হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর): চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত টাকা আদায় করে তা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক অভিযোগ উঠে। কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি এখনও বহাল তবিয়তে।
এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ২০২৪ এর পাবলিক পরীক্ষায় বিভিন্ন খাতে সেশন ফি বাবদ ২ হাজার ৭৪০ টাকা করে নিয়েছেন অধক্ষ। যে খাতগুলো দেখানো হয়েছে তার কয়েকটি খাত এই কলেজে সরকারি প্রজ্ঞাপনে নাই। যে টাকা উত্তোলনের শেষ তারিখ ছিল ১০ ডিসেম্বর।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, সেশন ফির সাথে প্র্যাক্টিক্যালের টাকার খাত থাকার পরও অতিরিক্ত আইসিটি ও কৃষি শিক্ষককে দিয়ে ১ হাজার ১৭৩ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আইসিটি পরিক্ষার ফি বাবদ ১০০ টাকা এবং খাতা বিক্রি করে ১৫০ টাকা মোট ২৫০ টাকা করে নেন। যার মোট অংক দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৩ হাজার ২৫০ টাকা এবং কৃষি প্র্যাক্টিক্যাল ফি ২০০ এবং খাতা বাবদ ২৪০ টাকা করে ৩৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে নেন ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা সর্বমোট ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৫০ টাকা উত্তোলন করে কলেজের ক্যাশে জমা না করে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সেশন ফির সাথে আমাদের কাছ থেকে প্র্যাক্টিক্যাল খাতার টাকা নেয়ার পরও রেডিমেট আকানো খাতা আমাদের দিয়ে ক্রয় করান যা আঁকার কথা ছিল আমাদের।
তাছাড়া ২০২৫ সালে যারা দ্বিতীয় বর্ষে পরীক্ষা দিবে তাদের ভর্তির সময় খাতে নাই এমন টাকাসহ নিয়েছে ২ হাজার ৩০০ টাকা করে। কিন্তু রিসিট দিয়েছেন ২ হাজার ১৮৫ টাকার। এবার যার নতুন ভর্তি হয়েছে তাদের কাছ থেকে রিসিটের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৪৯৪ টাকা এবং রিসিট ছাড়া নেওয়া হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে এবং বিএম শাখার ভর্তিতেও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এই অধ্যক্ষ এর বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালের জুন মাসের ৬ তারিখে এই অধ্যক্ষ কলেজে যোগাযোগদানের পর থেকে শিক্ষক কর্মচারিদের সাথে অমানবিক আচরণের অভিযোগও রয়েছে । যার ফলে গত ৪ নভেম্বর তারিখে কলেজ শিক্ষক অধ্যাপিকা ফাতেমা আক্তার তাঁর সাথে অমানবিক আচরণ এবং দূর্নীতি ও অনিয়ম বিবরণ তুলে ধরে কলেজ কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নিয়ে নেন অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের তাঁর কক্ষে ডেকে নিয়ে বলেন কলেজে এই মূহুর্তে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। দুপুর পৌনে ১২টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত চলে সহকারী অধ্যাপিকা ফাতেমা আক্তারের সংবাদ সম্মেলন। কিন্ত তখনও শুরু হয়নি পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরু হয় ১টায় থেকে। তখন তিনি নিজেই ১৪৪ ধারা ভঙ করে অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন তার অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের ডেকে প্রায় ২ ঘন্টাব্যপী সঙ্গ দেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার কলেজে কোন দূর্নীতি অনিয়ম হয়না। ৫ আগস্টের আগে কি হয়েছে সেগুলো নিয়ে কথা বলবেন না। ৫ আগস্টের পরে কি হয়েছে তা নিয়ে কথা বলেন।
তাহলে ৫ আগস্টের আগে যা করেছেন তা আগের সরকারের নির্দেশনা মতে করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নই। আমার কমিটি করে দেওয়া আছে। কমিটির সাথে কথা বলেন। ছাত্র-ছাত্রীদের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে এবং ফোনে এসব বলা যাবেনা সামনা সামনি এসে কথা বলেন বলে জানান এই অধ্যক্ষ।
ফম/এমএমএ/