ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দ তিন নদীর মোহনা

ফাইল ছবি।

চাঁদপুর :  স্থলে ও জলে ভরপুর চাঁদপুর। নদী আর ইলিশ এই জেলার সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়িয়েছে দেশ-বিদেশে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রূপালী ইলিশের স্বাদ নিতে অনেকেই ছুটে আসেন এই শহরে। বিনোদন কেন্দ্র বলতে শহরের মোলহেড তিন নদীর মোহনা। যে কারণে ইলিশের স্বাদ নিতে এসে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসেন পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল তিন নদীর মোহনায়। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য না দেখলে চাঁদপুর ভ্রমণই অনেকটা বৃথা। তিন নদীর মোহনার বর্তমান নাম দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র। তবে এই স্থানটিকে আরো নান্দনিক করে গড় তোলার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম বিভাগ। আসুন আমরা তিন নদীর মোহনা ভ্রমণ পিপাসুর কেন এত আকৃষ্ট করে জেনে নেই………।

চাঁদপুরকে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে ‘ইলিশের বাড়ী চাঁদপুর’ নামে। রাজধানী থেকে চাঁদপুরের দুরুত্ব ১৬৬ কিলোমিটার। নদী পথে আরো কম হবে। যে কারণে ভ্রমান পিপাসু লোকজন চাঁদপুরে বিলাস বহুল লঞ্চে এই জেলায় বেশী আসেন। জেলার প্রায় সিকি কোটিরও বেশী মানুষের জন্য একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হচ্ছে তিন নদীর মোহনা। এছাড়াও ব্যাক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পার্ক গড়ে উঠেছে। তবে সংখ্যায় খুবই কম। শুধমাত্র ভমনই নয়, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তাও অনেকটা শহর কেন্দ্রীক। উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে অনেক মনোরম এলাকা থাকলেও ভ্রমন পিপাসুদের জন্য সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে গড়ে উঠেনি।

জেলার শাহরাস্তি উপজেলার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদ। কাজের ফাঁকে সময় পেলেও তিনি ছুটে আসেন তিন নদীর মোহনায়। তিনি জানান, প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য আসি। এখানে আসার ভলোলাগাটা অসাধারণ। মনের মধ্যে অনেকটা শান্তির পরশ বয়ে যায়। এখানকার নিরিবিলি পরিবেশে প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে আসলে আরো ভাল সময় কাটে। স্পীডবোট, নৌকা ও ট্রলার দিয়ে নদী ভ্রমনটাও হয়। রাতের দৃশ্য আরো চমৎকার। কারণ পূর্ণিমার চাঁদের আলো যখন পানিতে পড়ে, তখনকার পানির রূপালী দৃশ্য যে কোন মানুষের মনে দাগ কাটবে।

ভ্রমন করতে পছন্দ করেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রিফাত কান্দি সেন। তিনি বলেন, পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল হচ্ছে তিন নদীর মোহনা। মোহনার দৃশ্য যে কোন ভ্রমণ পিপাসু ব্যাক্তিকে আকৃষ্ট করে। কারণ এই স্থানের সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা ও রাতে দৃশ্য ভিন্ন ভিন্ন। এক সময় একেক রুপ ধারণ করে। বিশেষ করে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায় খুবই চমৎকার করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শীতকালীন পরিবেশ, বর্ষা মৌসুম বৃষ্টির সময়টা নানাভাবে উপভোগ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বিশেষ করে সাঁতার না জানা ব্যাক্তিদের নদী ভ্রমনের সময় সতর্ক থাকতে হয়।

শহরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. আলম জানান, মূলত তিন নদীর মোহনা অনেক দূর্ঘটনারও ইতিহাস হয়ে আছে। বিশেষ করে নৌ দুর্ঘটনা। তিন নদীর মিলনস্থলটিতে পানির যে ঘুর্ণিস্রোত তৈরী হয়, তা খুবই ভয়ংকর। অনেকে এটাকে রহস্যময় মৃত্যুকুপও বলেন। কারণ ছোট খাট বহু নৌযান এখানে তলিয়েগেছে। অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন। এর রহস্য কেউ বলতে পারে না। মোহনায় বসে অনেকেই এর দৃশ্য খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে পারেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পানির ঘুর্ণায়ন বড় আকার ধারণ করে।

কবি ও আইনজীবী রফিকুজ্জামান রণি জানান, তিন নদীর মিলনস্থল চাঁদপুরের বড় স্টেশন মোলহেড অত্যন্ত নান্দনিক একটি পর্যটন এলাকা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে ছুটে আসে সৌন্দর্যের টানে। নদীর উচ্ছলতা ও ছায়াশীতল বৃক্ষের হাতছানির মধ্যে নানা রকম সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। কারণ, দেশ-বিদেশের বিচিত্র পরিবেশের মানুষ এখানে এসে ভিড় জমায় এবং এই স্থানটিকে সমৃদ্ধ করে তোলে।

তিন নদীর মোহনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ভ্রমণ পিপাসুরা রাজধানী ঢাকা থেকে লঞ্চে আরামদায়ক ভ্রমণ করে আসতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে লঞ্চের ভাড়া গুনতে হবে কমপক্ষে জনপ্রতি সাড়ে ৩শ’ টাকা। আর কেবিনে আসলে ৫শ’ থেকে ১৫০০টাকা। লঞ্চঘাট থেকে ১০ থেকে ২০টাকায় অটোরিকশা ও রিকশায় তিন নদীর মোহনায় আসতে পারবেন।

এছাড়াও তরুণরা বাইকে চড়ে আসতে পারেন। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল। পদ্মা এক্সপ্রেস নামে গণপরিবহন আছে। সায়দাবাদ থেকে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে আসতে সময় লাগবে ৫-৬ঘন্টা। আর কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফেনি থেকে ট্রেনে আসা যায়। চাঁদপুর শহরে থাকার জন্য ছোট বড় ১০-১৫টি আবাসিক হোটেল আছে। ইলিশসহ বিভিন্ন খাবারের জন্য বেশ কিছু রেষ্টুরেন্ট আছে। তাজা ইলিশ খেতে চাইলে রাত ১০টার মধ্যে তিন নদীর মোহনা এলাকায় কিছু হোটেল আছে। সেখানে মাছঘাট থেকে তাজা ইলিশ কিনে ভেজে কিংবা অন্য কোন রেসিপিতে খেতে পারবেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই চমৎকার। কারণ দিন ও রাতে টহল পুলিশ এবং কমিউিনিটি পুলিশ দায়িত্ব পালন করে।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম