—এস ডি সুব্রত
” ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যমের দুয়ারে পড়ল কাটা।
যমুনা দেয় জমকে ফোঁটা
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।।”
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় উৎসব।এ উৎসবকে ,ভাইদুজ ও ভাইটিকা নামেও অভিহিত করা হয়।মানব সভ্যতার ইতিহাসের সাথে সংস্কৃতির রয়েছে এক অপূর্ব যোগসূত্র। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নানাবিধ আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে ভাই ফোঁটা। পাঁচদিন ব্যাপী দীপাবলিউৎসবের শেষ দিন পালিত ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। ভাই ফোঁটা কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে কালী পূজার দুই দিন পর অনুষ্ঠিত হয়।এই উৎসবকে কেউ যম দ্বিতীয়াও বলে।
ভাই ফোঁটার প্রচলন নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত রয়েছে। সবচেয়ে বেশী যে মতবাদ প্রচলিত আছে তা হল যম আর যমুনার কাহিনী।মত আছে দেবতা সূর্য আর তার স্ত্রী সংজ্ঞার দুই সন্তান। পুত্র যম আর কন্যা যমুনা।সূর্যের প্রবল তেজ সহ্য করতে না পেরে সংজ্ঞা পৃথিবীতে ফিরে যান।আর যাওয়ার সময় তিনি রেখে যান তার ছায়া যা কিনা হুবুহু তার মতো দেখতে।যাতে সূর্যের মনে হয় যে সংঞ্জা তার কাছেই আছে। ওদিকে ছায়া ক্রমেই নিষ্ঠুর সৎ মা হয়ে উঠে। এবং সূর্য কে বশ করে যম ও যমুনা কে স্বর্গ থেকে তাড়িয়ে দেয়।দিন অতিবাহিত হয়।এক সময় যমুনার বিয়ে হয়। বিয়ে হয়ে গেলেও ভাইয়ের জন্য যমুনার মন খারাপ হয়। ভাইয়েরও যমুনার কথা মনে পড়ে।ভাই বোনকে দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দীপাবলির দুদিন পর যম যখন দিদির বাড়ি যায় তখন দেখে দিদি যমের জন্য বড় ধরনের অভ্যর্থনার আয়োজন করেছে।যম আবেগ আপ্লুত হয়ে তখন দিদি কে বলে ভাইয়ের কাছ থেকে কি উপহার চাই তোর? যমুনা তখন তার ভাই কে বলে এই দিনটি তে পৃথিবীর সকল ভাই যেন তাদের বোন বা দিদি কে স্মরন করে। এবং পৃথিবীর সকল বোন যেন ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে এই দিনে। সেই থেকে ভাই ফোঁটার প্রচলন শুরু হয়।
অন্য একটি মতে অত্যাচারী নরকাসুরকে যুদ্ধে পরাজিত করে শ্রীকৃষ্ণ যখন অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসেন তখন শ্রীকৃষ্ণ কে অক্ষত অবস্থায় দেখে আনন্দিত শুভদ্রা ভাইয়ের কপালে পবিত্র তিলক পরিয়ে দিয়েছিল। সেই থেকে ভাই ফোঁটার শুরু।
ভাই ফোঁটার দিন বোনেরা তার ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দেয়, কপালে তিলক দেয় এবং ভাইয়ের দীর্ঘ জীবন কামনা করে।ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায় ।ভাইও বোনকে উপহার দেয় । অনেকে ভাইয়ের মাথায় ধান দুর্বা দেয় এবং এই সময় শঙ্খ বাজানো হয় এবং নারীরা উলুধ্বনি দেয়। ভাই ফোঁটা র প্রচলন বা উদ্ভব নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু ভাই বোনের পবিত্র সম্পর্কের বুনট শক্তহাতে ধরে রাখতে বোনদের এই প্রচেষ্টা ও আন্তরিক অনুভূতি নিয়ে কোন মতভেদ থাকতে পারে না।ভাই বোনের সম্পর্ক সুদৃঢ় করার এই রীতি টিকে থাকুক যুগ যুগ ধরে। মানব সভ্যতার পথে ভ্রাতৃত্বের অমোঘ মায়ায় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া চলুক সুন্দরের সাথে । ভাই বোনের নিবিড় বন্ধন সুদৃঢ় হোক । সুদৃঢ় মানুষে মানুষে বন্ধন , জাতিতে জাতিতে বন্ধন । মানুষ পরিচিত হোক মানুষ হিসেবে , ভাল মানুষ হিসেবে ,আলোর পথের যাত্রী হিসেবে ।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।
০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ ।
subratadassulla@gmail.com