মাটি ছাড়াই সারা বছর চাষে আফ্রিকায় যা করা হচ্ছে

বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাদুগুতে আফ্রিকার কয়েকটি দেশের চাষি মাটি ছাড়াই চাষের কাজ শিখছেন।

বেড়ে চলা জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে হাইড্রোপনিক্স চাবিকাঠি হতে পারে। ঋতুর ওপর নির্ভর না করে সারাবছর ধরে শাকসবজির জোগান নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে আফ্রিকায়।

বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাদুগুতে আফ্রিকার কয়েকটি দেশের চাষি মাটি ছাড়াই চাষের কাজ শিখছেন। সবুজ বরবটি ও টমেটো চাষ করতে হলে পানি ও নারকেলের কয়ার বা ছোবড়াই যথেষ্ট।

আজারাতু সানোগো লক্ষ্য করেন, যে বছরের কিছু সময়ে শহরের বাজারে শাকসবজির সরবরাহ কমে যায়। কয়েক বছর আগেই তিনি হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি কাজে লাগাতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘এখানকার চাষিরা চিরকাল চিরায়ত পদ্ধতিতে কাজ করে এসেছেন। কিন্তু মাটির অবস্থা বেশ খারাপ এবং ফসলের পরিমাণও কমে চলেছে। কয়েকজন চাষি এমনকি নিজস্ব চাহিদাও আর পূরণ করতে পারেন না। বিক্রিবাটার তো প্রশ্নই নেই। আমার মতে, এই পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে ভালো। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে আরও বেশি উৎপাদন করা যায়।”
সাহেল অঞ্চলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ৩০ শতাশ কমে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। সেই প্রবণতার মোকাবিলা করতে আজারাতু আন্তর্জাতিক সহায়তায় এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছেন। তিনি অন্যদের কাছেও নিজের জ্ঞান বিতরণ করতে চান।

কোর্স ভরে গেছে। সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে মালি, চাদ ও কঙ্গোর মতো প্রতিবেশী দেশেও এই প্রশিক্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। অংশগ্রহণকারীদের ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত স্বার্থও রয়েছে। অংশগ্রহণকারী হিসেবে এভেলিন দাহানি বলেন, ‘‘আমি এই কোর্সে অংশ নিচ্ছি, কারণ, বছরের যে কোনো সময়ে আমি নিজের ও পরিবারের জন্য অরগ্যানিক খাদ্য উৎপাদন করতে চাই। হাইড্রোপনিক্সের ক্ষেত্রে ঋতুর ওপর নির্ভর করতে হয় না। সারা বছরই ফসল তোলা যায়।”

হাইড্রোপনিক্সের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা আরও দ্রুত বড় শাকসবজি ফলনের কৌশল শিখতে পারেন। বিশেষ এই প্রশিক্ষণের জন্য তাদের ১০ ইউরোর মতো মাসুল গুনতে হয়। অনেকে বেশি টাকা দিয়ে আরও কোর্সে অংশ নেন। বাদুহা কোম্পানির আজারাতু সানোগো বলেন, ‘‘আমরা চার মাস ধরে সম্পূর্ণ কোর্স আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ বীজ বপন থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত মোটামুটি চার মাস সময় লাগে। এভাবে উৎপাদনের সব পর্যায় সম্পর্কে জানা যায়।”

তাত্ত্বিক জ্ঞান আয়ত্ত করা ও হাতেনাতে কাজ শেখা দুটোই জরুরি। মাটির বিকল্প হিসেবে মাটির পেলেট, নারকেলের তন্তু বা অরগ্যানিক সারের মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা যায়। গ্রিনহাউসের মধ্যে এমনকি বর্ষাকালেও টমেটো গজায়। নিয়মিত সেগুলো তোলার সুযোগও রয়েছে।

অদূর ভবিষ্যতেই টমেটো, পিয়াজ ও মরিচ এক অরগ্যানিক স্টোরে পাঠানো হবে। এক স্থানীয় সমবায় পরিবেশ সচেতন ক্রেতাদের কাছে এমন শাকসবজি বিক্রি করে। বায়োপ্রোটেক্ট প্রকল্পের বাণিজ্যিক প্রধান মুসা উয়েদ্রাওগো বলেন, ‘‘অরগ্যানিক চাষিরাও যাতে তাদের কাজের জন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক পান, তা নিশ্চিত করতে অরগ্যানিক শাকসবজির জন্য খুচরা ব্যবসার চ্যানেলের প্রয়োজন। চাষিরা শুধু অরগ্যানিক প্রক্রিয়া ও পণ্য ব্যবহার করে পরিবেশ সংরক্ষণ করছেন না, তারা নিজেদের ও ক্রেতাদের স্বাস্থ্যও রক্ষা করছেন।”

কিন্তু অনেক শহরবাসীর জন্য অরগ্যানিক খাবারের দাম অত্যন্ত বেশি। সম্ভব হলে তারা এখনো নিজেরাই শাকসবজির চাষ করেন। শহরের একটা ছোট এলাকা সেই লক্ষ্যে ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু এমন জায়গা কমে চলেছে বলে পুরসভা আশঙ্কা করছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী দশ বছরে শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

তবে নতুন এই চাষের প্রক্রিয়ার জন্য অরগ্যানিক সারের জোগান দিয়ে জঞ্জাল পরিষেবা কোম্পানিগুরোরও মুনাফা হতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ক্রিস্টফ উদ্রাওগো মনে করেন, ‘‘হাইড্রোপনিক ফার্মিং বুরকিনা ফাসোর জন্য অনেক সুবিধা বয়ে আনছে। বিশেষ করে আমাদের বর্তমান সমস্যাগুলি মেটাতে আমরা উৎপাদন আরও বাড়াতে পারি এবং ফসলে আরও বৈচিত্র্য আনতে পারি। একই সঙ্গে শহরের অনেক জঞ্জাল পুনর্ব্যবহারের সুযোগও রয়েছে। ফলে শহর আরও পরিষ্কার ও সবুজ হয়ে উঠতে পারে।”

এই উদ্যোগের আওতায় ২০টি গ্রামে কোর্স চালু হয়েছে। আজারাতু সানোগো সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক ‘ভার্চুয়াল সমবায়’ সৃষ্টি করেছেন। এভাবে বুরকিনা ফাসোর আরও অনেক অংশে স্বাস্থ্যকর কৃষিপণ্য মানুষের নাগালে নিয়ে আসা হচ্ছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে

ফোকাস মোহনা.কম