দেড় বছরেই জরাজীর্ণ চাঁদপুর টেনিস কমপ্লেক্স

ইট-ভাঙা কাচে ভরপুর মাঠ

চাঁদপুর: চাঁদপুর শহরের ক্রীড়াঙ্গনে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে এমন আশায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে শুরু হয় “চাঁদপুর টেনিস কমপ্লেক্স” নির্মাণের কাজ। প্রায় এক কোটি চার লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই আধুনিক কমপ্লেক্স উদ্বোধনের আগেই এখন পরিণত হয়েছে জরাজীর্ণ এক স্থাপনায়।

মাত্র দেড় বছর আগে নির্মিত হলেও বর্তমানে কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে পড়ে আছে ইট, কাঠ ও ময়লার স্তূপ। যে মাঠে হওয়ার কথা ছিল নিয়মিত অনুশীলন ও টেনিস প্রতিযোগিতা, সেখানে আজ ধুলোবালিতে ঢেকে আছে খেলার স্থান। বাইরের দেয়ালে রঙ উঠে গেছে, আর জানালার কাঁচ ভেঙে বাতাসে ঝুলছে ফ্রেমের টুকরো। অবহেলার কারণে কোটি টাকার সরকারি প্রকল্প এভাবে ধ্বংসের পথে চলে যাওয়া চাঁদপুরের ক্রীড়া উন্নয়নে বড় এক ব্যর্থতা। দ্রুত সংস্কার ও পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন ক্রীড়া অনুরাগীরা।

স্থানীয় ক্রীড়া অনুরাগীরা জানান, কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের পর একটিও টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়নি। পরিকল্পনার ঘাটতি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এত দ্রুত স্থাপনাটি অকেজো হয়ে পড়েছে বলে তাদের অভিযোগ।

চাঁদপুরের ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, এমন একটি সম্ভাবনাময় স্থাপনা উদ্বোধনের আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এটা খুবই দুঃখজনক। যদি নিয়মিত ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ হতো, তাহলে এটি জেলার তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য বড় অনুপ্রেরণা হতে পারত।

চাঁদপুর ক্রীড়া সংস্থা জানায়, স্থাপনাটি এখন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে সংস্কারের জন্য আবেদন করা হয়েছে, তবে কবে নাগাদ সংস্কার কাজ শুরু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। জেলা প্রশাসক দ্রুত এটি চালু করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া সংগঠক অ্যাড. ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম বলেন, চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে খালি জায়গায় টেনিস কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো এই কমপ্লেক্স ব্যবহার করতেন। তাদের পছন্দের ব্যক্তিরাও এখানে আসা-যাওয়া করতেন, কিন্তু কোনো ধরনের খেলাধুলা বা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে চাঁদপুরের উদীয়মান খেলোয়াড়দের উন্নয়নের লক্ষ্যে এই টেনিস কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে চাঁদপুরে টেনিস অনুশীলন বা খেলার জন্য উপযুক্ত মাঠের অভাব রয়েছে। যদি এই কমপ্লেক্সটি খেলোয়াড়দের জন্য উন্মুক্ত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এখান থেকে ভবিষ্যতে অনেক উদীয়মান ও প্রতিশ্রুতিশীল টেনিস খেলোয়াড় তৈরি হবে।

চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমির কোচ পলাশ কুমার সোম বলেন, টেনিস কমপ্লেক্সেটি আমাদের সামনে নির্মাণ হতে দেখলাম কিন্তু কখনো এখানে খেলা বা টুর্নামেন্ট হতে দেখিনি। এটির চারপাশে ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে। ভিতরে ইট, কাচের টুকরোসহ নির্মাণ সামগ্রী পড়ে আছে। এখন আর এ মাঠটি খেলার উপযোগী নয়। মাঠটি সংস্কার করে দ্রুত খেলার উপযোগী করা উচিত।

চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য কে এম সালাউদ্দিন বলেন, চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে টেনিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে শুরু হয়। তবে গত ২৪ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন।

কাজের মান নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। স্পষ্টভাবে বলতে হয়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করতে গিয়ে নিম্নমানের কাজ করেছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, টেনিস কমপ্লেক্সের পাশেই ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ হচ্ছে। সেটিও চালু হলে সেখানে  খেলাধুলার পরিবেশ হবে। আর টেনিস কমপ্লেক্সটি পুনরায় সংস্থার করার জন্য ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। হয়তো চলমান কাজগুলো এই বছরেই শেষ করা যাবে না। পর্যায়ভাবে কাজ শেষ হবে।

ফম/এমএমএ/

ফোকাস মোহনা.কম