সিত্রাংয়ে চাঁদপুর জেলায় ফসলের ক্ষতি ১৮৬ কোটি টাকা

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ২২ হাজার

ছবি: সংগ্রহীত।

চাঁদপুর: ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলার সর্বত্র কম বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । জেলায় ফসলের ক্ষতি হয় ব্যাপক। টাকার অংকে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৮৬ কোটি টাকা । জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা ২২ হাজার। উল্লেখ্য, গতবছর সাইক্লোন জাওয়াদে জেলায় ফসলের ক্ষতি হয় ৪৪২ কোটি টাকা।

এবার জেলা শহরে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের কন্ফারেন্স রুমের চাল, ১০টি সিলিং ফ্যান, চেয়ারটেবিল ইত্যাদি মুল্যবান আসবাবপত্রসহ উড়ে গিয়ে পাশের পুকুরে পড়ে যায়। সিত্রাং এর প্রভাবে, মেঘনার মোহনায় ডুবে যায় একটি পণ্যবাহী ট্রলার ।

মতলব উত্ত ,ও দক্ষিন, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর, হাজিগঞ্জ, কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলায় সর্বত্রই ঘর দুয়ার, গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুটি বিনষ্ট, শাকসবজি, ফলফলাদি ও গাছ, উঠতি আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জেলার ৮ উপজেলা অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জেলায় সিত্রাং এর তান্ডবে বিভিন্ন উঠতি রোপা আমন ফসল, ফল ফলাদিসহ বাগান ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে ১২৮৬.৮৬ হেক্টর। যা সর্ব সাকুল্যে টাকার অংকে দাঁড়ায় মোট ১৮৫.৮৬ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে শীতকালীন শাকসবজির , প্রায় মোট ৪৩.৫% । টাকার অংকে ক্ষতির পরিমান ১৫৮ কোটি টাকার কিছু বেশী। অণ্যান্য ফল ফলাদি ও ফল বাগানের ক্ষতি হয়েছে ৮২% ।টাকার অংকে দাঁড়ায় ২১কোটি ৩০ লাখ । রোপা আমন ক্ষতি হয় প্রায় ৩%। টাকার অংকে দাঁড়ায় ৬.১৮ কোটি। জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার ।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুরস্থ কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ- পরিচালক মোহাম্মদ জালালউদ্দীন। প্রসংগত, গত বছরও র্ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদে জেলায় ক্ষতি হয় ৪৪২ কোটি টাকার ফসল, শাকসবজি ও ফলফলাদি ।

ওদিকে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ জামাল সালেহ উদ্দিন  জানান, গত সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের চারতলায় কনফারেন্স রুমের টিনেরচাল, ১০টি বৈদ্যুতিক পাখা, টিউবলাইট ও সিলিং পাশ্ববর্তী পুকুরে উড়ে যায়। আর ঝড়ের সময় রুমে থাকা চেয়ার, টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয় । এতে ৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়।

তিনি আরও জানান, আমি বিষয়টি গনপূর্তসহ উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। পরবর্তীতে মজবুতভাবে কাজটি সম্পন্ন করা হবে বলে গনপূর্ত থেকে আশ্বস্থ করা হয়। সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নে আনন্দবাজার মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তীরে আছড়ে পড়া মেঘনার তীব্র সৃউচ্চ ঢেউয়ে ১১টি বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে আশপাশের প্রায় তিন শত পরিবার নদী ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।

খবর পেয়ে ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন তরপুরচন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাসান রাসেল গাজী। তিনি ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

এদিকে ভাংগনের খবরে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রেফাত জামিল । তিনি ইউপি চেয়ারম্যানসহ ঘুরে ঘুরে এবং নৌকাযোগ ইউনিয়নের ৭, ৮,ও ৯ নং ওয়ার্ডের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তারা বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা দেন। এ সময় ইউপি সদস্য মোঃ ইয়াসিন বেপারী, ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শামীম, ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তফা মাল ও ভাংগনে ক্ষতিগ্রস্থরা উপস্থিত ছিলেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রেফাত জামিল বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। আমাদের সার্ভেয়ার ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করছে, যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী জানান, গত ২৪ অক্টোবর সোমবার ভোরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে নদীর তীরবর্তী এলাকায় মেঘনার ঢেউ আঘাত করে। এতে ১১ টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীনসহ এবং আবাদি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়াও চলাচলের সরকারি রাস্তার গাইডওয়ালও ভেঙে পড়ে যায়। বসতঘর ভেঙে যাওয়া পরিবারের অনেকেই পার্শ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। মাথা গোজার একমাত্র বসতঘর হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে অসহায় পরিবারগুলো। অতিদ্রুত ভাংগন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, ভয়াবহতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তার আশঙ্কা করছেন।

জেলা বন র্কমকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, তাদের নিজস্ব প্রায় ৬০ টি আকাশমনি ও কড়ই গাছ র্ঘূিণঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। জেলায় কি পরিমান গাছ গাছালি সিত্রাং এ বিনষ্ট হয়েছে তা তার জানা নেই। কারন তার অফিসে ম্যানপাওয়ারের অভাব রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বিভিন্ন সুত্র জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় বিশেষ করে নদীপাড়ের উপজেলায়- হাইমচর, মতলব উত্তর ও চাঁদপুর সদরের অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুটি নষ্ট/ভেংগে গিয়ে বিদ্যুত বিভ্রাট হয়েছে- যা এখনো কোন কোন স্থানে মেরামত করা সম্ভব হয়নি বলে ভুক্তভোগিরা জানান।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম