বেদনা বেড়ে ওঠার অনুপ্রেরণা জোগায়

।। মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ।। দুঃখ-বেদনা সর্বদাই ঋণাত্মক শক্তি নয় এবং এমন কিছু নয়, যাকে সর্বদা আপনার ঘৃণা করা উচিত। কখনো কখনো মানুষ ব্যথাবোধ করে উপকৃত হয়। বেদনা বেড়ে ওঠার অনুপ্রেরণা জোগায়।

আপনি স্মরণ করতে পারেন যে কখনো কখনো আপনি দুঃখবোধ করলে আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছেন ও তাঁকে স্মরণ করেছেন। ছাত্র থাকাকালে প্রায়ই বিরাট বোঝার বেদনা (আতঙ্ক) বোধ করে। মাঝেমধ্যে সম্ভবত একঘেয়েমির বোঝার আতঙ্কে ভোগে, তবু অবশেষে সে ছাত্র জীবনের এ স্তর শেষ করে। শুরুতে সে ব্যথা-ভারাক্রান্তবোধ করে। কিন্তু শেষে সে প্রসিদ্ধি লাভ করে। প্রচণ্ড আবেগের ব্যথা-বেদনা, দারিদ্র্য; অন্যের অবজ্ঞা, ঘৃণা, অবিচার পেয়ে অত্যাচারিত হয়ে হতাশা ও ক্রোধ এসব কিছুই কবিকে সাবলীল ও বিমোহিতকারী কবিতার চরণ লিখতে বাধ্য করে।

উত্তম লেখকদের কত বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা আছে-যেসব অভিজ্ঞতা চমৎকার কাজের (কবিতা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদির) অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সেসব কাজ থেকে আজও উত্তর পুরুষরা অনবরত আনন্দ ও উপকার লাভ করছে। যে কবি কোনো দুঃখ-বেদনার কথা জানে না, কখনো আশা ভঙ্গের তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বাদ গ্রহণ করেনি, সে অবশ্যই সস্তা শব্দের গাদাগাদা স্তূপ রচনা করবে। এটা এ কারণে যে তার শব্দাবলি তার মুখ থেকে বেরোয়, তার আবেগ-অনুভূতি থেকে নিঃসৃত হয় না এবং যা সে লিখেছে, যদিও সে তা বুঝে, তবু তার দেহ-মন জীবনে অভিজ্ঞতা লাভ করেনি। প্রাথমিক যুগের মুমিনদের জীবন এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য।

তাঁরা কোরআন অবতীর্ণকালে জীবনযাপন করছিলেন এবং মানবজাতি চিরকালের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবু তাঁরা দুঃখ-কষ্ট ও ভোগান্তির মধ্য দিয়ে বেঁচে ছিলেন। দুঃখ-কষ্ট ও ভোগান্তি এসব মহাবিপ্লবের সহগামী। কিন্তু সেই বেদনা নিরর্থক হয়নি। ইরশাদ হয়েছে, ‘কারণ আল্লাহর পথে তাদের তৃষ্ণা, ক্লান্তি, ক্ষুধায় কাতর হওয়া, কাফিরদের ক্রোধ উদ্রেক করে-এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শক্রদের পক্ষ থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া তাদের আমলনামায় সত্কর্মরূপে লিখিত হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ সত্কর্মপরায়ণদের কর্মফল নষ্ট করেন না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১২০)।

আপনার জন্য দংশিত, ঝুলন্ত ও আবেগপ্রবণ আত্মা নিয়ে বেঁচে থাকা শীতল আত্মা ও অদূরদর্শী লোকের উদাসীন অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে বেশি পবিত্র ও মহৎ। ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু আল্লাহ তাদের অভিযানে প্রেরিত হওয়াকে অপছন্দ করেন। তাই তাদের পেছনে বসিয়ে রাখলেন এবং তাদের বলা হলো, যারা বসে আছে তাদের সঙ্গে বসে থাকো।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : আয়াত : ৪৬)।

কাজেই জীবন নিয়ে হতাশা নয়। মুমিন কখনো হতাশ হয় না। ধৈর্য ধারণ করুন। এগিয়ে যাওয়ার পথ তালাশ করুন-সাফল্য আসবেই।

(ড. আয়েজ আল-কারনি রচিত ‘লা তাহজান’ গ্রন্থ অবলম্বনে)

ফোকাস মোহনা.কম