।। এস ডি সুব্রত।। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ।আর এ শিক্ষার পেছনে যাদের শ্রম ,ঘাম আর ত্যাগ তিতিক্ষা জড়িয়ে আছে তারা হলেন শিক্ষক।মানুষ গড়ার কারিগর । সমাজের আলোকবর্তিকা । ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস । সারা বিশ্বে এ দিনটি পালন করা হয় । ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং ২য় রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ বলেছিলেন, আমি গর্বিত হব দেশের সমস্ত শিক্ষকের উদ্দেশ্যে যদি একটি শিক্ষক দিবস পালন করা হয়“। প্রথম দিকে ভারতের স্বর্গীয় প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি (১৯৫২-১৯৬২) এবং রাষ্ট্রপতি (১৯৬২-১৯৬৭) মহান শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিনকে স্মরণ করে ভারতবর্ষের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষক মন্ডলী ০৫ সেপ্টেম্বর দিনটিকে,মর্যাদার সাথে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করে। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬ তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কো মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের যুগান্তকারী ঘোষনার মাধ্যমে ৫ অক্টোবর “ বিশ্ব শিক্ষক দিবস“ পালনের শুভ সূচনা করা হয়। এর পর ১৯৯৫ সালের ৫ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে ।
এটি সারা বিশ্বে ‘শিক্ষক’ পেশাজীবিদের জন্য সেরা সম্মান। পরবর্তী প্রজন্ম যাতে কার্যকরী ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে এই দিনটি পালন করে সেটাও এ দিবস পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশ্বের ১০০ টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১ টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। শিক্ষকগণ হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। জাতির নির্মাতা । বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন দিবসটি পালন করে থাকে। ইউনেস্কোর মতে, ‘ বিশ্ব শিক্ষক দিবস‘ শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পালন করা হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকতাকে এখনো পেশা হিসেবে দেখার মানসিকতা পুরোপুরি তৈরী হয়ে উঠেনি। রাষ্ট্র এখনো শিক্ষকতাকে ‘ব্রত‘ হিসেবে দেখতে চায়। তাই রাষ্ট্রের দেয়া বাজেটে শিক্ষকতা পেশায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ দেখা যায় না। বিশেষ করে বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক গণ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না । আমাদের দেশে বেশিরভাগ বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকাংশে ই । ভারতে শিক্ষক দিবসে সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রিয় শিক্ষক- শিক্ষিকাদের আশির্বাদ নেয়, মিষ্টিমুখ করায়, বিভিন্ন উপহার দেয়। জাপানের একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে “Better than a thousand days of delight study is one day with a great teacher.” শিক্ষক দিবস যদি কেবল সভা সেমিনার আর বক্তৃতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে , তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় ।
শিক্ষকদের বিশেষ করে বেসরকারি সকল নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোকে এমপিওভুক্ত করণসহ তাদের গ্রহণ যোগ্য একটা বাড়িভাড়া ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি সহ সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা বিধান করা জরুরি । সর্বোপরি সকল শিক্ষদের সুন্দর ভাবে সামাজিক মর্যাদা -সহ বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন তথা দেশের উন্নয়ন সম্ভব । একটা দেশের সত্যিকারের ও টেকসই উন্নয়নের জন্য মানসম্মত শিক্ষার কোন বিকল্প নেই । আর এ মানসম্মত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন শিক্ষকদের মানসম্মত জীবন যাপনের নিশ্চয়তা বিধান ।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।
০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ ।