শ্রী শ্রী বাসন্তী দুর্গা পূজা / বাসন্তী পুজা

এস ডি সুব্রত।। ইতিহাস মতে  চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের বাসন্তী পুজাই প্রকৃত দুর্গাপুজা। যদিও একালে আশ্বিন শুক্লপক্ষের দুর্গাপুজাই অন্যতম প্রধান পুজর স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে। মহাপুরুষরা বিপদকালে অশুভ শক্তির বিনাশের উদ্দেশ্যে আদ্যাশক্তির আরাধনা করছেন। রামায়ণে শ্রী রামচন্দ্র শরৎ কালে অশুভ শক্তি নাশ করতে দেবীর আরাধনা করেন। পুরাণ অনুযায়ী চিত্রবংশীয় রাজা সুরথ বসন্ত কালে দেবীর আরাধনা করেন। কালের পার্থক্য হলেও আরাধনা দেবী দুর্গারই। কালের প্রভেদের কারণে পূজা রীতির সামান্য পার্থক্য হলেও উভয় পূজার রীতি প্রায় একই। শরৎকালে শারদীয়া দুর্গাপূজা, বসন্ত কালে দেবী দুর্গার পূজা শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা। ২০২২ সালে  ৮ এপ্রিল, বাংলার ২৪ চৈত্র শুক্রবার শ্রী শ্রী বাসন্তী দুর্গা পূজা। শরৎকালে শারদীয়া দুর্গা পূজা, আর বসন্ত কালে দেবীর আরাধনা বাসন্তী পূজা হিসেবে প্রসিদ্ধ। উভয় পূজার রীতিও প্রায় একই।
চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের বাসন্তী পুজোই প্রকৃত দুর্গা পুজা। যদিও একালে আশ্বিন শুক্লপক্ষের বা শরতের দুর্গা পুজাই অন্যতম প্রধান পুজার স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু তবুও বাঙালি আদি দুর্গাপুজোকে কোনওদিনই পুরোপুরি ভুলে যায়নি। তাই এখনও বাংলার অনেক জায়গায় দুর্গা পুজোর আদিরূপ বাসন্তী পুজোর আয়োজন করা হয় । অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য সব কালেই মানুষ আদ্যাশক্তির আরাধনা করে। পুরাণ অনুযায়ী, সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে রাজ্য-হারানো রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে মূর্তি গড়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। যা পরে বাসন্তী পুজা নামে প্রসিদ্ধ হয়। এবং সেটাই চলতে থাকে। আবার  রামচন্দ্র সীতা-উদ্ধার কালে অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য শরৎকালেই দুর্গার আরাধনা করলেন। এটি অকালবোধন হিসাবে বিখ্যাত হল। আর তার পর থেকে এই পুজাই চলতে থাকল।বাল্মীকি অকালবোধনের ঘটনাটি তাঁর রচনায় উল্লেখ করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু বাঙালি কবি কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর বঙ্গ-রামায়ণে এই অংশের এমন আবেগমথিত বর্ণনা দেন যে, তা বরাবরের জন্য বাঙালিচিত্তে গেঁথে যায়। শরৎকালের দুর্গাপুজা এইভাবেই ধীরে ধীরে তার নিজস্ব সামাজিক সাংস্কৃতিকভাবে মানুষের মনে  চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে ‌।তারপরও এখনও দুর্গাপুজার আদিরূপ বাসন্তী পুজার আয়োজন করে। যদিও এই পুজা কোনও দিনই বারোয়ারির আকার নেয়নি। যে সময়ে বড় করে বাসন্তী পুজা হত তখনও তা আয়োজিত হত মূলত জমিদার নায়েব গোমস্তা গোষ্ঠীর লোকজনদের দ্বারাই। এই পুজা কোন দিনই সাধারণের পুজা হিসেবে  রুপ পায়নি । এই পুজা পরিবার-তন্ত্রেই আটকে রয়েছে , বারোয়ারি হয়নি।
কথিত আছে বাংলায় এই দুর্গা পুজার প্রচলন করেন রাজা সুরথ। মেধা মুনির থেকে তিনি এবং বৈশ্য সমাধি মেধাসাশ্রমে দীক্ষা নিয়ে গোটা বিশ্বে দুর্গা পুজোর  প্রবর্তন করেন। রাজা সুরথ চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে প্রথম দুর্গা পুজো শুরু করেন বলে এই পূজা বাসন্তী পুজো নামে পরিচিত হয়। দেবী দুর্গার প্রথম পুজোরী হিসাবে চন্ডীতে রাজা সুরথের উল্লেখ রয়েছে। ক্ষত্রিয় বংশের রাজা সুরথের সুশাসক ও যোদ্ধা হিসেবে বেশ সুখ্যাতি ছিল। কোন যুদ্ধে তিনি কখনো হারেননি। কিন্তু প্রতিবেশী রাজা যবন একদিন তাঁকে আক্রমণ করে এবং সুরথ পরাজিত হন। আর এই সুযোগ নিয়ে তাঁর সভাসদরা তাঁর  ধনসম্পত্তি লুট করে। কাছের মানুষদের এরকম আচরনে স্তম্ভিত হয়ে যান রাজা। সর্বহারা হয়ে বনে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধাসাশ্রমে যান।
ঋষি তাঁকে সেখানেই  থাকতে বলেন, কিন্তু সেখানে থেকেও রাজা সবসময় অস্থির থাকতেন। সবসময় রাজ্য, প্রজাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন।  এরকমই একদিন তাঁর সমাধির সাথে দেখা হয়ে যায়। তিনি জানতে পারেন সমাধিকেও তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে সম্পত্তির দখল নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তিনি বৌ-ছেলের ভালো মন্দ এখনো ভেবে চলেছেন। তাঁরা দুজনেই তখন ভাবলেন যারা তাদের সর্বহারা করেছে তাদের শুভচিন্তাই আজও তারা করে চলেছেন। তারা ঋষিকে একথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন সবই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনী বর্ণনা করেন। ঋষির উপদেশেই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করেন।
পরবর্তীকালে মহামায়ার উদ্দেশ্যেই বসন্ত কালের শুক্ল পক্ষে রাজা পুজা শুরু করেন।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।
০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ ।
sdsubrata2022@gmail.com

ফোকাস মোহনা.কম