শিক্ষকের পরকীয়া তথ্য জেনে ফেলায় নিরীহ ব্যাক্তিকে মারধর : আদালতে মামলা

মারপিটের ঘটনায় আহত কবির হোসেন ও তার পরিবার। ইনসেটে আলী আকবর মাস্টার।

মতলব উত্তর (চাঁদপুর): মতলব উত্তর উপজেলার গজরা ইউনিয়নের মৈষাদী গ্রামে এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের পরকীয়া তথ্য জেনে ফেলায় ওই শিক্ষক কর্তৃক একজন নিরীহ লোককে বেধর মারপিট করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজ্ঞ বিচারক আমলী আদালত, মতলব উত্তর, চাঁদপুরে কাশিমনগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে কবির হোসেন (৪৭) বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

পরকীয়া ঘটনা সম্পর্কে আহত কবির কিছুই জানেন না বলে উল্লেখ করেছেন মামলার এজাহারে। মামলায় বিবাদী করা হয়, ওটারচর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আলী আকবর প্রধান (৪৫), মৈষাদী গ্রামের বাহর আলী প্রধানের ছেলে ওই শিক্ষকের ভাই মোঃ মানিক (৪০), মৈষাদী গ্রামের মৃত সহিদ উল্লাহর ছেলে সাদমান (২২), শাহাদাৎ (৪২), সোনা মিয়ার ছেলে তাইজুল ইসলাম (৩৫) সহ আরো অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১১ ঘটিকার সময় বাদী কবির হোসেন পাশের গ্রামের ওয়াজ মাহফিল থেকে ওয়াজ শুনে বাড়িতে যাওয়ার পথে ঘটনাস্থলে হই ছই শুনে এগিয়ে গেলে জানতে পারেন যে, ওই শিক্ষক জনৈক সামছুন্নাহানের অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় স্থানীয় গ্রামবাসী তাহাদেরকে আটক করে। বাদী সেখানে গেলে ১নং আসামী আলী আকবর মাস্টারের সাথে বাদী কবিরের কথা কাটা-কাটি হয়। আলী আকবর মাস্টার বাদী কবির হোসেনকে নাশের হুমকি দিয়ে বলে যে, তুই সবাইকে বলেছিস যে আমি এই ঘরে আছি এবং এই কারনে আমি গ্রামবাসীর দ্বারা অপমানিত হয়েছি। তৎপর বাদী কাউকে কিছু না বলে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। পরে বাদী স্থানীয় ইউপি মেম্বারসহ স্বাক্ষীগনকে বিষয়টি অবগত করেন। তৎপর বাদী গত ১০ সেপ্টেম্বর রাত ৯.৩০ ঘটিকার সময় শশুর বাড়ি হতে নিজ বাড়িতে আসার পথে ১নং স্বাক্ষী বাচ্চু ভূঁইয়ার দোকানের সামনে আসলে পূর্ব হতে ওৎ পেতে থাকা আসামীগন বেআইনী ভাবে বাদীর পথ রোধ করে ১নং আসামী আলী আকবর মাস্টার তাহার হাতে থাকা কাঠের আদল দ্বারা বাদী কবিরের মাথায় স্বজোড়ে আঘাত করলে বাদীর মস্তিষ্কে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে সাথে সাথে বমি করে মাটিতে লুন্ঠিয়ে পড়ে যান। ২নং আসামী মোঃ মানিক তাহার হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দ্বারা কবিরের বাম হাতে আঘাত করলে বাদীর হাতে নীলা ফুলা থেতলানো জখম হয়। ৩নং আসামী সাদমান বাদীর প্যান্টের থাকা নগদ ৭০ হাজার টাকা জোড় করে লুট করে নিয়ে যায়। সকল বিবাদীরা বাদী কবিরের বুকে পিঠে পায়ে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে নীলা ফুলা থেতলানো জখম করে। বাদীর ডাক চিৎকারে স্থানীয় স্বাক্ষীগন এগিয়ে আসলে আসামীরা বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। আসামীগন যাওয়ার সময় বলে যায় যে, উক্ত বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে বাদীল ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে এবং লাশ গুম করে ফেলবে। বাদীর শারিরীক অবস্থা আশংকাজনক দেখে স্বাক্ষীগন তাকে স্থানীয় মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

ঘটনার সাক্ষী মোঃ হান্নান বলেন, কবির আমাকে বলেছিল এগিয়ে দিয়ে আসতে। আমি তাকে সামনে এগিয়ে দিয়ে পিছনে চলে আসি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক চিৎকার শুনতে পেয়ে সামনে গিয়ে দেখি আলী আকবর প্রধান, মানিক, সাদমান, শাহাদাৎ তাইজুল ইসলাম সহ আরো অজ্ঞাত ৫/৬ জন মিলে লাঠি সোটা দিয়ে কবিরকে মারপিট করছে। আমি ডাক চিৎকার দিলে আশপাশের লোক এগিয়ে আসে।

প্রত্যক্ষদর্শী আরিফ হোসেন, নুরুজ্জামান ও বাদী কবিরের স্ত্রী শিল্পী বলেন, অল্পের জন্য কবির বেঁচে গেছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মাথায়, হাতে পায়ে ও শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে বেধর মারপিট করেছে তারা। আমরা তাদের জিজ্ঞেস করার আমাদেরকেও মারপিট করতে চেয়েছে। আমরা প্রাণের ভয়ে সেখান থেকে চলে আসি।

বাদী কবির হোসেন বলেন, আমি ওয়াজ শুনে বাড়িতে আসার পথে সামছুন্নাহারের বাড়িতে হৈচৈ শুনে এগিয়ে যাই। ওখানে গিয়ে দেখি এলাকার মানুষ আলী আকবর মাস্টারকে সামছুন্নাহারের সাথে পরকীয়া সম্পর্কের তর্ক লেগেছে। পরে আমি চলে আসার সময় আলী আকবর মাস্টার আমাকে দেখে হুমকি ধামকি দিয়েছে। আর বলে আমি নাকি গ্রামের মানুষকে তার এ পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানিয়েছে। অথচ আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর আমাকে একা পেয়ে অনেক মারপিট করেছে। আমি জীবনের নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

এ ব্যাপারে কথা বলতে ওটারচর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আলী আকবর মাস্টারের বাড়ীতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিক কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

ফম/এমএমএ/

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম