চাঁদপুর খাদ্য গুদামের ২০টন চাল পাচারকালে জব্দ, তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি: সংগ্রহীত।

চাঁদপুর: চাঁদপুর জেলা খাদ্য গুদামের ২০টন সরকারি সীলমোহরযুক্ত বস্তায় ভর্তি চাল চট্রগ্রামে পাচারকালে হাজীগঞ্জে পুলিশ চেক পোস্টে আটক করা হয়। পরে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো: কামরুল হাসান এর নির্দেশে হাজিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন তাৎক্ষনিক বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে এ পাচার হওয়া চাল চাঁদপুর সদর ও হাইমচরের হওয়ায় কাভার্ড ভ্যান ট্রাকটি (যার নং ঢাকা মেট্রো ট ১১-৫৫১৬ মুক্তিযোদ্ধা পরিবহন লিখা) চাঁদপুরে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করে।

শনিবার (১৮মার্চ) সরকারি ছুটির দিন ঘটনাটি ঘটলেও রোববার (১৯ মার্চ) ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। ঘটনার রাতেই চাল বহনকারী কাভার্ডভ্যান চাঁদপুরে এনে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করে তার হেফাজতে রাখা হয় বলে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে।

রোববার (১৯ মার্চ) জেলা প্রশাসনের উন্নয়ন সভায় বিভিন্ন বক্তা অভিযোগ আকারে বিষয়টি উপস্থাপন করলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাৎক্ষনিক হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসনের উন্নয়ন সভায় এ বিষয়টি নিয়ে জোড়ালো প্রতিবাদ জানান এবং বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল ও দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাব সহ-সভাপতি মো: সোহেল রুশদী।

এই ধরণের পাচারের ঘটনা গোপনে ঘটলেও এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছে। যার ফলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে এ চাল কি জেলেদের বিজিএফ এর চাল, নাকি কাবিখা বা টিআরএর চাল। বর্তমানে চালবহনকারী কাভার্ড ভ্যানটি জেলা খাদ্য কর্মকর্তার হেফাজতে চাঁদপুর সিএসডি গোডাউনে রক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান জানান।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, চাঁদপুর খাদ্য গুদাম থেকে ২০ টন চাল পাচারের সময় হাজীগঞ্জে গাড়ীসহ চালককে আটক করে হাজিগঞ্জ থানার পুলিশ। চাঁদপুর খাদ্য গুদাম থেকে অবৈধভাবে দিনের পর দিন এভাবে সরকারি চাল পাচার হচ্ছে বিভিন্ন জেলায় এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে ঢাকা মেট্রো ট ১১-৫৫১৬ মুক্তিযোদ্ধা পরিবহন নাম ব্যবহারকারী কাভার্ডভ্যান ২০টন চাল বোঝাই করে চট্টগ্রামে পাচার হওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে হাজীগঞ্জ চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশ চেক পোস্ট বসিয়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ গাড়িটি তল্লাশি করে। এ সময় গাড়ির ভিতরে সিএসডি গোডাউনের খাদ্য অধিদপ্তরের লোগো ব্যবহৃত বস্তায় সীলমোহরযুক্ত ভিতরে চাল দেখতে পায়।

গাড়ীর চালক আব্দুর সাত্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি পুলিশকে জানান, চাঁদপুর সিএসডি গোডাউনের সরদার শিপন চৌধুরী, লেবার সরদার হজু, হক ও শফিক তারা চালগুলো গোডাউনের ভিতর থেকে গাড়িতে বোঝাই করে দিয়েছে। গাড়িটি খাদ্য গোডাউন থেকে বের হওয়ার সময় কোন স্কেল অর্থাৎ পরিমাপ করা হয়নি। এই ২০ টন চাল তারা দাউদকান্দির একজন মেম্বার এর কাছে বিক্রি করেন। সেই মেম্বারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ফারুক ট্রেডার্সে মালগুলি বিক্রি করে দেয়। লেবার সরদারের নির্দেশে দালাল জামালের মাধ্যমে কাভার্ডভ্যানটি ভাড়া নেয়া হয়।

তিনি আরো জানান, প্রায় সময় চাঁদপুর জেলা খাদ্য গুদাম থেকে এভাবে চাল বোঝাই করে ট্রাক চট্টগ্রামে বিক্রির উদেশে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে সরকারি গোডাউন থেকে চাল পাচারের ঘটনা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হন। এ সময় চাল ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য চাঁদপুরের রাজনৈতিক দলের নাম পদবী ব্যবহারকারী কয়েকজন ব্যক্তি ব্যাপক তদবির করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সেই ট্রাকসহ চালগুলো চাঁদপুরে নিয়ে আসা হয়।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, শনিবার ছুটির দিন জেলা খাদ্য গুদাম থেকে মাল বের হয়েছে তা জানা নেই। এ বিষয়টি নিয়ে রোববার (১৯মার্চ) বিকেলে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ঘটনাটি তদন্ত করে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কাভার্ডভ্যানের পিছনের অংশ।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান হাজিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম মুঠো ফোনে জানান, শনিবার ঘটনার সময় আমি একটি প্রোগ্রামে ছিলাম। গাড়ীতে ২০টন চাল আছে জানতে পেরে গাড়ীটিকে জব্দ করে রাখা হয়। প্রথমে গাড়ীর চালক কোন প্রকার কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি। পরে চাঁদপুর থেকে একব্যাক্তি এসে কাগজ পত্র দেখানোর পর দেখতে পেলাম এ চাল চাঁদপুর সদর ও হাইমচর এলাকার। তখন গাড়িটি চাঁদপুরে নিয়ে যেতে বলি।

হাজিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জোবায়ের সৈয়দ জানান, হাজীগঞ্জ চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশ চেক পোস্টে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ গাড়ীটি তল্লাশিকালে চালের কাগজপত্র চালক দেখাতে না পারায় বিষয়টি হাজীগঞ্জ ইউএনও এর নিকট বিষয়টির দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে তিনি কি ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন তা আমি জানিনা। তবে কাউকে আটক বা মালামাল জব্দ করেনি পুলিশ।
ফম/এমএমএ/এস.আ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম