চাঁদপুর: টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার সহস্রাধিক কৃষকের প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিন ও রাতে বরজ থেকে পানি নিস্কাশন করেও কিনারা করতে পারছেন না কৃষকরা। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পানের বোরজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হতাশায় দিন কাটছে তাদের। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পান চাষে জড়িত শত শত মালিক ও শ্রমিক সবাই বেকার হয়ে পড়বে। কৃষি বিভাগ বলছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে পানের বরেজের জলাবদ্ধতা চোখে পড়ে। সেচ প্রকল্প হওয়ার কারণে খুব দ্রুত সময়ে পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। বৃষ্টি আসলে পানি আবার বেড়ে যায়।
উপজেলার উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের পান চাষী আবু তাহের জানান, তিনি এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১০লাখ টাকা খরচ করে পানের বরজ করেছেন। গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় দুটি পানের ারজ। এখন শ্রমিক নিয়ে পানি নিস্কাশন করেও কোন লাভ হচ্ছে না। পানের বরজের ভবিষ্যৎ কি হবে তাও বলতে পারছি না।
একই গ্রামের হেনা আক্তার বলেন, গত ৬ মাস পূর্বে আড়াই লাখ টাকা ঋণ করে ১০ শতাংশের মধ্যে পানের বরজ করেছেন। পুরো পানের বরজ পানিতে তলিয়েগেছে। এখন কি করবেন তাও জানেন না।
পান চাষী সফিকুর রহমান বলেন, পান ও সুপারির আবাদ আমাদের উপজেলার ঐতিহ্য। আমার এক জমিতে পানের বরজ ছিলো। তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমি কি করবো জানিনা। উপজেলার প্রায় ৭শ’ কৃষকের এমন পরিস্থিতি হয়েছে।
উত্তর আলগী ইউনিয়নের পান চাষী শাহজাহান ও শহীদুল্লাহ ঠাহরদার বলেন, আমরা কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পানের বরজ করেছি। বৃষ্টিতে আমাদের বোরজ শেষ। পানের গোড়া পচেগেছে। পানি গেলেও আর পান গাছ বাঁচবে না। কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো বলতে পারছি না। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না।
এদিকে পানের বরজগুলোতে পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরী হওয়ার কারণে অপরিপক্ক পান বরজ থেকে কর্তন করা হচ্ছে। এসব পান বিক্রির জন্য সাজানো হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও দোকানের সামনে।
আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের পান ব্যপারী কাদের গাজী বলেন, পান নির্দিষ্ট সময়ে বড় হলে বিক্রি করেন চাষীরা। কিন্তু দুর্যোগ মুহুর্তে এখন কিছুই করার নেই। বরজ থেকে কর্তন করে কোন রকম বিক্রির জন্য বিড়া সাজানো হচ্ছে। আর না হয় জমিতে পচবে এসব পান। পান বড় হলে প্রতি বিড়া বিক্রি হতো ৮০ থেকে ১০০টাকা। সাইজে ছোট হওয়ায় এখন প্রতি বিড়া ৩০ থেকে ৫০টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার বলেন, উপজেলার ১১৯ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ আছে। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পান চাষের সাথে জড়িত আছে ১হাজার ৭২জন কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ততের তালিকা তৈরী এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাবো। কৃষকদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ সঠিক না। প্রনোদনা আসলে এসব কৃষকদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
ফম/এমএমএ/