মেঘনায় জাহাজে খুন হওয়া আমিনুল পরিবারে শুধুই হতাশা

চাঁদপুর: মেঘনায় সারবাহী এমভি বাখেরাহ জাহাজে ৭ জনের সাথে খুন হন সুকানি আমিনুল মুন্সী (৪০)। ৩ সন্তানের জনক তিনি। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তার পরিবারে আছে স্ত্রী ও নাবালক দুই সন্তান। তার মৃত্যুতে পরিবারের উপার্জনক্ষম আর কেউ রইল না। শুধুই তাই নয়, নিজের বসতঘর সংস্কারের জন্য কিছুদিন আগে ভেঙে কাজের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। কিন্তু সেই ঘর আর তোলা হলো না। এই পরিবারের সামনে শুধুই হতাশা আর অন্ধকার। বর্তমানে তারা পাশে অন্য লোকের ঘরে আশ্রয়ে আছেন এবং মাথা গোজার ঠাঁইও রইলোনা তাদের।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে আমিনুল মুন্সির মরদেহ গ্রহণ করার জন্য আসা বোন জামাতা কাজী তুসার এসব তথ্য জানান।

আমিনুল মুন্সী নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার ইটনা ইউনিয়নের পাঙ্খারচর গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে। তিনি ওই জাহাজে চুকানি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

তিনি বলেন, সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় ফেসবুক দেখে জানতে পারেছি ওই জাহাজে ডাকাতি হয়েছে এবং জাহাজের সকলকে হত্যা করা হয়েছে। খবর পেয়েই আমি এবং আমিনুল মুন্সীর বড় ভাই মো. হুমায়ুন চাঁদপুরে চরে আসি। এখানে হাসপাতালের দায়িত্বরত লোকদের সাথে কথা বলে আমিনুলের মরদেহ শনাক্ত করি।

কাজী তুসার বলেন, আমিনুলের স্ত্রীর নাম পপি বেগম। বড় ছেলে হোসাইন বয়স ৪ বছর। ছোট ছেলে হাসানের বয়স প্রায় দেড় বছর। মেয়ে প্রিয়া বড় তার বিয়ে হয়েছে। তার আয়ে চলতো সংসার। কিন্তু এখন এই পরিবারের জন্য আয়ের পথ বন্ধ হয়েগেলো।

তিনি বলেন, এই ধরণের মর্মান্তিক হত্যাকান্ড এই নৌ রুটে খুবই কম। আমরা আর এসব ঘটনা দেখতে চাই না। যারা এই খুনের ঘটনায় জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

আমিনুলের স্ত্রী সাথে অবুঝ দুই শিশু পুত্র। ছবি: সংগ্রহীত।

আমিনুলের বড় ভাই হুমায়ুন বলেন, আমরা জানতে পারে জাহাজের লোকদের হত্যা করা হয়েছে। কয়জনকে তা জানতে পারিনি। হাসপাতালের মর্গে এসে দেখি আমার ভাইয়ের লাশ। আমরা এই হত্যার বিচার দাবী করছি এবং আইনগত ব্যবস্থাও নিব। এখানে এসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলেছি।

তিনি বলেন, আমার ভাই এমন মর্মান্তিক হত্যার শিকার হবে কখনো চিন্তাও করিনি। আমিনুল খুবই বিনয়ী ছিলো। তার অবুঝ দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে আমাদের খুবই সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। এই ক্ষেত্রে জাহাজ কোম্পানীর পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।

এদিকে বিকেলে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে মরদেহ হস্তান্তরকালে প্রত্যেক পরিবারের অভিভাবকদের হাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার এবং নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে চেক প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন ও নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান উপস্থিত থেকে এসব চেক হস্তান্তর করেন।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম