সংস্কারে দর্শনার্থীদের ফেরানোর চেষ্টা মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে

চাঁদপুর : খুব কম সময়ের মধ্যে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠা চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। ২০২৪ সালে এই পর্যটন কেন্দ্রটি দুর্বৃত্তদের হামলা সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে দীর্ঘ এক বছর পর এটির কিছু সংস্কার কাজ করে আবারও দর্শনার্থীদের ফেরানোর চেষ্টা চলছে।

মেঘনার পাড় ঘেঁষে এক সময় দাঁড়িয়ে ছিল স্বপ্নের মোহনপুর পর্যটন লিমিটেড। শান্ত নদীর ঢেউ আর বাতাসে মিশে থাকা পাখির ডাক যেন প্রতিদিন নতুন করে আহ্বান জানাত পর্যটকদের। পরিবার, বন্ধুবান্ধব কিংবা প্রিয়জনকে নিয়ে মানুষ ছুটে আসতেন স্বল্প সময়ের প্রশান্তির খোঁজে।

স্থানীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ২০২০ সালে প্রায় ৬০ একর জমির ওপর এই পর্যটন কেন্দ্রটির যাত্রা শুরু হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই এটি হয়ে ওঠে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্র। এখানকার নদীভ্রমণ, থিম পার্ক, কটেজ, ‘দ্য সিপ ইন’ ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট সব মিলিয়ে মোহনপুর ছিল এক পূর্ণাঙ্গ পর্যটন অভয়ারণ্য। ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে লোকজন লঞ্চে মোহনপুর লঞ্চঘাটে চলে আসতেন খুব সহজে। সড়ক পথেও খুব কম সময়ে আসা যায়।

কিন্তু স্বপ্নের এই ঠিকানায় কালো ছায়া নামে ২০২৪ সালে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে একদল দুষ্কৃতিকারী হামলা চালায় কেন্দ্রটির ওপর। মুহূর্তেই ভেঙে যায় কাঠামো, ছিন্নভিন্ন হয় বিনোদনের প্রাণ। কোটি টাকার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে পড়ে স্তূপে স্তূপে। আতঙ্কে পর্যটকরা ফিরতে শুরু করে, নিস্তব্ধ হয়ে মুখোরিত এলাকা।

সব হারিয়ে থেমে থাকেনি মোহনপুরের উদ্যোক্তারা। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকেই শুরু হয় নতুন করে দাঁড়ানোর লড়াই। গেল বছর ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর যখন দেশে পরিবর্তন আসে, তখনই নতুন করে সংস্কারের কাজ হাতে নেয় কর্তৃপক্ষ। ধীরে ধীরে পুন:র্গঠনের মাধ্যমে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করে কেন্দ্রটি।

এখন মোহনপুরে যুক্ত হয়েছে আরও কিছু নতুন আকর্ষণ স্পিডবোট ও নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য থিম পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা, পাশাপাশি ফুলের বাগান, সৌদি খেজুর গাছের বাগান এবং নদীপাড়ে পাথরের রাস্তা ধরে হাঁটার সৌন্দর্য।

মোহনপুরের এলাকার সোয়াইবুল ইসলাম বলেন, একটা সময় সারাদেশ থেকে মানুষ এখানে ঘুরতে আসত। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতায় সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। এখন আবার সংস্কার চলছে। চালু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আগের মতো কোলাহল আর নেই।

পর্যটক আফসানা আক্তার, যিনি তৃতীয়বার এসেছেন মোহনপুরে। তিনি বলেন, আগে পরিবার নিয়ে এখানে দারুণ সময় কেটেছে। এখন অনেক জায়গা ভাংচুর করা, তবে শুনেছি আবার চালু হয়েছে এই খবর শুনেই চলে এলাম। পুরনো দিনের মতো না হলেও, এখানে এখনো নদীর সেই হিমেল বাতাস আছে।

মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. মিজানুর রহমান বলেন, এটা আমাদের একদল স্বপ্নবাজ মানুষের পরিশ্রমের ফসল। শুরুর পর থেকেই চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের হামলায় আমরা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ি। এখন আর সেই কথা বলে লাভ নেই। যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। ক্ষতি নিয়ে এখন আর কোন কথা বলতে চাই না। এখন নতুন করে শুরু করেছি। ধীরে ধীরে সব ফিরিয়ে আনব।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ৮-১০ জন কর্মচারী পুরো পর্যটন কেন্দ্রটির দেখাশোনা করছে। সংস্কারের জন্য বড় পরিসরে অর্থের প্রয়োজন। বিনিয়োগের জন্য কেউ আসলে আবারও সেই পুরনো রূপে ফিরিয়ে আনতে পারবো।
ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম