চাঁদপুর: ‘অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে, সঠিক বিচার পেতে চলো যাই গ্রাম আদালত ‘ এই প্রতিপাদ্যে চাঁদপুর জেলায় গ্রাম আদালতের কার্যক্রম বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১৯ মে) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ.কে.এম. তারিকুল আলম।
তিনি বক্তব্যে বলেন, গ্রাম আদালত পরিচালনার ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় ব্যয় ও সময় দুই-ই কমে যায়। ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি হওয়া বাধ্যতামূলক। তাই সাধারণ জনগণকে গ্রাম আদালতের সুযোগ গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতিবাচক চিন্তা থেকেই নৈতিকতার জন্ম হয়। আমাদের মনোভাব ইতিবাচক রাখতে হবে। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে যেসব মামলা অল্প সময়ে নিষ্পত্তি সম্ভব, সেগুলো উচ্চ আদালতে গেলে বছরের পর বছর লেগে যায়।
কর্মশালায় জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. গোলাম জাকারিয়া, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাখাওয়াত জামিল সৈকত, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাজমা আক্তার, গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের জেলা ম্যানেজার মমতাজ বেগমসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক ও প্রকল্প কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গ্রাম আদালত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: গ্রাম আদালত কী? গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে গঠিত একটি স্থানীয় আদালত, যা অনধিক ৩ লক্ষ টাকার ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধ দ্রুত ও সহজে নিষ্পত্তি করতে পারে। এখানে আইনজীবীর প্রয়োজন হয় না, পক্ষগণ নিজের বক্তব্য নিজেরাই উপস্থাপন করতে পারেন।
আবেদন প্রক্রিয়া: ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে যথাযথভাবে পূরণ করতে হয়।
চেয়ারম্যান বরাবর জমা দিতে হয়। ফৌজদারি মামলার জন্য ১০ টাকা ও দেওয়ানি মামলার জন্য ১০ টাকা ফিস দিতে হয়। ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে বিরোধ সংঘটিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এবং দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে ৬০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়।
গ্রাম আদালতের গঠন: চেয়ারম্যানসহ মোট ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। উভয় পক্ষ থেকে ২ জন করে সদস্য মনোনীত হন। নারী সংশ্লিষ্ট মামলায় নারী সদস্য বাধ্যতামূলক।
জরিমানার বিধান: মিথ্যা মামলা করলে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা। সাক্ষী সমন অমান্য করলে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। গ্রাম আদালত অবমাননার জন্য সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা জরিমানা।
যে বিরোধগুলো নিষ্পত্তি করা যায়: চুরি, ঝগড়া-মারামারি, প্রতারণা, হুমকি, শালীনতা লঙ্ঘন, পাওনা টাকা আদায়, সম্পত্তি দখল-পুনরুদ্ধার, ক্ষতিপূরণ, গবাদিপশুর ক্ষতি, কৃষি মজুরি, স্ত্রী কর্তৃক ভরণপোষণ ইত্যাদি।
যেসব বিরোধ নিষ্পত্তিযোগ্য নয়: ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি, তালাক, অভিভাবকত্ব, দেনমোহর, যৌতুক ও নারী-শিশু নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধ ও ৩ লক্ষাধিক টাকার বিরোধ।
গ্রাম আদালত হচ্ছে একটি জনবান্ধব ও ন্যায়সংগত ব্যবস্থা, যা বিশেষ করে দরিদ্র, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য দ্রুত ও স্বল্প খরচে বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় অংশগ্রহণে এটি আরও কার্যকর হয়ে উঠবে বলে কর্মশালায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন অতিথিরা।
ফম/এমএমএ/