রাজাপুরা মসজিদ কমপ্লেক্স স্থাপন কাজে হয়রানির অভিযোগ!

চাঁদপুর: চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্স স্থাপন কাজে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহীনির সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন মসজিদ কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট লোকজন ও এলাকাবাসী।

জানা গেছে, রাজাপুরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর আওতাধীন জামে মসজিদ, তালিমুল কোরআন নূরানী মাদ্রাসা ও মক্তব, রাজাপুরা ঈদগাঁহ ময়দান, সহীহ কোরআন ও হাদিস শিক্ষা কেন্দ্র, মৃত ব্যক্তির কাফন ও গোসল ঘর এবং নারী ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে মহিলা হিফজ খানার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

ওই সিদ্ধান্তের আলোকে ইছাপুরা মৌজার ৩২৪ ও ৩২৫ দাগে ২১ শতাংশ ভূমি ওয়াকফ করা হয় এবং ৮ শতাংশ ওয়াকফের প্রক্রিয়াধীন। এছাড়াও কমপ্লেক্সের সম্পত্তি ও আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে ৩৯ শতাংশ ভূমি ওয়াকফের লক্ষ্যে আলোচনা করা হচ্ছে। আর এই কমপ্লেক্স স্থাপনে সহযোগীতা করছেন এলাকার সর্বস্তরের লোকজন।

এর মধ্যে তালিমুল কোরআন নূরানী মাদ্রাসা ও মক্তব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সম্প্রতি এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে যখন কমপ্লেক্স স্থাপন কার্যক্রম শুরু করা হয়, তখন থেকেই সংশ্লিষ্টদের মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন, কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব মো. নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী।

তিনি বলেন, মিয়া বাড়ির সামনে আমাদের একটি শতবর্ষী মসজিদ রয়েছে। আমাদের পূর্ব পূরুষেরা (মিয়া বাড়ি ও পাটোয়ারী বাড়ির লোকজন) মসজিদটি স্থাপন করেছেন। ওই মসজিদের সম্পত্তি ৫ শতাংশ, কিন্তু মসজিদটি আছে পৌনে ২ শতাংশের মধ্যে। এতে জুমআ ও ধর্মীয় বিশেষ দিনে মুসুল্লীদের স্থান সংকুলান হয়না। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের সম্পত্তি চিহিৃত করে মসজিদ বর্ধিতকরণ কথা বলা হলেও মিয়াবাড়ির লোকজন কর্ণপাত করছেন না।

অবশেষে বেশ কয়েকটি বৈঠকের পর এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তমতে কমপ্লেক্স স্থাপন ও নির্মাণ কাজের সিদ্ধান্ত হয়। ওইসব বৈঠকেও মসজিদ কমিটি ও মিয়া বাড়ির লোকজনকে জানানো হয়। কিন্তু তারা ২/১ জন বৈঠকে আসলেও অন্যরা সাড়া দেয় নাই। যখন এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তমতে কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্দেশ্যে একটি পরিত্যক্ত ডোবা ভরাটের কাজ শুরু করি, তখন ওই বাড়ির মাহাবুবুল আলম মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে আমাদের হয়রানি শুরু করেন।

তিনি সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সু-দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,আমরা এসব হয়রানির প্রতিকার চাই। এই কমপ্লেক্সটি স্থাপন ও নির্মিত হলে আগামি ১/২’শ বছরেও এই এলাকায় নতুন করে মসজিদ ও মাদ্রাসা লাগবেনা। তাছাড়া এলাকার মধ্যবর্তী স্থান হওয়ায় মসজিদ ও মাদ্রাসায় আসতে সকলের সুবিধা হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ওখানে (মিয়া বাড়ির মসজিদ) জায়গা হয়না। তাই মসজিদের বাহিরের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ (মিয়া বাড়ির লোকজন) মসজিদের জায়গা ছেড়েও দেয়না, যার ফলে মসজিদ বড় (বৃদ্ধি) করাও যায়না। এরপর পুরো গ্রামের লোকজন মিলে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্তমতে নতুন করে মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।

তিনি বলেন, তখন দুই বাড়ির (মিয়া বাড়ি ও পাটোয়ারী বাড়ি) লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এখন শুনি তারাই আবার মামলা-মোকাদ্দমা দিছে। এখন, আমরা আপনাদের মাধ্যমে একটা সমাধান চাই। যেন এই মসজিদ কমপ্লেক্স দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারে। এই কমপ্লেক্স হলে পুরো এলাকার সকল মানুষ উপকৃত হবে।

একই বিষয়ে শাহাজান পাটোয়ারী বলেন, আমরা সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান করি। ওই বৈঠকে মাহবুবুল আলমও উপস্থিত ছিলেন। তারপরও সে মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণে বাঁধা দিচ্ছে। এসময় তিনি ও নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী অভিযোগ করে বলেন, তাঁর (মাহবুবুল আলম) এক মামাতো ভাই নাকি পুলিশের বড় কর্মকর্তা। সে ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে হুমকি-ধমকি দেয়।

এদিকে এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালীণ সময়ে মামলার বাদী মাহবুবুল আলমকে মসজিদ ও কমপ্লেক্স স্থলে না পাওয়ায় এবং তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও ওই নম্বরটি বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে কথা হয়, মিয়া বাড়ির বয়োবৃদ্ধ বাসিন্দা ও মিয়া বাড়ি জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার মো. শাহাদাত হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, মসজিদের জায়গা বুঝে না দেওয়ার কারণে পাটোয়ারী বাড়ির লোকজন নতুন মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তারা আমাদের ডাকছেন, কিন্তু আমাদের বাড়ির কেউ তাদের ডাকে সাড়া দেয় না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন আমাদের বাড়ির লোকজন সাড়া দেয় না, এটা-তো আমারও প্রশ্ন। তবে আমি তাদের মসজিদ নির্মাণের পক্ষে না, কিন্তু কমপ্লেক্স নির্মাণের পক্ষে। কমপ্লেক্সটি হলে সবার উপকার হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শহীদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, দুই পক্ষই বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। এর মধ্যে মাহাবুব ইউনিয়ন পরিষদের অভিযোগ দিয়েছে এবং এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখনো বসা হয়নি। বসলে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

টামটা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক দর্জির সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুনেছি থানায় অভিযোগ ও আদালতে ১৪৫ করা হয়েছে। যেহেতু থানায় ও আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেহেতু আদালতের বিচারাধীন বিষয়ে আমার হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপোষ-মিমাংসা কিংবা শান্তির লক্ষ্যে যদি তারা উভয় পক্ষ বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের জন্য আসেন, তাহলে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

ফম/এমএমএ/

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম