চাঁদপুরে ৫ কোটি টাকা নিয়ে নিখোঁজ পূবালী ব্যাংক ব্যবস্থাপক

চাঁদপুর : পূবালী ব্যাংক পিএলসি চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার শাখার ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী অতিরিক্ত মুনাফা দিবে বলে গ্রাহকদের ৫ কোটি টাকা নিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। এই ঘটনায় ব্যাংকের বর্তমান দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক চাঁদপুর সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। আজকে পর্যন্ত ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৬ টাকা ওই  ব্যাবস্থাপক  নিয়েগেছেন বলে তিন গ্রাহক জানিয়েছেন।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে বর্তমান দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির, মডেল থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা (পুলিশ পরিদর্শক) নজরুল ইসলাম ও গ্রাহকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে।

নিখোঁজ ব্যাংক ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী (৪০) জেলার কচুয়া উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি স্বপরিবারে কুমিল্লায় থাকতেন এবং সেখান থেকে চাঁদপুরে এসে দায়িত্ব পালন করতেন।

ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর হোসেন লিটন জানান, ব্যাংকের ব্যবস্থপক শ্রীকান্ত নন্দী গত ১৪ জানুয়ারি এই শাখায় জয়েন্ট করেন। এরপর থেকেই তার সাথে পরিচয়। ঈদের পূর্বে সে আমার কাছ থেকে টাকা ধার চায়। কয়েকদিনের মধ্যে দিয়ে দিবে বলে। আমি সরল বিশ^াসে তাকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দেই। কিন্তু সে টাকা ফেরৎ না দিয়ে ব্যাংক থেকে চলে যায়। কিভাবে কি করল তা বুঝে উঠতে পারিনি। এই ঘটনায় আমি ১৩ এপ্রিল চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি জিডি করেছি।

আরেক গ্রাহক কচুয়া উপজেলার আশ্রাফুর এলাকার দলিল লেখক মো. মারুফ। অধিক মুনাফা দিবে বলে তার কাছ থেকে ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী নেন ৭৫ লাখ টাকা। মারুফের আত্মীয় একই ব্যাংকের গ্রাহক নাছির উদ্দিন খান বলেন, সে অধিক মুনাফা দিবে বলে আমার আত্মীয় মারুফের কাছ থেকে ৭৫ লাখ টাকা নেয়। টাকা না দেয়াতে ঈদের পূর্বে তার সাথে দুই বার বৈঠকে বসা হয়েছে। ঈদের পরে টাকা ফেরৎ দিবে বললেও এখন তিনি নিখোঁজ।

ওকে এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কাউছার হোসেনের পক্ষে জাহিদ হাসান নিরু বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দীর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। শ্রীকান্ত নন্দী এর আগে কুমিল্লার দাউদকান্দি ও হাজীগঞ্জ পূবালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন। যে কারণে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বড় ধরণের লেনদেন হওয়ায় সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। যে কারণে ঈদের আগে তাদের প্রতিষ্ঠানের কাজে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬২ টাকার একটি চেক টাকা উত্তোলন করে তাদের একাউন্টে জমা দিতে বলেন। কিন্তু শাখা ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী ওই টাকা উত্তোলন করে ওকে এন্টারপ্রাইজের একাউন্টে জমা না দিয়ে নিজে নিয়ে নেন।

জাহিদ হাসান নিরু আরও বলেন ঈদের পূর্বে ৪ এপ্রিলের পরে টাকা জমার বিষয়ে তার সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার মোবাইলে ফোন দেন কিন্তু ফোন বন্ধ পান। এরপর ৯ এপ্রিল ব্যাংকে এসে জানতে পারেন তিনি ব্যাংক থেকে নিখোঁজ। যে কারণে ১৫ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

আইনজীবী ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ এর সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, পূবালী ব্যাংক নতুন বাজার শাখার ব্যবস্থাপক গ্রাহকদের টাকা নিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে আমার খুবই নিকটাত্মীয় আকবর হোসেন লিটন রয়েছেন। তার ১ কোটি ৭৬লাখ টাকা নিয়ে চলেগেছেন ব্যাংক ব্যাপস্থাপক। কোন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক যদি এভাবে টাকা নিয়ে উধাও হন, তাহলে মানুষ কিভাবে ব্যাংকের ওপর আস্থা রাখবে। কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

এদিকে শ্রীকান্ত নন্দী গত ৪ এপ্রিল বিকাল ৩টার পরে ব্যাংক থেকে নিখোঁজ রয়েছে মর্মে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় জিডি করেছেন বর্তমান দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির। তিনি ওই জিডিতে উল্লেখ করেন শ্রীকান্ত নন্দীর ব্যাক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

দায়িত্বরত শাখা ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির বলেন, ঈদের পূর্বে শেষ কর্মদিবসে আমাকে এই শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আজকেই এই শাখায় যোগদান করেছি। শ্রীকান্ত নন্দীর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে অনেক খোঁজখুঁজি করে না পেয়ে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি অবগত করা হয়েছে এবং থানায় জিডি করা হয়েছে। ঘটনটি তদন্ত চলছে। আমাদের অভ্যন্তরীন গ্রাহকদের লেনদেনে কোন সমস্যা নেই।

চাঁদপুর নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদের পূর্বে ৯ এপ্রিল পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. হুমায়ুন কবির ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী নিখোঁজ রয়েছেন মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। সে ডায়েরীর আলোকে আমাকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। লেনদেনের বিষয়ে কোন অভিযোগ থাকলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম