
চাঁদপুর: প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আসলেই, ৫২’র ভাষা আন্দোলনে বুলেটে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা ভাষা সৈনিক সালামকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপে কাঁদতে থাকেন চাঁদপুরের ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএম কলিম উল্যাহ (১০৬)। এমনটাই তিনি জানান আধো আধো কন্ঠে। তাঁর বড় ছেলে বি এম আহসানও একই কথা জানান।
নির্ভীক ও বীর মুক্তিযোদ্বা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা শহরের মকিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা এবং তৎকালীন কমিউনিষ্ট পার্টির ছাত্রনেতা ও ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এল. এল. বি বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি ঢাকায় বসুন্ধরার ভাড়া বাসায় অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার স্ত্রী মারা গেছেন গত জুলাইতে। এখন একজন কেয়ারগিভার তার দেখাশুনা করেন। তার মেয়েও আছে।
ছেলে আহসান জানান, ‘বাবার সুচিকিৎসার জন্য ঢাকাতেই বেশী থাকেন।’
ভাষা শহীদ দিবসের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিএম কলিম উল্যাহ, “১৪৪ ধারা ভংগ করে ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে যোগ দেই আমি ও জগন্নাথ কলেজেরে ছাত্র আ: রব (পরে প্রাক্তন আ: লীগ এমপি)। এসময় পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত সালামের রক্তমাখা শার্টসহ তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসে ভর্তি করাই। কিন্তু তাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি আসলেই সেই স্মৃতি আমাকে বার বার ব্যাথিত করতে থাকে। কেননা আমিই সেদিন বুলেটবিদ্ধ সালামকে রাজপথ থেকে বাঁচানোর জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত সালামকে বাঁচাতে পারিনি। সবাইকে সেদিন সালাম শোক সাগরে ভাসিয়ে হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৫২সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা শহরে অবস্থিত আহম্মদিয়া মুসলিম হোস্টেলে (বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ হোস্টেল) গোপনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় আমিই নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। ওই সভায় আমি সবাইকে সালামের রক্তমাখা জামা দেখালে সবাই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার অঙ্গীকার করেন। ওই গোপন সভায় ৫২’র ভাষা আন্দোলনকে চাঁদপুরে গতিশীল করার আলোচনা হয়।
তিনি বলেন, সেই গোপন সভায় উপস্থিত ছিলেন পুরানবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা ও আ লীগ কর্মী রফিউদ্দীন (সোনা) আখন্দ, জাতীয় নেতা মিজান চৌধুরির বড় ভাই ডাঃ মুজিবুর রহমান চৌধুরী, আব্দুর রব (প্রাক্তন আওয়ামী লীগ এমপি, হাজিগঞ্জ ), ন্যাপ নেতা শেখ মতিউর রহমান, কলকাতায় ইসলামীয়া কলেজে অধ্যয়নরত শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধু আ ফ ম ফজলুল হক, শেখ মো: মোজাফ্ফর, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল করিম পাটোয়ারি, পুরানবাজারের আবুল কাশেম চৌধুরি, আব্দুস সাত্তার, (বলাখাল, হাজিগঞ্জ ), হোমিও ডাঃ এবি খান, সুজাত আলী মুনসী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এঁরা সবাই বিভিন্ন সময়ে না ফেরার দেশে চলে যান। বাকি আছেন শুধু বি এম কলিমুল্লাহ। তিনি কথার ফাঁকে একটু দুষ্টামী করে বললেন ‘বয়সতো বেশী না, মাত্র ১০৬। হাঁটতে পারি না, দাঁড়াতেও পারি না। হাঁটুতে ব্যথা আর ব্যথা। বাথরুমে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। হুইল চেয়ারেই আরাম পাই।’ ‘আমার সাথে ভাষা মতিন প্রায়ই দেখা করতো। সেওতো চলে গেছে পরকালে। এখন আমিই শুধু বাকি।’ আমার ওয়াইফ ও চলে গেছেন গত জুলাইতে। আমার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
লিখেছেন: দেলোয়ার আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, চাঁদপুর।