চাঁদপুর : চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ সাখুয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবিদ গাজীর বাড়ীতে প্রবাসী আব্দুর রহমান গাজী (কালু)’র স্ত্রী হীরা বেগমের (২৫) বিরুদ্ধে একই বাড়ীর মিরাজ হোসেন গাজী (১১) নামে শিশুকে মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দিনগত রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে অভিযুক্ত হীরা বেগমের বসতঘরের সামনে এই অমানবিক ঘটনা ঘটে। শিশু মিরাজ ওই বাড়ীর বেলায়েত হোসেন গাজীর একমাত্র ছেলে।
এই ঘটনায় ওই রাতেই বেলায়েত হোসেন গাজী চাঁদপুর সদর মডেল থানায় প্রবাসীর স্ত্রী হীরা বেগম ও তার শ্বশুর অলি উল্যাহ গাজীকে বিবাদী করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ঘটনার বিবরণ ও অভিযোগের বর্ননা থেকে জানাগেছে, হত্যা চেষ্টার শিকার শিশু মিরাজ হোসেন এবং হীরা বেগমের ছেলে রাফির সাথে মঙ্গলবার দুপুরে গোসল করতে গিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। মিরাজ পুকুরে গোসল করতে নামলে রাফি তার গামছার মধ্যে মাটি দিয়ে নষ্ট করে এবং গামছার ভিতরে ৫০টাকা লুকিয়ে রেখে চোর বানানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এই ঘটনা মিরাজের সাথের অন্য শিশুরা দেখে। গোসল শেষে মিরাজ ওপরে উঠলে রাফি দৌড়ে চলে যাওয়ার সময় গাছের শিকরের সাথে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় মিরাজ তাকে লাথি মারে। ওই অবস্থায় রাফিকে তার চাচা তুলে নিয়ে আসে। এরপর রাফির চাচা উভয় শিশুকে শান্ত করে এবং অভিভাবকদের সাথে কথা বলে ঘটনাটি সমাধান করে।
মিরাজের বাবা বেলায়েত হোসেন এবং মার্জনা বেগমের বিবরণ একই। তবে তারা একই দিন রাতে তার সন্তানকে হত্যার চেষ্টার বিষয়টিকে পরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেন।
তারা বলেন, তাদের ছেলে রাতে এশার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় হীরা বেগম তার ঘরের সামনে অন্ধকারে তার ছেলে মিরাজকে ল্যাং মারে। ওই সময় মিরাজ মাটিতে পড়েগেলে তার গলা ও মুখ চেপে ধরে হীরা। তাকে হত্যার চেষ্টা করে। মিরাজ যখন দম নিতে না পেরে চটপট করছিল, তখন হীরা তাকে ছেড়ে দেয় এবং পাশে থাকা একটি পাকা পিলারের সাথে ধাক্কা দেয়। এতে শিশুটির গলা ও মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়। ওই সময় মিরাজ চিৎকার দিলে পাশের ঘরের মোস্তফা গাজী ও জান্নাত বেগম তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে। অন্য লোকজন আসার আগেই হীরা বেগম তার ঘরে চলে যায়।
মিরাজের বাবা বেলায়েত হোসেন বলেন, আর কিছু সময় মুখ ও গলা চাপ দিয়ে রাখলে আমার সন্তানের প্রাণ চলে যেত। আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি এবং সঠিক বিচারের দাবী করছি। রাতেই ঘটনাস্থল থেকে ছেলেকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয় এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
ঘটনার সময় শিশু মিরাজের চিৎকার শুনে আসা মোস্তাফ গাজী বলেন, তার চিৎকার শুনে এসেছি। দেখি মাটিতে পড়ে আছে। জিজ্ঞাসা করা হলে মিরাজ বলে হীরা বেগম তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। তবে ঘটনাস্থলে এসে আমি হীরা বেগমকে দেখিনি।
ওই বাড়ির বাসিন্দা আব্দুল মতিন গাজী বলেন, মিরাজ ও রাফি উভয় আমার নাতি। শিশুরা খেলতে গিয়ে ঝগড়া বিবাদ হতে পারে। এগুলো তাৎক্ষনিক সমাধান হবে, আবার তারা একসাথে খেলা-ধুলা করবে। কিন্তু শিশুদের বিষয় নিয়ে আরেক শিশুর গলা চেপে হত্যা চেষ্টা অভিভাবক হিসেবে হীরা বেগমের কাজ সঠিক হয়নি। উনার এ ধরণের অপরাধের বিচার হওয়া দরকার।
অভিযোগের বিষয়ে প্রবাসীর স্ত্রী হীরা বেগমের বক্তব্যের জন্য তার বসত ঘরে যাওয়া হয়। তিনি তখন ঘরে ছিলেন না। ব্যাক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন দেয়া হয়, ফোনও রিসিভ করেননি। যে কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে হীরা বেগমকে ঘরে না পেলেও আরেক ঘরে পাওয়া যায় তার শ্বশুর অলি উল্যাহ গাজীকে। তিনি বলেন, আমার যে নাতির বিরুদ্ধে অভিযোগ রাফি, সে খুবই সহজ সরল। তাকেই মিরাজই প্রথম মেরেছে। ওই ঘটনাটি ভালোভাবে সমাধান হয়নি। দুই পক্ষ নিয়ে বসে বিষয়টি মিমাংসা করা হলে পরবর্তীর ঘটনা আসত না। রাতে ঘটনার সময় আমি ঘরের সামনেই ছিলাম। এই ধরণের মারধরের ঘটনা আমি দেখিনি।
এই ঘটনায় চাঁদপুর সদর মডেল থানায় অভিযোগ করা হলেও ২ এপ্রিল সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিন পরিদর্শনে যায়নি তদন্তকারী কর্মকর্তা। ঘটনাটি তদন্ত করা হলে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানানা মামলার বাদী বেলায়েত গাজী।
ফম/এমএমএ/