মেঘনায় লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবিতে ভাবী-ননদের মৃত্যু: আটক ৪, লঞ্চ জব্দ

চাঁদপুর: চাঁদপুরের মেঘনায় শরীয়তপুর থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহি লঞ্চ এমভি-লামিয়া নামক লঞ্চের ধাক্কায় যাত্রী বোঝাই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ভয়াবহ দুঘর্টনায় চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজেরাজেশ্বর এলাকার মো: আহাদ উল্লাহ্র স্ত্রী, ভাবী রাজিয়া খাতুন ওরফে রেজিয়া  (৬৫) ও পাশবর্তী শরীয়তপুর জেলার সখিপুর উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া এলাকার ছালেহ আহম্মেদের স্ত্রী, ননদ নাছিমা বেগম (৩৫)র’ মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে এই দুর্ঘনা ঘটে। নিহতরা চাঁদপুর শহরের রেলওয়ের মাদ্রাসা রোড এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে  অতিথি হিসেবে আসছিলেন।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে,চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে যাত্রীবাহি লঞ্চ এমভি-লামিয়া না থামিয়ে স্থানীয় ২জন লঞ্চ সুভার ভাইজার শওকত বেপারী ও রুহুল আমিন হাওলাদারের সাথে পরামর্শ ক্রমে নৌ-টার্মিনালের দায়িত্বরত টিআই শাহ্ আলমের সাথে অবৈধ পন্থায় যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবত পুরাতন নৌ-টার্মিনালে লঞ্চটি ভিড়ায়ে সেখানে চাঁদপুরের যাত্রী নামিয়ে ঢাকার উদ্দের্শে চলে যায়। এ কারন হিসাবে এলাকাবাসী ও যাত্রীরা জানান,ডামুড্যা থেকে আসা লঞ্চ এমভি-লামিয়া লঞ্চের যাত্রীরা চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে বিরতী কালে নেমে অন্য ভাল মানের লঞ্চে ঢাকা চলে যায়, বিধায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ পুরাতন ৩নং কয়লাঘাট এলাকার নৌ-টার্মিনালে কোন অনুমতি ছাড়া অবস্থান নিয়ে এভাবে যাত্রী উঠানামার কাজ করে যাচ্ছিল।

এ ব্যাপারে সুভার ভাইজার শওকত বেপারী ও রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, লঞ্চটি প্রতিদিন পুরাতন টার্মিনালে ভিড়ে না। মাঝে মধ্যে ভিড়ে। এটার সাথে আমরা জড়িত না। এ বিষয়টি এমভি-লামিয়া লঞ্চ কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার। তারা সেখানে যাত্রী উঠায় ও নামায়। এ ব্যাপারে টিআই শাহ্ আলমের সাথে কথা বললে তিনি বিষয়টি সর্ম্পকে কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে বন্দর কর্মকর্তা একেএম কায়সারুল ইসলাম পুরাতন টার্মিনালে লঞ্চ এমভি-লামিয়া ভিড়ানোর কথা স্বীকার করে বলে তারা প্রতিদিন এ ভাবে লঞ্চ থেকে পুরাতন টার্মিনালে যাত্রী নামান বলে আজ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

চাঁদপুর নৌ-থানার পুলিশ জানান, দুর্ঘটনাটি ঘটিয়ে লঞ্চ এমভি-লামিয়া পালিয়ে যাওয়ার সময় চাঁদপুর নৌ- সীমানার আমিরাবাদ এলাকা থেকে মহনপুর ফাঁড়ির পুলিশ লঞ্চটিকে জব্দ করে। পরে নৌ-থানার উপ-পরিদর্শক মো: তোতা মিয়া সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যসহ মহনপুর থেকে এমভি-লামিয়া লঞ্চকে জব্দ করে আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় চাঁদপুর নৌ-থানায় নিয়ে আসে।

এই সময় লঞ্চ- লামিয়া থেকে নৌ-পুলিশ লঞ্চের মাস্টার মো: মতিউর রহমান(৪৩),ড্রাইভার মো: মোস্তফা মিয়া(৫৯),কেরানী মো: মজিবুর রহমান(৭০) ও সুকানী মো: আবু জাহিদ(২৪)সহ ৪জনকে আটক করে ওেনৗ-থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ দুঘর্টনার পর দুপুর থেকে চাঁদপুরের কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস মেঘনা নদীর দূঘর্টনাস্থলে উদ্বার তৎপরতা অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ নাছিমা বেগমের পিতা ফয়জুর রহমান সরকার বাদী হয়ে ও চাঁদপুর নৌ- টার্মিনালের বন্দর কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ১টিসহ ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে,বলে বন্দর কর্মকর্তা একেএম কায়সারুল ইসলাম জানিয়েছেন।

চাঁদপুরের মেঘনায় শুক্রবার দুপুর ১২টা ১০মিনিটে মোহনায় এমভি লামিয়া নামক লঞ্চের ধাক্কায় খেয়াঘাটের নৌকা ডুবিতে নাছিমা বেগম নামে নারী নিখোঁজ রয়েছে। তবে ওই নৌকাতে থাকা ৯জন যাত্রীর মধ্যে ৮জন সাঁতরে উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে মারাত্বক আহত রাজিয়া বেগম(৬৫)কে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে বিকেল ৩টায় দাউদকান্দি এলাকায় গেলে রেজিয়া বেগম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পরে তার লাশ রাত ৭টায় চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে নিয়ে আসা হয়।

চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা একেএম কায়সারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শরীয়তপুর ডামুড্যা থেকে এমভি লামিয়া নামের লঞ্চটি ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে চাঁদপুরে আসছিলেন। ঘটনাস্থলে আসলে রাজরাজেশ^র থেকে আসা ট্রলার থেকে যাত্রী নামিয়ে শহরের দিকে আসতে থাকা খেয়াঘাটের নৌকার সাথে এমভি লামিয়া লঞ্চের ধাক্কা লাগে। নৌকাটি উল্টেগিয়ে ৯ জনযাত্রী ডুবে যায়। এ সময় ৮জন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও নাছিমা নামের ওই নারী এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, লঞ্চটি দুর্ঘটনার পর চাঁদপুর ঘাট হয়ে মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ লঞ্চঘাট পর্যন্ত চলে যায়। সেখান থেকে মহনপুর পুলিশ ফাড়ি ওই লঞ্চটিকে আটক করে। সেখান থেকে পরবর্তীতে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে। এই ঘটনায় চাঁদপুর নৌ থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে নিখোঁজ নারীকে উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত ভাবে করে যাচ্ছে কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল ও চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ডুবুরি দল ।

ফম/এমএমএ/