সাবেক মন্ত্রীর হামলা-মামলার শিকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা

সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান। ছবি: ফোকাস মোহনা.কম।

চাঁদপুর : আমি দুই যুগেরও বেশী সময় সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এর সাথে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। চাঁদপুর-২ আসনে ২০১৮ সালে তিনি নৌকার মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছেন এডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল। নৌকার পক্ষে কাজ করে আমরা তৃণমূলের আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে বহু মামলার আসামী হচ্ছি এবং নির্যাতনের শিকার। মায়া চৌধুরীর সাথে যখন ছিলাম তখন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ছিলাম। এখন আমাদের বলা হয় রাজাকারের সন্তান। ক্ষোভ প্রকাশ করে এমন অভিযোগ তুলে ধরেছেন-চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে মোহনপুর চেয়ারম্যানের নিজ বাড়িতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় গনমাধ্যমের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, নৌকার মনোনয়ন তৃনমূলের কর্মীরা দেয় না। নৌকার মনোনয়ন দেন দলের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমরা কেন তাদের বিভাজনের বলি হব। আমি ইউনিয়নের জনগণের কল্যাণে বহু বছর আগ থেকেই কাজ করছি। কাজ করার ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়েছেন মায়া চৌধুরী। কিন্তু তিনি এমপি থেকে বাদ পড়ার পর গত সাড়ে ৪বছরের অধিক সময় এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের অনেকেই নির্যাতনের শিকার।

কাজী মিজান বলেন, ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে মোহনপুর ইউনিয়নে আমিও চেয়ারম্যান প্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু প্রধামন্ত্রী যখন বাবুল চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলেন আমি আর কোন কথা বলিনি। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। উনার মৃত্যুর পর আমি যখন নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হলাম, তখন আমাদের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিলেন। কিন্তু তিন দিনের মাথায় আমার থেকে এই ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীক কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু জনগণের সমর্থন নিয়ে এবং সর্বস্তরের সহযোগিতায় আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের পরিকল্পনা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগিতা ছিল। এ জন্য আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।

ওই উপ-নির্বাচনের সময় মায়া চৌধুরীর অনুসারীরা একটি গভীর ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করেছে। তাদের পরিকল্পনলা ছিল যদি কোন ধরনের হত্যাকান্ড কিংবা অপরাধমূলক ঘটনা তৈরী করতে পারে তাহলে নির্বাচন বন্ধ রাখতে পারবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় তাদের পরিকল্পনা সফল হয়নি।

চেয়ারম্যান বলেন, তিনি (মায়া চৌধুরী) আমাদেরকে ভাল থাকতে দিতে চান না। তিনি গত ১৭ জুন যুবলীগ কর্মী মোবারক হোসেন বাবু হত্যা মামলায় আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদেরকে জড়িয়ে মামলা করেন। যার ফলে আমি আড়াই মাস জেল খেটেছি। ঘটনাস্থল বাহাদুপুর গ্রামে এলাকায় মায়া চৌধুরীর অনুসারীরা ১২০ পরিবারের ৫৫টি ঘরবাড়ি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র, গবাদি পশুসহ নগদ প্রায় ১২ কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট ও ডাকাতি এবং দুইজন মহিলাকে ধর্ষণ করে। এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত আদালত ও থানায় ১৩টি মামলা করেছেন। এই সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এরপরেও মামলার কোন তদন্ত না হওয়ার কারণে উল্লেখিত ১২০ পরিবারের কেউই তাদের বাড়িঘরে ফিরতে পারে না।

তিনি বলেন, যুবলীগের ওই কর্মীকে আহত অবস্থায় ঘটনার দিন মোটরবাইক করে প্রথমে মায়া চৌধুরীর বাড়ীতে আনা হয়। সেখানে দুই ঘন্টা থাকার পর নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা হাসপাতালে। কেন হাসপাতালে না নিয়ে ওই বাড়ীতে নেয়া হল। বাহাদুরপুর থেকে হাসপাতালে যেতে সময় লাগে মাত্র আধাঘন্টা। আমরা সব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। বিপরীতে ঘটনার দিন আমি, আমরা ভাইরা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাসহ বাড়িতে ছিলাম। আমার বাড়ীতে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। ওই ফুটেজ অনেকেই দেখেছে। গনমাধ্যমে এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। আমি মনে করি, গণমাধ্যম তাদের নিজেদের মত করে এই বিষয়ে আরো তদন্ত করে দেখবে।

কাজী মিজান বলেন, বাবু হত্যা মামলার বিষয়টির মূল রহস্য সরকারের সকল সংস্থার কাছে পরিস্কার। সঠিকভাবে তদন্ত করা হোক। গত ২০ সেপ্টেম্বর বাহাদুরপুরে গিয়ে আমাদের সাবেক মন্ত্রী মায়া চৌধুরী বলেছেন-খুনি যতবড়ই হোক সে পার পাবে না। যতবড় আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকুক সে শান্তি পাবে না। আমি মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বলব-আমরাও বাবু হত্যার প্রকৃত খুনি বের হয়ে আসুক। যেন খুনিকে বাঁচাতে গিয়ে প্রকৃত খুনি অন্তরালে না যায় এবং নির্দোষীরা যাতে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পায়।
কাজী মিজান আরো বলেন, এই ঘটনার পর থেকে আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যাতে আমরা এলাকায় না থাকতে পারি। এমতাবস্থায় আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা কামনা করছি।

এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা বিল্লাল হোসেন মৃধা, গোলাম হোসেন, আব্দুল খালেক, ফয়েজ আহমেদ সরকার, ইউপি সদস্য আল-আমিন, শাহাদাত বেপারী, কাজী হাবীবুর রহমান, ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি বিল্লাল তপাদার ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জয় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান এর এসব অভিযোগের বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এর ব্যাক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হয়। মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম