ব্যাক্তির অপরাধে কোন সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না: শিক্ষামন্ত্রী

চাঁদপুর: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেছেন, মদিনার সনদে বলা হয়েছে সবগোত্র ও সম্প্রদায়ের লোক তারা সকলেই শান্তিপূর্ণভাবে সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। তাদের মধ্যে যদি কেউ আক্রান্ত হয়, তাহলে তাকে সবাই মিলে প্রতিহত করবে। সকলেই তাদের স্বাধীনতা ভোগ করবে। কোন সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যাক্তি যদি অপরাধ করে, সেটি তার ব্যাক্তিগত অপরাধ হবে। ব্যাক্তির অপরাধে কোন সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না। আল্লাহর রাসূল (সা.) এসব কথাগুলো মানব জাতির উদ্দেশ্যে বলেছেন।

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত সম্প্রতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা এ দেশটি পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যেখানে আমরা সকল ধর্মের লোকজনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কি চেয়েছি, একটি অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও বৈষাম্যহীন একটি বাংলাদেশ। যেখানে প্রতিটি মানুষ তার সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করবে। তার কারণ কি? কেন আমরা অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছি। পাকিস্তান যে কাঠামোর মধ্যে তৈরী হয়েছিল, সে কাঠামোর মধ্যে বাঙালি বার বার নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছে ধর্মের দোহাই দিয়ে। সেজন্যই আমরা চেয়েছি বাংলার আবহমানকালের যে ইতিহাস, সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে পাশাপাশি বাস করবার যে ইতিহাস। সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা একটি অসম্রাদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হলো। তারপর আবার শুরু হলো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান। আমরা দেখলাম স্বাধীনতা বিরোধীরা সমাজে ও রাষ্ট্রে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো। কিভাবে তারা ক্ষমতার উচ্চ শিখরে পর্যন্ত আরোহন করলো। আমরা যদি দেখি আমাদের ’৭১,’৭৫, ২০০১, ২০০৪ ও ২০১৩ ও ২০১৪ এর যারা ঘাতক, তারা কি এক এবং অভিন্ন নয়। তাদের সবত এই নাশকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, স্বাধীনতা ও দেশ বিরোধী এবং দেশের অস্থিতিশীলকারী অপচেষ্টাকারী। এরা সব এক এবং অভিচ্ছিন্ন। আজকে যখন আঘাত এসেছে, তখন আমরা কেন বলছি এগুলো সেই অপশক্তিরই কাজ। সকল অপরাধী তার একটি নমুনা রেখে যায়। বিগত সবগুলো ঘটনাতে আমরা অপরাধে সেসব চিহ্নগুলো দেখি। সে অপশাক্তি আজও কিন্ত্র সক্রিয়।

তিনি বলেন, আমরা একটা সময় আমাদের সম্মান ও মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমরা একটি সন্ত্রাস, দুর্নীতি, নির্যাতন ও নিপীড়নের জনপদে পরিণত হয়েছিলাম। সে দেশটি আবার বিশে^র মুখে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে এবং মানুষকে সম্মান ও মর্যাদা দিচ্ছে। এসব উন্নতি দেখে ’৭১ ও ’৭৫ এর ঘাতকরা সুখী নয়। তারা আমাদের এই মর্যাদাকে ক্ষুন্ন এবং অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে চায়। সে জন্য এ চক্র অত্যন্ত তৎপর। তারা আজকের সময়টা কেন বেছে নিয়েছে। আজকে ২০২১ সাল। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ আগামী সাধারণ নির্বাচন। একটি নির্বাচিত সরকার যখন দুই থেকে আড়াই বছর পার করে দেয়। তারপর শুরু হয়ে যায় পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি। তারা সেই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল এবং অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে চায় সরকারের সম্মানকে ক্ষুন্ন করে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি তারা এখন নানান রকম দাবী তুলছে। যে দাবীর কোন ভিত্তি নেই। তারা আবার বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মৃত, জনগণ ও সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত প্রত্যাখান করেছে। অর্থাৎ তারা জনমনে একটি বিভ্রান্তি তৈরী করতে চায় এবং সেই বিভ্রান্তির মধ্যে গোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। কাজেই আমাদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তারা বলছে দেশে গণতন্ত্র নেই। তাহলে যে দলটি জনবিচ্ছিন্ন। তারা কিভাবে আমাদের গণমাধ্যমে কথা বলার জন্য এত সময় পায় কিভাবে। তারা আমাদের সরকারি দলের নেতাদের চাইতে বেশী সময় টিভিতে কথা বলে।

দীপু মনি বলেন, নির্যাতন ও নিপীড়নকারীদের দল আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করেছে। তারা জাতির পিতাককে, আমাদের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। সমস্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তারা স্বাধীনতাকে ভুলণ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবার চেষ্টা করেছে। জয়বাংলার পরিবর্তে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ করেছে। হেন অপচেস্টা নেই যা তারা করেনি। এতকিছুর মধ্যেও তারা আরেকটি কাজ করেছে। অর্থাৎ ৭১ এর পরাজিত শক্তি রাজাকার, আল বদর, আল শামছ ও যুদ্ধাপরাধী তাদেরকে সমাজে পুনর্বাসিত করেছে এবং একই সঙ্গে একটি কাজ দীর্ঘদিন ধরে করেছে, এখনো করছে। সেটি হলো তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে বার বার অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। বার বার এ দলের বিভিন্ন পর্যায়ে এসব যুদ্ধাপরাধীরা নানান চেহারায় তাদের পরিবারের সদস্যরা ডুকে পড়েছে। আজকে আমাদের আওয়ামী পরিবারের বহু সংগঠনে, বহু জায়গায় কথা উঠে কারো পরিচয় নিয়ে। আমরা দেখি এই অনুপ্রবেশকারীদের । এই অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে হবে। কারণ এই অনুপ্রবেশকারীরা ভিতরে থেকে ঘরের সিঁদ কাটে। ভিতরে থেকে এরা আমাদের বন্ধনকে ছিন্ন ও সম্প্রতিকে নষ্ট করে। এদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওসমান গণি পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এম.এ. ওয়াদুদ।

সাংবাদিক এম আর ইসলাম বাবুর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কবির আহমেদ ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান।

ধর্মীয় ব্যাক্তিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা হাসান, মসজিদের ইমাম মাওলানা আল-আমিন, সনাতন ধর্মের পক্ষে সুভাষ চন্দ্র রায়, অজয় কুমার ভৌমিক, অ্যাডভোকেট রনজিত রায় চৌধুরী ও খ্রিস্টান ধর্মের পক্ষে মনিন্দ্র বর্মন।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম