হাইমচরে প্রবীণ শিক্ষকের সম্মানহানীর চেষ্টা, মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ!

সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিরোধকৃত দুই পক্ষের লোকজন।

চাঁদপুর: চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার আলগী দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের নয়ানী গ্রামে প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা ইব্রাহীম মিজির বিষয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার ও সম্মানহানীর চেষ্টা করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই বিষয়ে একটি গনমাধ্যমে কল্পকাহিনী সাজিয়ে প্রবীণ এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরা হয়। সরেজমিন গিয়ে দেখাগেলো পুরো ঘটনাই বিপরীত। যাদের সাথে ঘটনা সাজিয়েছে তারা বলছেন মাওলানা ইব্রাহীম এই ঘটনার সাথে জড়িত নেই।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই গ্রামের মিজি বাড়িতে গিয়ে কথা হয় মাওলানা ইব্রাহীম, তার ভাতিজা মোক্তার মিজি ও তাদের সাথে বিরোধকৃত পক্ষের সাথে।

খোঁজ নিয়ে ও ঘটনার সাথে জড়িতদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, মাওলানা ইব্রাহীমের ভাতিজা মোক্তার মিজির সাথে প্রতিবেশি সোবহান বিশ্বাস গংদের সাথে সম্পত্তির অংশ দখল নিয়ে বিরোধ হয়। সোবহান বিশ্বাস গংরা তাদের নতুন ঘর উঠানোর জন্য কাজ শুরু করেন। সেখানে মোক্তার মিজি তাদের সম্পত্তিতে ঘরের অংশ পাকা করছেন বিধায় ইট তুলে ফেলেদেন। এই নিয়ে তাদের মধ্যে এক পর্যায়ে মারমামির হয়। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়।

কিন্তু এই ঘটনাটির তথ্য উদ্দেশ্যেমূলক ভুলভাবে উপস্থাপন হয়। ওই চক্রটি প্রচার করেন গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে সম্পত্তিগত বিষয়ে বৈঠক হয়। সেখানে মাওলানা ইব্রাহীম ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী এনে ভাতিজাদের মধ্যে তিনজনকে হত্যার চেষ্টা করে আহত করেন। আহত দেখানো হয়-কালু মিজি, মিজান মিজি ও সাইফুল মিজিকে।

বিরোধকৃত সম্পত্তি।

এই বিষয়ে আহতদের ভাই মোক্তার মিজি বলেন, আমাদের সাথে আমার চাচা ইব্রাহীম মিজির কোন বিরোধ হয়নি। বিরোধ হয়েছে সোবহান বিশ্বাসদের সাথে। তারা আমাদের জমির অংশ দখল করে ঘরের কাজ করছিলো। যে কারণে আমি ইট উঠিয়ে ফেলে দিয়েছি।

এদিকে ঘটনায় জড়িত সোবহান বিশ্বাস এর স্ত্রী ফাহিমা বেগম ও নজরুল বিশ্বাসের স্ত্রী আছমা বেগম জানান, তারা বিগত ত্রিশ বছর আগে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এখানে এসে বাড়ি করেন। তাদের সম্পত্তির সামনে মোক্তার মিজিদের সম্পত্তি আছে বলে ইটখুলে ফেলে দেয়। আমাদেরকে মারধর করেন। তাদের হামলা থেকে বাঁচতে আমরা ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।

ইব্রাহীম মাওলানা মারামরির সাথে জড়িত আছেন কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহিমা ও আছমা বলেন, উনারা এই ঘটনায় জড়িত নেই। বরং মারামারির সময় উনার দুই ছেলে উভয়পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেছেন।

এই প্রসঙ্গে ইব্রাহীম মাওলানা বলেন, ঘটনার সময় আমি পাশেই বসা ছিলাম। তখন আমার হাত থেকে লাঠি নিয়ে মোক্তারদের পক্ষ থেকে লোকজন এসে মারামারি করে। এই ছাড়া আর কিছুই জানিনা।

ইব্রাহীম মাওলানার বড় ছেলে হাবিব মিজি বলেন, ঘটনার সময় আমরা উপস্থিত থেকে উভয় পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু মোক্তার মিজির ভাইরা আমার বয়স্ক বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তির সাথে আলাপ করে জানাগেছে, মূলত মোক্তার মিজি ও সোবহান বিশ্বাস গংদের সাথে বিরোধ। দুই পক্ষের বিরোধে মাওলানা ইব্রাহীম মিজির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

ইউনিয়ন পরিষদে শালিশী বৈঠকের সিদ্ধান্তের কপি। ছবি: সংগ্রহীত।

মাওলানা ইব্রাহীম ও মোক্তার মিজির ভাইদের সাথে কোন ধরণের ঘটনা না হলেও কেন মিথ্যাচার হচ্ছে। এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানাগেল মূল রহস্য।

মাওলানা ইব্রাহীম মিজি বলেন, মিজি বাড়ির দুই ভাগ এবং দুই বাড়ি। দুই বাড়ির লোকজন সম্পত্তির মালিক ৬ একর ১৫ শতাংশ। এই সম্পত্তির হিসাব অনুসারে একবাড়ির অংশ ৩ একর ৭.৫শতাংশ। কিংবা কম বেশি হতে পারে। তিনি যে বাড়িতে থাকেন। এই বাড়ির সম্পত্তির অংশের তিনভাগ। পৈত্রিক সম্পত্তির আরএস ও সিএস খতিয়ান অনুসারে আক্তার মিজিদের প্রাপ্ত অংশ ৭১.৬৬ একর। বাকি ইব্রাহীম মিজি ও সবুর মিজি একই পরিমানে মালিক।

তাদের এই সম্পত্তির মধ্য থেকে আক্তার মিজি গংরা দুইবারে বিক্রি করেছেন ২৮.৬২ শতাংশ ও ১৫.০০ শতাংশ। বাকি তাদের সম্পত্তি আছে ১৮.৪ শতাংশ। আরেক অংশিদার সবুর মিজি বিক্রি করেছেন ২৮.৬২ শতাংশ। তাদের সম্পত্তি আছে ৪৬.০৪ শতাংশ। ইব্রাহীম মিজি কোন সম্পত্তি বিক্রি করেননি। তার ৭১.৬৬শতাংশসহ ক্রয়কৃত সম্পত্তির পরিমান হচ্ছে ২ একর ৫৮শতাংশ।

ইব্রাহীম মাওলানা বলেন, আমার পৈত্রিক সম্পত্তির অংশ ও ক্রয়কৃত সম্পত্তির অংশ থেকে সোবহান বিশ্বাসদের কাছে বিক্রি করেছি ৩৭.৫ শতাংশ। তারা নদী ভাঙনের পর এখানে থাকলেও জমি লিখে নেননি। গত তিন বছর পূর্বে আমি তাদেরকে জমি লিখে দিয়েছি। ওই সম্পত্তিতে তারা ঘর নির্মাণ করার সময় মোক্তার মিজিদের সাথে বিরোধ হয়।

তিনি আরো বলেন, বিএস খতিয়ানে আমার ভাতিজা আক্তার মিজিদের নামে প্রায় ২০ শতাংশ জমি বেশি উঠে। আমার অংশে কম উঠে। তারা দীর্ঘ বছর আমার এই সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছে। তারা আমাকে ওই জমির দাবী ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে এবং আমি যখন হজে যাই তখন ৫০ হাজার টাকা দেয়। এই বিষয়ে আমি তাদের সাথে কোন সময় জগড়া বিবাদ করিনি। কিন্তু তাদের পরিবারের মহিলা সদস্যরা সব সময় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। বৃদ্ধ বয়সে আমি এসব গালমন্দের জবাব দেয়ার সাহস পাইনি।

আক্তার মিজি গংরা অস্থায়ী বন্টকনামা অতিরিক্ত লেখা যোগ করে। আগে ও পরের ছবি। ছবি: সংগ্রহীত।

আক্তার মিজি গংদের অতিরিক্ত সম্পত্তি ভোগ দখল সম্পর্কে জানাগেছে, এই বিষয়ে স্থানীয় আমিন দিয়ে পরিমাপ করেও কোন সমাধান হয়নি। আক্তার মিজিদের সাথে এক সময়ে সমাধানের লক্ষ্যে ৫০ টাকার দুটি স্ট্যাম্পে বন্টক দেখানো হয়। কিন্তু ওই স্ট্যাম্পেও আক্তার মিজি গংরা জালিয়াতি করে স্বাক্ষরের পর অতিরিক্ত লেখা যোগ করেন। স্ট্যাম্পের লেখা ও পরের যোগ করা লেখার সাথে কোন মিল নেই।

বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। মাওলানা ইব্রাহীম মিজি ও আক্তারদের সাথে সম্পত্তিগত বিরোধ নিয়ে বেশ কয়েকবছর আগে ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক হয়। সেখানেও আক্তার মিজিদের অংশে অতিরিক্ত ১৮.১৭ শতাংশ অতিরিক্ত দখলে আছে বলে ওই বৈঠক শেষে পরিষদের পেডে লিখিত সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়। তবে ওই বৈঠকে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা স্বাক্ষর করলেও আক্তার মিজি গংরা স্বাক্ষর না করে চলে যান।

এদিকে আক্তার মিজি গংদের হুমকি ধমকির কারণে ২৭ সেপ্টেম্বর হাইমচর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন মাওলানা ইব্রাহীম মিজির বড় ছেলে হাবিবুর রহমান মিজি।
ফম/মাইনুল/মাসুদ/

মো. মাইনুল ইসলাম | ফোকাস মোহনা.কম