মনুকে হারিয়ে মায়ের কান্না

শাহরাস্তি (চাঁদপুর): “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” স্বামী বিবেকানন্দ’র কবিতায় প্রাণীর প্রতি মমতাকে ঈশ্বরের সেবার কথা বলা হলেও এটি ছিল জীবের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে স্রষ্টার সান্নিধ্যে পৌঁছার একটি পথমাত্র। কিন্তু বাস্তবিক জীবনে পোষা প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ যদি সন্তানকেও ছাড়িয়ে যায় সে প্রেমের তুলনা হয় কার সাথে? পোষা বিড়ালের প্রতি ভালোবাসার এমন দৃশ্য ধরা পড়ে রোববার সন্ধ্যায় চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের সামনে।

জানা যায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মোঃ মিজানুর রহমান জীবিকার প্রয়োজনে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন শাহরাস্তি উপজেলার কালিয়াপাড়া বাজারে। স্ত্রী বাসনা বেগম, ছেলে আয়মান আর তাদের পোষা বিড়াল মনু ও মিনু। ৬ মাস আগ থেকে বাসনা বেগমের সন্তান হয়েই বেড়ে চলছে মনু। কিছুদিন পর সাথে যোগ হয় মিনু।

নিজ সন্তানের মতো খাওয়া, ঘুমানো, গোসল করাসহ দেখভাল করতেন তাদের। বিড়বিড় করে কথা বলতেন, বিড়ালরাও বুঝতে পারতো বাসনা বেগমের ভাষা। গত শনিবার রাতের খাবার খেয়ে হঠাৎ করেই মনু অসুস্থ হয়ে পড়ে। সময় বাড়ার সাথে সাথে মনুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। বিভিন্ন টোটকা চিকিৎসায় মনু সুস্থ হবার কোন লক্ষন না দেখে রোববার সন্ধ্যায় বাসনা বেগম ছুটে যান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে। তিনি সেখানে কাউকে না পেয়ে মনুকে নিয়ে যান অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ দুলাল চন্দ্র ঘোষের কাছে। পরিক্ষা-নীরিক্ষার পর বিড়ালটিকে মৃত ঘোষণা করেন ডাঃ ঘোষ। আর এতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বাসনা বেগম। তার কান্নার শব্দে আশ পাশের লোকজন ছুটে আসে। দির্ঘক্ষন মনুকে বুকে জড়িয়ে রাখার পরও কেউ তাঁর কোল থেকে নামাতে পারছেন না মৃত বিড়ালটিকে।

বাসনা বেগমের স্বামী মিজানুর রহমান জানান, তিনি আদর করে বিড়াল দুটোকে লালন পালন করে আসছেন। বিড়াল গুলো তার কথা শুনতো ও বুঝতে পারতো। তিনি জানান, বর্তমানে মিনুও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
বাসনা বেগমের ছেলে আয়মান জানান, তার মা অনেক আদর করতেন মনু ও মিনুকে। মনু মারা যাওয়ার মা খুব কষ্ট পেয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ দুলাল চন্দ্র ঘোষ জানান, খাবারে বিষক্রিয়ার কারণে বিড়ালটি মারা গেছে।
ফম/এমএমএ/

ফয়েজ আহমেদ | ফোকাস মোহনা.কম