
যৌক্তিকতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদানের দাবি জানিয়েছে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ।
শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকরা শিক্ষার সুতিকাগারের কাণ্ডারি। গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ টিভি অনুষ্ঠানের একটি সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তার স্বপ্ন ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। প্রধানমন্ত্রী এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার। প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষার মানােন্নয়নে সর্বদাই আন্তরিক। তিনি বলেছিলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ নয়, বিনিয়ােগ। শিক্ষকদের বুকভরা স্বপ্ন ও দৃঢ় বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের কখনাে হতাশ করবেন না। এখন সময় এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায্য দাবি উপস্থাপন করার।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের যৌক্তিকতা নিয়ে কয়েকটি চাকরির তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়ােগ যােগ্যতা: স্নাতক সমমান (২য় বিভাগ) বেতন গ্রেড: ১৩তম।
অন্যদিকে সমযােগ্যতা সম্পন্ন অন্যান্য বিভাগে যেমন- মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়ােগ যােগ্যতা: স্নাতক সমমান, বেতনগ্রেড ১০ম। পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে নিয়ােগ যােগ্যতা: স্নাতক বা সমমান, বেতনগ্রেভ: ১০ম। নার্সদের নিয়ােগ পদে যােগ্যতা: এইচএসসি (ডিপ্লোমা ইন নার্সিং), বেতনগ্রেড: ১০ম। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পদে নিয়ােগ যােগ্যতা: এসএসসি (৪ বছর কৃষি ডিপ্লোমা), বেতনগ্রেড: ১০ম।
এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে নিয়োগ যোগ্যতা আগে ছিল এইচএসসি, বর্তমানে স্নাতক সমমান, বেতনগ্রেড: ১০ম (প্রস্তাবিত)। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়ােগ যােগ্যতা স্নাতক সমমান, বেতনগ্রেড: ১০ম ও ৯ম।
এছাড়া একই ক্যারিকুলাম, সিলেবাস ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা বিভাগের পিটিআই সংলগ্ন পরীবিক্ষণ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়ােগ যােগ্যতা: স্নাতক (দ্বিতীয় শ্রেণি), দেড় বছরের ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (ডিইনএড), বেতনগ্রেড: ১০ম।
সংগঠনের সমন্বয়ক মাহবুবর রহমান আরও বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যােগ্যতা স্নাতক (২য় বিভাগ) সমমান হলেও ১০ম গ্রেড পেতে শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা। প্রাথমিক শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বল্পদর্শনে উদ্বুদ্ধ করেন। পড়াশুনা শেষ করে মহৎ পেশায় নতুন নিয়ােগ পাওয়া একজন শিক্ষক ১৩তম গ্রেডে ১১ হাজার টাকা বেতন স্কেলে (১১,০০০+৪১৫০+১৫০০+২০০) মােট: ১৭ হাজার ৬০০ টাকা পায়।
মাসিক এ বেতনে সংকুলান না হয়ে অনেক ক্ষেত্র ঋণের বােঝা মাথায় নিয়ে হতাশা নিয়ে যাপিত জীবন অতিবাহিত করছেন। মাসিক এ বেতন ভাতা দিয়ে কখনাে উন্নত জীবনমান সম্ভব নয়। আর এই কারণেই মেধাবীরা প্রাথমিকে শিক্ষকতা পেশায় না এসে অন্য পেশায় ছুটছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ২০৪১ সালের যােগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিকে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়ােজন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক এবং গ্রাজুয়েট শিক্ষকদেরও একই ধাপে বেতন স্কেল ছিল। ১৯৭৭ সালে সামরিক শাসনামলে প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ৩২৫ টাকা, সহকারী শিক্ষকদের ৩০০ টাকা বেতন স্কেল নির্ধারণ করে সর্বপ্রথমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের ন্যায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের একই বেতন গ্রেডের যৌক্তিক দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
যৌক্তিকতা বিবেচনায় একই ডিপার্টমেন্টের পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের কর্মচারীদের ন্যায় শিক্ষাগত যােগ্যতা বিবেচনায় প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের ন্যায়সঙ্গত দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।-খবর বাংলাদেশ জার্নাল।
ফম/এমএমএ/