হেমন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে সুবাস ছড়ানো ছাতিম ফুল

ছবি: লেখক।
।। ফয়েজ আহমেদ ।।
কবি মো. জায়েদ আজিজ তাঁর ছাতিম ফুলের গন্ধ কবিতায় লিখেছেন,
শরৎ শেষে হেমন্তের
ওই আগমনী গান
কেমন তর বাজছে দেখো
হৃদয়ে সুরের কলতান।
এমন ক্ষণে ফুটেছে ছাতিম
সুবাসিত ধরা আজ
আছে গভীর রাত, জ্যোৎস্নার আলো,
কী অপরূপ প্রকৃতির সাজ।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের সামনের প্রধান সড়ক। নিশুতির নির্জনতায় পশ্চিম  দিগন্তে হেলানো চাঁদের মৃদু আলোর বাহার।
হালকা শিশিরে ভেজা পাকা সড়কের দুপাশে বিভিন্ন গাছ-গাছালি। হঠাৎ মধুময় সৌরভ নিয়ে নাকে ঝাপটা দিয়ে গেল অনুভূতি আবিষ্ট করে দেয়া মৃদু হাওয়া। মস্তিষ্কের মাঝে তীব্র আবহ সৃষ্টিকারি গন্ধের উৎস খোঁজে আশপাশে তাকাতেই চোখে পড়ল ঘন পত্র পল্লবে ঘেরা শোভিত ফুলের পসরা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামীণ একটি গাছের দিকে। জোসনা রাতে তীব্র মাদকতাময় সুবাস ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।
যারা গ্রামে বাস করে তাদের কাছে এটি চিরচেনা ছাতিমফুলের গন্ধ। স্থানীয়ভাবে যা ছাতিয়ান বা ছাতিয়ানা গাছ নামে পরিচিত। এ গাছের পাতার সঙ্গে ছাতার মিল খুঁজে পাওয়া যায় বলে হয়তো এমন টি নামকরণ হতে পারে।
গ্রামীণ অর্থনীতিতে কাঠ কিংবা ফলদ গাছের মতো ছাতিম গাছের কোন গুরুত্ব না থাকলেও প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠা এ গাছ সুগন্ধি ছড়িয়ে জানান দেয় হেমন্তের আগমনী বার্তা। অনেকের কাছেই এই সুবাস অত্যন্ত প্রিয়৷ আবার যাদের এলার্জি আছে তীব্র ঝাঁঝালো এই সুবাস তারা সহ্য করতে পারেন না৷ তবে বাংলা সাহিত্যে অনেকের লেখায় স্থান পেয়েছে সুবাসিত ছাতিম ফুলের গন্ধ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তি নিকেতনে সমাবর্তনের সময় প্রথম উপহার দিতেন ছাতিম পাতা।
উপজেলার মেহের ডিগ্রি কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারুক আহমেদ জানান, ছাতিম গাছের ইংরেজি নাম ‘ডেভিল ট্রি’ মানে ভূতের গাছ। বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাল্সটোনিয়া স্কলার। একসময় ব্ল্যাকবোর্ড ও কাঠ পেন্সিল তৈরিতে ব্যবহৃত হতো এই গাছ।
নিজমেহার গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর স্ত্রী শতবর্ষী  আয়েশা বেগম জানান, ছাতিম গাছের ছাল, বাকল ও আঠা একসময় ওষধি হিসেবে জ্বর, আমাশয় ও ক্ষত সারাতে ব্যবহৃত হতো। তিনি আরও জানান, ছোট বেলায় এই গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় খুব ভয় পেতেন। ছাতিম গাছে ভূতের বাসা শীর্ষক অনেক লোককথা প্রচলিত থাকলেও তিনি বাস্তবে কখনো এমনটি দেখেন নি।
অনেক টা ছাতার মতো ৭টি পত্র পুঞ্জ নিয়ে ছাতিম গাছের পাতা। একাংশ গাঢ় সবুজ, উল্টো পাশে জলরোধী হালকা সবুজ।  ডাল কিছুটা লম্বা হয়ে শাখা-প্রশাখায় বৃত্তাকার পাতা মেলে ধরে। গুচ্ছ গুচ্ছ প্রতিটি পাতা ভরে ওঠে সবুজাভ মায়া ছড়ানো ফুলের থোকায়। বাতাসে পরাগায়নের মাধ্যমে ফুল থেকে জন্ম নেয়া এক ধরনের লোমশ বীজ বাতাসে উড়ে এই গাছের বংশ বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
প্রতিবছর অপরিকল্পিত গাছ নিধনের ফলে কমছে ছাতিম গাছের সংখ্যা। পরিকল্পিত বনায়নে লাগানো গাছের তালিকায় এ গাছ স্থান না পাওয়ায় অস্তিত্ব হারাচ্ছে গাছের এ প্রজাতি। আগামী প্রজন্মের কাছে স্বমহিমায় ফুলের গন্ধে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়া গাছটির পরিচয় ধরে রাখতে এর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
ফম/এমএমএ/

ফয়েজ আহমেদ | ফোকাস মোহনা.কম