
চাঁদপুর : চাঁদপুরে ১৩ বছরে অন্ত:সত্ত্বা শিশুর পেটে অবৈধ আরেক ৭ মাসের শিশু জন্ম গ্রহন করেছে। জোর পূর্বক ও বিভিন্ন ঔষধ ব্যবহার করে অপগর্ভপাত ঘটানোর কারণে জন্মের পর শিশুটি পরিপূর্ন রুপলাভ নাকরায় মৃত্যুবরন করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তৃতীয় তালায় শিশু ওয়ার্ডে।
প্রথমে গত শনিবার দি ইউনাইটেড হাসপতালের তৃতীয় তালায় ৩০৩ নং কেবিনে শিশুকে ভর্তি করে হাসপাতালের কথিত চিকিৎসক সুলতানা আক্তার সেতু। তার সাথে চুক্তির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় অপগর্ভপাত করানোর জন্য শহরের পীর মহাসিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়া শিশু আক্তারী বেগম (১৩-ছদ্রনাম) কে সেখানে জোরপূর্বক অপগর্ভপাতের জন্য বিভিন্ন ওষধ খাওয়ানো ও চারটি ইনজেকশান পুশ করা হয় বলে শিশু রোগী তার অভিভাবক মা পারুল বেগম ও বড় বোন স্বপ্না বেগম পুলিশের কাছে অভিযোগ করে জানান।
সেখানে শিশু রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দি ইউনাইটেড হাসপতাল থেকে জোর পূর্বক ১০ হাজার টাকা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। পরে রোববার বিকেলে শিশুকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে গাইনি বিভাগে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক আনিছুর রহমানের তত্ত্বাবধানে থেকে রোববার দিনগত রাত ১০টা ২০মিনিটে শিশু আক্তারী বেগম ৯শ’ গ্রাম ওজনের একটি ছেলে শিশুর জন্ম দেয়।
শিশুটিকে চিকিৎসক ঢাকা শিশু হাসপাতালে রেফাড করে। সেখানে শিশুটি সোমবার দুপুরে মৃত্যুবরন করেন বলে নিশ্চিত করেন চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আনিছুর রহমান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চাঁদপুরে দীর্ঘদিন যাবত দি ইউনাইটেট হাসপাতালে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কথিত চিকিৎসক সুলতানা আক্তার সেতু কর্তৃক চুক্তির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় অপগর্ভপাত করাচ্ছ। এখানে এরপূর্বে কয়েকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটে। যার ফলে এ প্রতিষ্ঠানটি এখন সকলের কাছে অপগর্ভপাতের নির্ভরযোগ্য স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে লোকজন। যার প্রমাণ মিলে এই ঘটনাটি।
এই ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতালের কথিত চিকিসৎসক সেবিকা সেতুর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে শিশুর মা’পারুল বেগম জানান।
শনিবার চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে নির্দেশ দিয়ে উপ-পরিদর্শক মো: রফিকুল ইসলামকে ইউনাইটেড হাসপাতালের পাঠান। তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করে হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও চিকিৎসকের ভুয়া ব্যবস্থাপত্র জব্দ করেন। শিশুটি পুলিশের নির্দেশে ও সহায়তায় দি ইউনাইটেড হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক চিকিৎসা না করে ৭মাসের অন্ত:সত্ত্বা শিশুটিকে হাসপাতার থেকে বে করে দেয় বলে থানার উপ-পরিদর্শক মো: রফিকুল ইসলাম জানান।
দি ইউনাইটেট হাসপাতালের রেজিষ্টার দেখে ও ভিকটিমের জবান বন্দি থেকে চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো: রফিকুল ইসলাম থেকে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুদী এলাকার মৃত মো: হাসিম বেপারীর ও পারুল বেগমের মেয়ে ৭ম শ্রেনীর শিশু আক্তারী বেগম (১৩-ছদ্রনাম) প্রেমিকের সাথে অবৈধ ভাবে মেলামেশার ফসল ৭মাসের অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়ে।
এসময় অন্তঃসত্ত্বা শিশু পুলিশের কাছে সবকিছু স্বীকার করেন ও তার সর্বনাশ যে করেছে তার উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী প্রতিবেদককে জানান, মোবাইল ফোনে ফেসবুকের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি এলাকার মো: ইমন হোসেন (২৫) নামে এক যুবকের সাথে পরিচয় হয়। বেশ কিছুদিন তার সাথে মোবাইল ফোনে ও ইমোতে যোগাযোগ হলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে ইমন চাঁদপুরে এসে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শিশুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় তার সাথে অবৈধ মেলামেশায় সে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ও গর্ভবতী হয়ে পড়ে।
ইউনাইটেড হাসপাতালের সেবিকা ও কথিত চিকিৎসক সুলতানা আক্তার সেতু জানান, গাইনি ডাক্তার মারিয়া হোসাইন অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীকে দেখে ঔষধ দিয়েছেন। পরবর্তীতে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তার বাচ্চা প্রসব করানোর জন্য তাকে ঔষধ সেবন করা হয়েছে ও ইনজেকশান পুশ করা হয়েছে। এই ঘটনাটি বাড়াবাড়ি না করে সমঝোতা করার অনুরোধ জানান তিনি।
চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক হলে ইমন দেখা করতে এসে মেয়ের সাথে অবৈধ মেলামেশা করেছে বলে জানিয়েছেন ভিকটিম শিশু। তবে হাসপাতালে যেহেতু চিকিৎসা নিতে এসেছে এখানে ডাক্তার তাকে দেখে শিশু বাচ্চা প্রসব করাবে। পরবর্তীতে এর সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, আমি বিষয়টি জানতে পেরে আমার থানার অফিসার ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। থানায় মামলা হলে ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ফম/এমএমএ/