
চাঁদপুর: ব্যক্তিগত ইচ্ছে পূরণের জায়গা থেকে অনেক গল্পের শুরু হয়। আর সেই গল্প এখন সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে। এসএসসি পাশের ২৬ বছর পর ৪৮ বছর বয়সে উচ্চমাধ্যমকি সার্টিফিকেট পরীক্ষা ( এইচএসসি) পাশ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন চাঁদপুর শহরের ১৩নং ওয়ার্ড খালিশাঢুলী এলাকার মোঃ শাহালম বেপারী।
এ বয়সে এইচএসসি পাশ করায় এলাকায় তাকে নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে মানুষের মাঝে। তার এ কৃতিত্বে খুশি পরিবার, আত্মীয় স্বজন, সহকর্মী ও এলাকাবাসী।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে ঢাকার আলহাজ্ব মুকবুল হোসাইন কলেজ এবং ঢাকা বোর্ডের সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন শাহালম বেপারী। শিক্ষার যে কোনো বয়স নেই, তা সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে এসব তথ্য জানা যায়।
চাঁদপুর শহরের ১৩নং ওয়ার্ড খালিশাঢুলী এলাকার আব্দুল করিম বেপারীর ছেলে মোঃ শাহালম বেপারী ১৯৯৬ সালে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি কাজের খোঁজে ঢাকায় চলে যান। রোজগার করে বাড়িতে টাকা পাঠালে পরিবারের সদস্যরা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়েন। নিজের কর্মজীবনের এক পর্যায়ে শাহালম বেপারী বুঝতে পারেন শিক্ষাই আসল। নিজের ইচ্ছাশক্তি আর সহকর্মীদের উৎসাহে ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে আলহাজ্ব মুকবুল হোসাইন কলেজ এবং ঢাকার সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে। পড়াশোনার এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের এইচএসসি ফলাফলে তিনি উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হন। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ২.৭৫ গ্রেড ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩.০০ পান।
এদিকে একই শিক্ষাবর্ষে চাঁদপুরের বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে নিজ পুত্রবধূ মিস সালমা আক্তারও এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ৪৮ বছর বয়সী শাহালম বেপারী দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক। ছেলে প্রবাসী ও মেয়ে ঢাকার একটি কলেজে একাদশ শ্রেনীতে অধ্যয়নরত। তিনি ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটির একজন সিনিয়র অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত।
এ বিষয়ে মোঃ শাহালম বেপারী বিকেলে বলেন, আমি ১৯৯৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে কর্মজীবনে জড়িয়ে পড়ি। মানুষের জীবনে যে শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ তা আমি বুঝতে পেরেছি। তাই আমার ইচ্ছাশক্তি আর সহকর্মীদের উৎসাহে এসএসসি পাশের দীর্ঘ ২৪ বছর পর কলেজে ভর্তি হয়ে ২৬ বছর পর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। একই শিক্ষাবর্ষে আমার পুত্রবধূও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেন। এরজন্য আমার পরিবার ও সহকর্মীদের কৃতিত্ব মনে করি। এ অর্জনটা আমার পেশাগত জীবনে অনেক কাজে লাগবে আশাবাদী। আমার এই অর্জনের জন্য আমি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
ফম/এমএমএ/