চাঁদপুর : চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার কথিত কর্মচারি ও মাদক কারবারিদের গডফাদার তাজুল ইসলাম ভুঁইয়ার নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে গ্রামবাসী। ভুক্তভোগীরা তার মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা, মাদক ব্যবসায় বাধ্য করা, মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করা, জাল দলিল তৈরী করাসহ নানা অনৈতিক কাজ থেকে সর্বশেষ রক্ষায় দারস্থ হয়েছেন গনমাধ্যমের কাছে।
বুধবার (২৬ জুন) বিকেলে তাজুল ইসলাম ও তার শ^শুর সহিদ মিজির নানা অপকর্ম তুলে ধরে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন এলাকাবাসী।
৫৬জন ভুক্তভোগীর পক্ষে তার অপকর্মের চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী ও হাইমচর উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ।
তিনি বক্তব্যে বলেন, আমরা ভুক্তভোগীরা এলাকার নিরীহ প্রকৃতির লোক। অনেকেই হাইমচর উপজেলা পরিষদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী তাজুল ইসলাম ভুঁইয়ার প্রভাব ও নানা ফাঁদে হয়রানির শিকার। উপজেলার দক্ষিণ আলগী গ্রামের ইব্রাহিম ভুঁইয়া বাড়ীর মৃত জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়ার ছেলে তাজুল ইসলাম চতুর্থ শ্রেণীর অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারির প্রভাব খাটিয়ে অল্প কয়েক বছরে বহু সম্পদের মালিক হয়েছেন। উপজেলায় চাকরীর কারণে সরকারি দপ্তর ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। এরপর থেকে এলাকার লোকজনের সম্পত্তি দখল, জাল দলিল তৈরী করা, তার স্ত্রী, স্ত্রীর ভাই, শ^শুর, তার আপন ছোট ভাই নজরুল ইসলামকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে আসছে। যে কারণে এলাকার লোকজন স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। কারো সাথে তার সমস্যা হলে তাকে পুলিশ দিয়ে মিথ্যা হয়রানি করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, তাজুল ইসলামের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে আমরা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ এবং থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে আইনের আওতায় আসেনি। যে কারণে আমাদের দু:খ ও কষ্টের কথাগুলো সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছি। আপনাদের লেখনির মাধ্যমে আমরা এলাকায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবো।
জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়, গত মে মাসের ৫ তারিখে তাজুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই নজরুর ইসলাম একই বাড়ির জসিম উদ্দিন ও তার পিতা আনেয়ার ভুঁইয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করে। এতে জসিমের হাত ভেঙে যায়। দীর্ঘদিন সে চিকিৎসা নেয়। এই ঘটনায় জসিমের পিতা আনোয়ার ভুঁইয়া তাজুল গংদের বিরুদ্ধে ২০ মে থানায় মামলা করে। মামলাটি চলমান। ওই মামলা থেকে রেহাই পেতে তাজুল ইসলাম উপজেলা থেকে প্রত্যয়ন পত্র বের করে। যেটিতে সে ঘটনাস্থলে ছিলনা বলে উল্লেখ করে।
আহত জসিম ভুঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, তিনি তাজুল ইসলামের চাচাত ভাই। তার সাথে তাজুল ইসলামের খুবই ভাল সম্পর্ক ছিলো। তাকে চাকুরী নিয়ে দিতেও অনেক সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু সে উপজেলায় অস্থায়ী চাকরীতে প্রবেশ করে আচরণ পরিবর্তন করে। জসিম প্রায় সাত বছর বিদেশে ছিলো। দেশে এসে মটর গ্রেজ দিয়ে সংসার চালাতে শুরু করেন। এরই মধ্যে তাজুল ইসলাম তাকে মাদক বিক্রির অপার দেন। তার নাম ও তথ্য গোপন রেখে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়লে কয়েকবার আটক হন। কিন্তু তিনি তাজুল ইসলামের নাম বলেননি। সর্বশেষ জসিম নিজে খারাপ কাজ থেকে বেরিয়ে আসলেও তাজুল ইসলাম তাকে মাদক বিক্রির জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। তার কথা না মানার কারণে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করেন।
তাজুল ইসলামের এহেন কর্মকান্ডে বিষয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন আব্দুল বেপারী। তিনি বলেন, তাজুল ইসলাম তার কিন্ডারগার্টে করার জন্য আব্দুল বেপারীর সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন। তিনি তার এহেন কর্মকান্ড থেকে মুক্তি চান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে তাজুল ইসলাম ভুঁইয়া মুঠোফোনে জানান, যারা এসব অভিযোগ করেছে তারা কেউ কেউ তার শ^শুরের সম্পত্তি দখ করে আছে এবং নিতে চায়। তারা নিজেরাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি জীবনে কোন ধরণের মাদক সেবন করেন না। তবে তিনি উপজেলায় থাকা অবস্থায় আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ কোন সমস্যা পড়লে তিনি বুদ্ধি পরামর্শ দিয়েছেন। এটাকে তিনি কোন ধরণের অপরাধ মনে করেন না।
ফম/এমএমএ/