বিশ্বাসে প্রয়োজন ভারসাম্য ও সতর্কতা

মুফতি আতাউর রহমান।। মধ্যপন্থা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তারা বিশ্বাসের প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম বাড়াবাড়ি ও শিথিলতার মাঝামাঝি মতাদর্শ অবলম্বন করে চলে। ইবনুল কায়্যিম জাওজি (রহ.) বলেন, ‘সত্যপন্থীদের তোমরা সব সময় দুই বাতিলপন্থীর মধ্যবর্তী পাবে। আহলুস সুন্নাহ মৌচাকের মাঝে থাকে, যেমন মুসলিমরা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর ভেতর মধ্যবর্তী।(মিফতাহু দারিস সাআদাতি : ২/২৪৩)
এই মধ্যপন্থার বহিঃপ্রকাশ ঈমান ও ইবাদতের সব শাখায় ঘটে। যেমন-

১. ইবাদত : ইবাদতের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত ইবাদতগুলো পালন করে। যা প্রমাণিত নয়, তা বিদআতিদের মতো নিজেদের ওপর চাপিয়ে নেয় না। অন্যদিকে ভ্রষ্ট অধ্যাত্মবাদীদের মতো ইবাদতের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে না। তারা আল্লাহর নিম্নোক্ত নির্দেশ মান্য করে চলে, ‘তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তা অনুসরণ কোরো। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩)

২. আল্লাহর নাম ও গুণাবলি : আল্লাহর যেসব নাম ও গুণাবলি কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়াই তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে। তারা মুতাজিলাদের মতো মানবীয় গুণাবলির সঙ্গে তা মিলিয়ে ব্যাখ্যা করে না। এ ক্ষেত্রে তাদের মূল বক্তব্য হলো—‘তাঁর (আল্লাহর) মতো কেউ নয়। ’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ১১)

৩. ভাগ্য : ভাগ্য বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত ‘কাদারিয়্যাহ’ সম্প্রদায়ের মতো বলে না যে বান্দার ভালো-মন্দ কাজের স্রষ্টা আল্লাহ নন, বরং বান্দা নিজেই নিজের কর্মের স্রষ্টা। আবার ‘জাবারিয়্যাহ’ সম্প্রদায়ের মতো মানুষকে পুরো অক্ষম ও অপারগ মনে করে না। এ ক্ষেত্রে নিম্নে উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে তাদের বিশ্বাসের নির্যাস খুঁজে পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তোমাদের এবং তোমরা যা করো। ’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ৯৬)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা শুধু তা-ই প্রত্যাশা করো, যা জগত্গুলোর প্রতিপালক মহান আল্লাহ চান। ’ (সুরা তাকভির, আয়াত : ২৯)

৪. শাস্তি ও পুরস্কার : আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি ও পুরস্কার লাভ, ক্ষমা ও প্রতিবিধানের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত ‘নৈরাশ্যবাদী’ ও মুরজিয়াদের মধ্যবর্তী বিশ্বাস লালন করে। নৈরাশ্যবাদীরা আল্লাহর ক্ষমার ব্যাপারে নিরাশা প্রকাশ করে বলে কবিরা গুনাহকারী কাফির ও চিরদিন জাহান্নামে থাকবে। অন্যদিকে মুরজিয়ারা জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য অন্তরের বিশ্বাসকে যথেষ্ট মনে করে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত যেমন আল্লাহর ক্ষমার ব্যাপারে আশাবাদী, তেমন তার কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ ও শাস্তির ভয় পায়। এটাই নিম্নোক্ত আয়াতের শিক্ষা। মহান আল্লহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সঙ্গে শরিক করা পছন্দ করেন না। এটা ছাড়া সব কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। কেউ আল্লাহর সঙ্গে শরিক করলে সে ভীষণ পথভ্রষ্ট হয়। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৬)

৫. সাহাবায়ে কেরাম (রা.) : আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত শিয়াতের মতো আহলে বাইত ও আলী (রা.)-এর সন্তানদের অলৌকিক ক্ষমতা ও অতি মর্যাদা, যা প্রমাণিত নয় তা দাবি করে না এবং আবু বকর (রা.)-সহ বিশিষ্ট সাহাবিদের মর্যাদা অস্বীকার করে না। আবার খারেজিদের মতো বেশির ভাগ সাহাবিকে মুরতাদ মনে করে না; বরং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত মৌলিক মর্যাদায় নবীজি (সা.)-এর সব সাহাবিকে সমান মনে করে। তারা সব সাহাবিকে ভালোবাসে এবং বিশ্বাস করে সব সাহাবি ন্যায়পরায়ণ। পাশাপাশি তারা আহলে বাইতের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা লালন করে। ঠিক যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য পরীক্ষা করেছেন। তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৩)  আল-মাউসুয়াতুল আকাদিয়া।

ফম/এমএমএ/

ফোকাস মোহনা.কম