেন কেন।মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ানো টাকে আমি কর্তব্য বলে মনে করি, অদিতি জবাব দেয়।
সত্যি ই আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আপনার সাথে যতই কথা বলছি ততই যেন এক অনন্য জগত চোখের সামনে উন্মুচিত হচ্ছে। নতুন স্বপ্ন অংকুরিত হয় নিত্য। একটা দারুন সুন্দর পৃথিবী দেখতে পাই চোখের সামনে।
আপনি আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছেন। এত আবেগ থাকলে চলবে না । শক্ত হতে হবে। জীবন টা তো কুসুম শয্যা নয়। অদিতি অনিন্দ্য কে বুঝানোর চেষ্টা করে।
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আমি আবেগ টা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। অনিন্দ্য জবাব দেয়।
পারতে হবে।এই যে আপনি যখন তখন আমাকে ফোন দেন, এটা কিন্তু ঠিক না। আমার তো একটা সংসার আছে। আপনি সেকথা বার বার ভুলে যান। আপনি ভালো কথা বলেন , আমিও বলি। কিন্তু এটা তো সমাজ সংসার মেনে নেবে না। অদিতি অনিন্দ্য কে বুঝানোর চেষ্টা করে।
আপনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আমি এটা বারবার ভুলে যাই। আমি বুঝতে পারি আমার কারনে আপনার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, তারপরও আপনাকে বিরক্ত করি। সরি, ক্ষমা করবেন ।
না না, সরি বলতে হবে না। আপনার মন টা শক্ত করেন। আপনি বাচ্চাদের মত কথা বলেন। এমন টা হলে তো চলবে না।
আপনি আমাকে আপনার সাথে যোগাযোগ না করতে বলছেন, অনিন্দ্য অদিতির কাছে জানতে চায়?
না আমি সেকথা বলিনি। আপনি তো সীমা ক্রস করে ফেলেন।এই যে আপনি আজ আমাকে ফোন দিলেন। এক পর্যায়ে আমি ফোন রেখে দিলাম। আপন নি আবার ফোন দিলেন। আপনি রাখতে চান না। আমার তো বাচ্চারা আছে। ওরা আমায় জিজ্ঞেস করে কার সাথে এত কথা বলি।
সরি, আমি বুঝতে পারিনি। অনিন্দ্য দূঃখ প্রকাশ করে।
সরি বললেই কি সব মিটে যায়।সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? অদিতি প্রশ্ন করে।
না, তা হয় না। তাহলে কি করব?
অফিস টাইমে তো বেশি ব্যস্ত থাকেন , কথা বলতে পারি না। অনিন্দ্য আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলে।
এতটা সিরিয়ার হবেন না।টেইক ইট ইজি। অদিতি জবাব দেয়।
অনিন্দ্য র মন খারাপ হয়। অভিমান জমে বুকের ভেতর। ঠিক আছে । জ্বালাব না আপনাকে।
আমার জ্বালাতন থেকে মুক্তি চাইছেন। আপনাকে এবার মুক্তি দেব। তাহলে আপনি খুশি তো। অনিন্দ্য অদিতিকে বলে।
আপনি রেগে যাচ্ছেন। এতটা সিরিয়াস হচ্ছেন কেন। আমি তো জাস্ট বাস্তবতা বুঝাবার চেষ্টা করছি।
তাহলে বলেন, কখনো ভুলে যাবেন না, অনিন্দ্য’র আকুতি।
না ভুলে যাব না। অদিতি জবাব দেয়।
আপনি পাশে থাকলে ভরসা পাই। একটা সান্ত্বনা পাই।
আছি তো পাশে। অদিতি আশ্বস্ত করে অনিন্দ্য কে।
আপনার , আপনার সংসারের কোন ক্ষতি হোক এটা কখনো চাইনা।
তা আমি জানি। কিন্তু আমার চিন্তা আপনাকে নিয়ে। আপনি মাঝে মাঝে বেসামাল হয়ে পড়েন। অদিতি অনিন্দ্য কে উদ্দেশ্য করে বলে।
না না এতটা চিন্তা করবেন না। আমি জ্ঞাতসারে আপনার কোনো ক্ষতি করব না। অনিন্দ্য জবাব দেয়।
তাও আমি জানি।
আমার আবেগ টা একটু বেশি। অনিন্দ্য যোগ করে।
তাতো দেখতেই পাচ্ছি। অদিতি বলে উঠে।
ভেতরে ভেতরে অনিন্দ্য’ র মন খারাপ হয়।এই বুঝি অদিতির সাথে তার বন্ধুত্ব টা ভেঙ্গে যায়। রাতে ঘুমাতে গিয়ে ঘুম আসে না অনিন্দ্য’র। মনের মাঝে এক
ঝড় বয়ে যায়। অজানা শংকায় উড়ে যায় যেন ছোট্ট স্বপ্ন টা। শেষে একটা সিগারেট ধরায়। সিগারেট ধোঁয়ার সাথে ভেতরের কষ্ট টাকে শূন্যে মেশানোর চেষ্টা করে। মনে মনে প্রার্থনা করে পরম করুণাময়ের কাছে অদিতির সংসারে যেন চাঁদের হাসি লেগে থাকে। সেখানে যেন কোন আঁচর না লাগে। মনের অজান্তেই চোখের কোণে অশ্রু জমে।
অনিন্দ্য টের পায়,তার মনের ভেতর অদিতির জন্য অন্যরকম এক ভাললাগা কাজ করে।যে ভাললাগা প্রকাশ করতে পারেনা। বাস্তবতা,সমাজ সংসার এখানে দেয়াল হয়ে আছে।
গত দু’বছর করোনার কারণে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় । এবছর স্বাভাবিক ঈদ উদযাপন হবে আশা করা যাচ্ছে। অনিন্দ্য বরাবরই ঈদ আনন্দ উপভোগ করে । ছাত্র জীবন থেকেই অনিন্দ্য তাঁর বন্ধুদের বাসায় ঈদের আনন্দ ও খাওয়া দাওয়া উপভোগ করত । এখন সেসব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ নেই । সকল আনন্দ ও দুঃখের মূহুর্তগুলো অনিন্দ্য শেয়ার করে অদিতি র সাথে ।
তবে এবছর ঈদের প্রাক্কালে অনিন্দ্য র মনটা ভালো নেই । শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সময় পার করছে । অদিতিও ভীষণ ব্যস্ত থাকে। আগের মতো অনিন্দ্যর খোঁজ নিতে পারে না। তবু অনিন্দ্য চায় অদিতি সব সময় ভালো থাকুক। অদিতি এবার ভালভাবে ঈদ উদযাপন করুক , ঈদের আনন্দ অদিতির সংসারে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ । অদিতির সংসারে ঘিরে থাকুক চাঁদের হাসি অনিন্দ্য দূর থেকে বিধাতার কাছে প্রার্থনা করে।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।
০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ ।
sdsubrata2022@gmail.com