চাঁদপুর: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রামপুর বাজারে সরকারি সম্পওি নিজের মালিকানা দাবি করে স্হানীয় এক ব্যক্তি বহুতল ভবন নির্মাণ করার ঘটনায় আদালতে মামলা হলে আদালত উক্ত ভবনসহ সম্পওি সরকারের দখলে নেওয়ার আদেশ দেন। এই আদেশের ২ মাস অতিবাহিত হলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্হানীয় জনমনে ক্ষোভের দেখা দিয়েছে।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার রামপুর বাজারের ১৭৩ নং পশ্চিম লাড়ুয়া মৌজার ১৭৮৭ ও ১৭৮৮ দাগে প্রায় ১৫ শতাংশের মতো সরকারি বহু মূল্যবান সম্পওি স্হানীয় আব্বাস আলী মিথ্যে কথা বলে এবং ভুয়া দলিল করে তা নিজের ব্যক্তি মালিকানা সম্পওি দাবি করে উক্ত সরকারি সম্পওি দখল করে প্রকাশ্য দিবালোকে বহুতল ভবন নির্মাণ করা শুরু করে। এক পর্যায়ে ভবনটির ২য় তলা পর্যন্ত কাজ হলে এটি আব্বাস আলীর ব্যক্তিগত বা মালিকানা সম্পওি নয় বরং সরকারের সম্পওি তাই সরকারের নজরে আনতে জেলা পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগে অভিযোগ করে স্হানীয় এমরান হোসেন নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু অভিযোগের পরে ও এ বিষয়ে অঞাত কারণে জেলা পর্যায়ে সরকারের সম্পওি দেখা শোনার দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় তিনি স্বপ্রনোদিত হয়ে এবং নিজেই সরকারের পক্ষে বাদী হয়ে উক্ত সরকারি সম্পওি ভুয়া দলিল করে দখলের বিষয়ে গত মে মাসের প্রথমে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দরখাস্ত দায়ের করেন।
আদালত এই দরখাস্ত পেয়ে ভুয়া দলিল সৃজন করে মালিকানা দাবি করা এবং সরকারি সম্পওি দখলকারী আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে।
এক পর্যায়ে অবৈধ দখলকারী আব্বাস আলী নিজে আদালতে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনায় জামিন নিয়ে উক্ত মৌজার ১৮৮৮ নয় ১৮৮৭ দাগে সম্পওি রয়েছে এমন মিথ্যে দাবি করে আদালতের কাছে কাগজ পএ দাখিলের সময় চান।
পরবর্তীতে পুনরায় উক্ত আব্বাস আলী ঘটনাটি নিয়ে টালবাহানা শুরু করলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত ৩০ মে উক্ত সরকারি সম্পওি সকল স্হাপনা সহ সরকারের দখলে নেওয়ার জন্য স্হানীয় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কে আদেশ দেন।
এই আদালতের এই আদেশ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, স্হানীয় উপজেলা পরিষদ, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড ও ইউনিয়ন ভুমি অফিস কে এ সংক্রান্ত একটি অবহিত পএ দেওয়া হয়। কিন্তু আদালতের আদেশের প্রায় ২ মাস সময় অতিবাহিত হওয়ার পথে। অথচ এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় স্হানীয় জনমনে তা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে সরকারি সম্পওি অবৈধ ভাবে দখলকারী আব্বাস আলী বর্তমানে গা ডাকা দিয়েছে। কিন্তু তিনি পর্দার আড়ালে থেকে উক্ত বাজারের স্হানীয় ইজারাদার তোফায়েল আহমেদ ভুইয়া কে দিয়ে সরকারি সম্পওিতে নির্মিত বহুতল ভবনের নানা কাজ গুলো রাতের আঁধারে করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে তোফায়েল ভুইয়া প্রভাবশালী হওয়ায় এ ঘটনায় কেউ প্রতিবাদ করলে তিনি তাদেরকে নানা ভাবে হুমকি ধমকী দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সরকারি সম্পওি বেদখলের বিষয়ে আদালতে সরকারের পক্ষে মামলাকারী এমরান হোসেন এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় তিনি হতাশ হয়ে বলেন, অবৈধ দখলবাজ এবং ভুয়া দলিল করে সরকারের সম্পওি দখলকারীদের সংশ্লিষ্টদের কাছে চিহ্নিত করে দেওয়ার পর ও এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা তো দুরের কথা বরং সরকারের সম্পওি সরকারের দখলে নিতে সংশ্লিষ্টদের টালবাহানা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কে হতাশ করে। শুধু তাই নয়, এই অবৈধ দখলকারীরা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমরা নিরাপত্তা হীনতায় থাকি। ফলে এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আগামীতে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাবে না।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড আজিজুর নাহারের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে আমরা কাগজ পএ পেয়েছি। অবৈধ ভাবে সরকারের সম্পওি দখলকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। কিন্তু এটি উদ্ধারে সরকারের কয়েকটি বিভাগের সমন্বয়ের মাধ্যমে করার বিষয়টি নিশ্চয়ই আপনার জানা রয়েছে। আর সরকারি সম্পওি সরকারের দখলে থাকবে এর বিকল্প কিছু নাই।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই আদেশের পর উচ্চ আদালতে সম্পওি টি নিয়ে একটি মামলা চলমান। তাই এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। এই বিষয়ে মুঠো ফোনে আব্বাস আলীর সাথে কথা হলে, তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
ফম/এমএমএ/জিএম/