চাঁদপুরে বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ছবি: ফোকাস মোহনা.কম।

চাঁদপুর : চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি, কচুয়া ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসল ও গবাদি পশু। তবে জলাবদ্ধতায় প্লাবিত হয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলাসহ ৬২ ইউনিয়নে ১৬ কোটি টাকার চাষ করা মাছ পানিতে ভেসে নদীতে চলেগেছে। এছাড়া শাহরাস্তি উপজেলায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার রোপা আউশের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ বিভাগ এখন পর্যন্ত গবাদি পশু ও হাঁস মুরগির ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করতে পারেনি। আর হাইমচরে ১শ’ একর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত কয়েকদিনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে-এ বছর জেলায় রোপা আমন আবাদ ব্যাহত হবে। বানের পানিতে তলিয়েগেছে শাহরাস্তি উপজেলার ৩৪১ হেক্টর ফসলি জমি।

শাহরাস্তি রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা উনকিলা গ্রামের কৃষক কেরামত আলী বলেন, আমার ১ একর জমিতে আউশের আবাদ আছে। ধান কর্তনের সময় হয়েছে। কিন্তু এখন সবই শেষ। বসতঘর ও রাস্তায় পানি। আমাদের এই ক্ষতির কি হবে বলতে পারছি না।

শাহরাস্তি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার বলেন, গত প্রায় ১০ দিনে উপজেলার বন্যা কবলিত ইউনিয়নের মাঠ জরিপে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৪ হাজার কৃষকের তথ্য পেয়েছি। রোপা আউশসহ বিভিন্ন ফসলে ৬ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রাথমিক ক্ষতির আশঙ্কা করছি।

এদিকে হাইমচর উপজেলার সেচ প্রকল্প এলাকায় ১০০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা হচ্ছে ১০৭২জন।

আরও পড়ুন>>ফরিদগঞ্জে ২৯০০ প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সার-বীজ বিতরণ

উত্তর আলগী ইউনিয়নের পান চাষী শাহজাহান ও শহীদুল্লাহ ঠাহরদার বলেন, আমরা কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পানের বরজ করেছি। বৃষ্টিতে আমাদের বরজ শেষ। পানের গোড়া পচেগেছে। পানি গেলেও আর পান গাছ বাঁচবে না। কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো বলতে পারছি না। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না।

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার বলেন, উপজেলার ১১৯ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ আছে। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পান চাষের সাথে জড়িত আছে ১হাজার ৭২জন কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ততের তালিকা তৈরী এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাবো।

বানের পানিতে শাহরাস্তি উপজেলা ও জলাবদ্ধতায় সদর এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অধিকাংশ পোল্ট্রি খামারগুলো পানিতে তলিয়েগেছে। তবে খামারিদের সঠিক তথ্য বলতে পারছে না উপজেলাগুলোর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।

শাহরাস্তি উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল্লাহ আল শামীম বলেন, গবাদি পশুর বড় ধরণের কোন খামার এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে এই এলাকায় প্রায় ১০টি খামার আছে। আমাদের মাঠ কর্মীরা কাজ করছে। কিছুদিন পরে খামারিদের তালিকা ও ক্ষতি নির্ণয় করা হবে।

আরও পড়ুন>>হাইমচর সহস্রাধিক কৃষকের পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত

চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, জেলার শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ ও সদর উপজেলায় বানের পানি ও অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে। জেলায় খামারিদের তথ্য এখন পর্যন্ত আসেনি। উপজেলা থেকে তথ্য আসলে তখন পরিসংখ্যান বলা যাবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, বানের পানি ও জলাবদ্ধতায় এ বছর বহু খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের মাঠ জরিপ চলমান। প্রাথমিকভাবে আমরা জেলার ৬২টি ইউনিয়নের ১০৮০১জন খামারির তথ্য পেয়েছি। তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ১৬ কোট ৬৯ লাখ টাকা।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে চাঁদপুরে রোপা আমন ব্যহত হচ্ছে। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত এবং রোপা আমন লাগানো বিলম্বিত হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে। আমরা অন্যান্য দুর্যোগের সময় কৃষকদের যেমন তালিকা করি। এক্ষেত্রে সেভাবে তালিকা করা হবে।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম