মেঘনায় বেহুন্দি জালে ধ্বংস হচ্ছে ৩৫ প্রজাতির ছোট মাছ

চাঁদপুর : চাঁদপুর নৌ সীমানার প্রায় ৯০ কিলোমিটার মেঘনা নদীতে শীত মৌসুমে অসাধু জেলেরা বেহুন্দি ও মশারি জাল দিয়ে ছোট প্রজাতির মাছ ধরছে। এতে এই অঞ্চলের দেশীয় প্রায় ৩৫ প্রজাতির মাছ ধ্বংস হচ্ছে। আবার অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে। শুধুমাত্র জেলার আভ্যন্তরের জেলে নয়, পাশবর্তী শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার মৌসুমী জেলেরা রাতে চাঁদপুর নৌ সীমানায় এসে বেলে মাছের নাম করে ছোট মাছ আহরণ করে নিজ এলাকায় নিয়ে বিক্রি করছেন। অল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে বিশাল নদী এলাকা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে থাকছে ট্রাস্কফোর্সের। মৎস্য বিভাগ অভিযান করলেও কোন সুফল আসছে না। বরং শহরের পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব ছোট মাছ।

জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জলাশয় অর্থাৎ ডোবা, নালা, খাল, বিলে ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছের মধ্যে ছোট মাছ রয়েছে ১৪৩ প্রজাতির। পরিণত বয়সে এসব মাছ ২৫ সে.মি বা ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। আর গত দুই থেকে তিন দশক আগেও চাঁদপুরের পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীতে দেশীয় প্রজাতির যেসব মাছ পাওয়া যেত, তা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।

মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বর্তমানে মশারি জাল কিংবা বেহুন্দি জালে ধরা হচ্ছে ইলিশের পোনা জাটকা, চিংড়ি, পাঙ্গাস, বেলে, পোয়া, সিলন, ঘাউড়া, সাদা চেওয়া, লাল চেওয়া, পুঁটি, ভেদা, গুইল্লা টেংরা, লাইট্ট টেংরা, কাজলি, বাতাসি, আইড়, ডেলা (সুন্দরী), রিটা, বোয়াল, চাপিলা, কাচকি, চান্দা, রিটা, তপসে, রানী, বুইত্তা, বাইম, নাউ বেলে, চিতল, কোরাল, বুতি বেলে, কুলি, মলা, বাডা ও কাইকা ইত্যাদি।

সরেজমিন চাঁদপুর সদরের মেঘনা পাড়ের বিষ্ণুপুর, কল্যাণপুর, তরপুরচন্ডী আনন্দ বাজার, পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, বহরিয়া, হরিণা, আখনের হাট এলাকায় বেহুন্দি ও মশারি জাল দিয়ে ছোট মাছ ধরতে বেশী দেখাগেছে। গত এক মাসের বেশী সময় ধরে জেলেরা চাঁদপুর শহরের পুরাণ বাজার, পূর্ব শ্রীরামদী, রঘুনাথপুর, নতুন বাজার, বড় স্টেশন, যমুনা রোড, মাদ্রাসা রোড, স্টেডিয়াম রোড, ট্রাক রোড, গুনরাজদী, রহমতপুর আবাসিক এলাকা, বঙ্গবন্ধু সড়ক, তরপুরচন্ডী, ওয়ারলেছ বাজার এলাকায় দিন ও রাতে প্রকাশ্যে এসব ছোট মাছ ১৫০ থেকে ২০০টাকা কেজি ধরে বিক্রি করছেন।

চাঁদপুর শহরের পুরাণ বাজার এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান জানান, প্রতিদিন সকাল হলেই বাড়িতে ছোট প্রজাতির মাছ নিয়ে আসে জেলেরা। তবে বেলে মাছের পোনা বলে বিক্রি করলেও অনেক প্রজাতির মাছ এর মধ্যে থাকে। প্রশাসন এসব জেলেদের নিয়ন্ত্রণ না করলে আরো অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি হবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্যজীবী নেতা মো. তছলিম বেপারী জানান, শীত মৌসুম আসলেই কিছু জেলে ছোট মাছ ধ্বংস করার জন্য নেমে পড়ে। এর মধ্যে জাটকা, পাঙ্গাস, চিংড়ি, পোয়া, চেওয়া মাছ বেশী ধরা হচ্ছে। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র চাঁদপুরেই নয়। জেলার বাহিরে অর্থাৎ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থেকে চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ^র ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড হয়ে কিছু জেলে এবং মুন্সীগঞ্জ থেকে কিছু জেলে মতলব উত্তর এলাকায় প্রবেশ করে। প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত তারা ছোট প্রজাতির মাছগুলো ধরে নিয়ে যায়। আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।

হাইমচর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব রশিদ জানান, হাইমচর মেঘনা নদীতে বেশী ধরা হয় জাটকা। এসব জাটকা ধরার জন্য ব্যবহার হয় অবৈধ কারেন্টজাল। কারেন্টজাল ধরার জন্য আমরা নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তবে সদর ও মতলব উত্তর উপজেলার নদীতে বেহুন্দি জাল বেশী। সেখানে মৎস্য বিভাগ অভিযান করছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, শীত মৌসুমে আমাদের অভিযান চলমান থাকে। নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড এর সাথে নিয়ে যৌথ অভিযান করা হচ্ছে। চলমান বিশেষ কম্বিং অভিযানে ২৩ ও ২৪ জানুয়ারী সদর এলাকার মেঘনা নদী থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজার মিটার কারেন্টজাল, ১টি বেহুন্দি ও ৩টি মশারি জাল জব্দ করা হয়। একই সময় জব্দ করা হয় ৬৫ কেজি জাটকা। গত একমাসে বহু বেহুন্দি জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, ছোট প্রজাতির মাছ ধরা সব সময় নিষিদ্ধ। আমাদের নদী উপকুলীয় উপজেলার কর্মকর্তারা নিয়মিত অভিযান করছেন। আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ। অভিযান অব্যাহত থাকলে এসব জেলেরা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম