চাঁদপুর: গ্রামের নাম কাঠালিয়া। চাঁদপুরের কচুয়া ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় ওই গ্রামের অবস্থান। কচুয়া উপজেলার ৫ নম্বর পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এ গ্রামে প্রায় এক হাজার ২০০ জনসংখ্যা বসতি। অধিকাংশ মানুষ মৎস্যজীবী ও কৃষি শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কাঠালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৎস্য ব্যবসায়ী মাধব সরকার বলেন, তার বয়স ৫৮। সেই শৈশব কাল থেকে দেখে আসা যাতায়াতের কষ্ট যেন শেষ হয়নি আজও। শেষ বয়সে এসেও আধুনিক যুগে এমন দুর্বিষহ কষ্ট আমাদের গ্রামের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী।
দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তা পায়নি কাঠালিয়া গ্রামের মানুষজন। গ্রামটিতে রাস্তা না থাকার কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও রোগীদের যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। গ্রামবাসী বর্ষা মৌসুমে কখনও নৌকায়, আবার কখনও হাঁটু বা কোমর পানিতে এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে ইরি ক্ষেতের কর্দমাক্ত আইল দিয়ে যাতায়াত করছে।
ওই গ্রামের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের গ্রামে যাতায়াতের জন্য কোনও রাস্তা না থাকায় সময়মতো স্কুল-কলেজে যেতে পারছি না। এতে পড়ালেখায় আমরা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। দ্রুত রাস্তা নির্মাণের দাবি জানান তারা।
কাঠালিয়া গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, আমাদের গ্রামটি দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় আমরা অবহেলিত। দুই উপজেলার মধ্য দিয়ে চলাচলে পথ। একটি পক্ষ আদালতে মামলা করলে সেখানে রাস্তার নির্মাণ কাজ থমকে যায়। আধুনিক যুগেও একরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনপদের নাম কাঠালিয়া গ্রাম। অনেকেই জনপ্রতিনিধি হয়ে আসেন কিন্তু আমাদের দুঃখ ও দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, অনেক বছর ধরে ওই গ্রামে রাস্তা নেই। কিছুদিন আগে আমি ওই গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণের জন্য পরিদর্শন করি। কিন্তু যে স্থানে রাস্তা নির্মাণ করা হবে তার দুপাশে কৃষকের মালিকানা জমি থাকায় এবং মামলা থাকায় রাস্তা নির্মাণে সমস্যা হচ্ছে। তবে মতলব ও কচুয়া জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে দ্রুত রাস্তাটি নির্মাণে চেষ্টা চলছে।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল আলিম লিটন বলেন, সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন স্থানের রাস্তা নির্মাণ কাজের বরাদ্দের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কাঠালিয়া গ্রামের রাস্তাটি বরাদ্দের আওতায় বাদ পড়লে তালিকা তৈরি করে পুনরায় পাঠানো হবে।
কচুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাজাহান শিশির বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পরে আমি দুবার কাঠালিয়া গ্রাম পরিদর্শন করি। রাস্তা না থাকায় আমি ও আমার সঙ্গের লোকজনকে ওই গ্রামে যেতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাতে গ্রামবাসীর চলাচলের সুবিধার জন্য আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৪টি সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি। কাঠালিয়া গ্রামের মানুষ অনেক কষ্টে যাতায়াত করেন এবং দুর্ভোগ নিরসনের জন্য আমরা জোরালো চেষ্টা করছি।
ফম/এমএমএ/