চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কারিগরি কলেজ মাঠে স্বাধীনতা মেলা ২০২১ আয়োজনের জন্য ৩ মাসের অনুমতি নিয়ে বিদ্যালয়ে মাঠে টিনের বেড়া দেন আয়োজনকারী। সেই বেড়ার ভেতরেই টিকেট কাউন্টারসহ ছোট ছোট দোকান তৈরি করা হয়। মেলা করার জন্য পুরো প্রস্তুতি শেষ করার পর পর করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আঘাত হানে দেশে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় মেলার উদ্বোধনসহ সকল কার্যক্রম।
এদিকে, মেলার আয়োজনকারী মাঠ ব্যবহারের জন্য ২ মাসের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে সেই আবেদনে ৩ মাসের অনুমতি দিয়েছিলেন তৎকালীন অধ্যক্ষ। মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেবার প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও মেলা আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ মাঠের দখল না ছাড়ার কারণে বিপাকে পড়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয় খুলে দেবার আগ ও পর থেকে আয়োজনকারীদের চিঠি দিয়ে কোনো উত্তর পাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এদিকে মাঠ দখল না ছাড়ার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলাসহ স্কাউট কার্যক্রম করতে পারছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে মাসব্যাপী মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মেলা করার জন্য মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে সদ্য অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ আবু তাহের মজুমদারের কাছে একটি আবেদন করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদন করেন উপজেলার ৫ নম্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন সবুজ। অধ্যক্ষ সেই আবেদন রিসিভ করেন চলিত বছরের ১ মার্চ।
আবেদনটি করেন জনৈক মাহতাব হোসেন সবুজ। আবেদনের সূত্রে জানা যায়, ১০/০৩/২০২১ থেকে ১৫/০৫/২০২১ তারিখ পর্যন্ত মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়। ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, শাড়ি, কুটির শিল্প, দেশি-বিদেশি কসমেটিক্স, ইমিটেশন, আচারসহ বিভিন্ন স্টল থাকবে। এ ছাড়া মেলায় নৌকা, নাগরদোলা, সামাজিক মিনি সার্কাসের ব্যবস্থা রাখা হবে। এতে করে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে। স্বাস্থ্যবিধিসহ হ্যান্ড স্যানিটাইরাইজের ব্যবস্থা রাখা হবে মেলায়।
এ আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন অধ্যক্ষ আবু তাহের মজুমদার বিদ্যালয়ের প্যাডে চলতি বছরের ৩ মার্চ মাঠ ব্যবহারের লিখিত অনুমতি প্রদান করেন। আবেদনকারী ২ মাসের জন্য অর্থাৎ ১০/০৩/২০২১ থেকে ১৫/০৫/২০২১ তারিখ পর্যন্ত মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চান। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে অধ্যক্ষ ০৩/০৩/২০২১ থেকে ১০/০৬/২০২১ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ ৩ মাস সময় দেন আবেদনকারীকে। মাঠ ব্যবহারের অনুমতির ৩ মাস সময় শেষ হয়ে অতিরিক্ত আরো ৪ মাস পার হয়ে যাওয়ার পরেও মেলার আয়োজনকারী মাঠ থেকে কোনো মালামাল সরাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী অনিক রহমান ও ইশতিয়াক হোসেন রুপক জানান, প্রায় পৌনে ২ বছর পর বিদ্যালয়ে এসে দেখি আমাদের খেলার মাঠের ষোলআনাই দখল করে রাখা হয়েছে। এখন আমাদের খেলাধুলা করার মতো কোনো স্থান পাচ্ছি না। আমরা এখনই বিদ্যালয়ের মাঠ দখলমুক্ত চাই।
মাহতাব হোসেন সবুজ মুঠোফোনে জানান, আগামি বৃহস্পতিবারের মধ্যে জেলা প্রশাসকের অনুমতি পাওয়া না গেলে শুক্রবার থেকে মেলার স্টল ও অন্যান্য উপকরণগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।
বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) খোদেজা বেগম জানান, বিদ্যালয়ের আনুসঙ্গিক উপকরণ অপসারণের জন্য মেলা কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। গত ২৪ আগস্ট লিখিতভাবে প্রথম নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে মাঠ খালি না করায় ১ অক্টোবর দ্বিতীয় নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী শুক্রবারের মধ্যে মাঠ খালি করে দেবে বলে মেলা কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে জানিয়েছে।
বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানান, বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে মেলার স্টল ও অন্যান্য উপকরণ অপসারণের জন্য মেলা কর্তৃপক্ষকে অধ্যক্ষের মাধ্যমে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যদি তারা না সরায়, পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সৌজন্যে: দৈনিক কালের কন্ঠ।
ফম/এমএমএ/