চাঁদপুর: ডাকাতিয়া নদীর তীরে মনোরম পরিবেশ চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে ঢালীর ঘাট এলাকায় দক্ষিণ ইচলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদীর তীরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থানই যেন এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুলটির দক্ষিণ দিকে ডাকাতিয়া নদী, নদীকে কেন্দ্র করে স্কুলটির তিন দিক ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বালু ও ইটের ব্যবসা। পুরো শুষ্ক মৌসুমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দূর্বিসহ দিন কাটাতে হচ্ছে। প্রত্যেক শিক্ষক স্কুলে আসার পর মাক্স ব্যবহার করে কোন রকম রক্ষা পাচ্ছেন। তবে ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দোষ দিয়ে রক্ষা পেতে চাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে এবং সরেজমিন গিয়ে দেখাগেল, বালু ও ইট খোলার মালিকরা কোন ধরনের বেস্টনী ছাড়াই ধুল বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। ধুলার কারণে ক্লাশ রুমের জানলাা দরজা বন্ধ করে নিতে হচ্ছে ক্লাশ। স্ক্লু ভবনটি নদী তীরবর্তী হওয়ায় প্রতিনিয়ত ধূলবালি বিদ্যালয়ে ক্লাশ রুমে গিয়ে পড়ছে। প্রতিটি ক্লাশের বেঞ্চগুলোতে বালুর আস্তরন পড়ে আছে।
শুধুকি ধূলবালুর অত্যাচার। তা নয়, সাথে রয়েছে বিদ্যালয় ভবনের দেয়াল ঘিরে হাজারো ইটের স্টেক। অনেক স্থানে বিদ্যালয়ের দেয়াল ইট রাখার কারণে ভেঙেগেছে। এবিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বালু ব্যবসায়িদের বারংবার বললেও তারা কোন প্রকার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানাগেল, বিদ্যালয় ভবনটিকে ঘিরে কয়েকশত মিটারের মধ্যে গাজী এন্টার প্রাইজের প্রোপাইটর জাহাঙ্গীর গাজী, সোহাগী এন্টার প্রাইজ, মেসার্স আল ফেলানী (রহঃ) এন্টারপ্রাইজ এর পরিচালক মোঃ নূর ই আলম, ইসমাইল পাটওয়ারী, সাদ্দাম হোসেন, শরীফ গাজী, শাহাদৎ মাল, সাগর গাজী, মিজানুর রহমান, ওচমান গাজী, কবীর গাজীসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
দক্ষিণ ইচলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা বেগম এই বিষয়ে বলেন, আগে বিদ্যালয়টির পাশে ইটভাটা ছিল তা বন্ধ হয়েছে। এখন তার চাইতেও আরও ক্ষতিকর বালু ও ইটেরর ব্যবসা। আমার প্রতিষ্ঠানটির চারদিকে গড়ে উঠেছে। ক্লাশের সময়ে রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে নিয়মিত ক্লাশ নিতে হচ্ছে। যখন বিদ্যুৎ থাকে না, তখন ক্লাশ রুম অন্ধকার হয়ে থাকে পঠদানে অসুবিধা হয়। ছাত্র-ছাত্রীসহ আমরা শিক্ষকরা এ বালুর কারণে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেক শিশু একারণে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না। আমি আমার শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বার বার জানালেও কোন কাজে আসেনি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা স্কুলে আসার পর মাঠে যেতে পারি না বালুর জন্য। ক্লাশ রুমেও জানলা বন্ধ করে মেডামরা ক্লাশ নেয়। আলো বাতাস ক্লাশ রুমে পাওয়া যায় না। বাতাসের জন্য জানালা খোলা রাখলে ক্লাশ রুম বালুতে ভরে যায়। বালুর জন্য আমাদের চোখের ক্ষতি হচ্ছে এবং দিনভর হাঁচি আসে আমাদের।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমন বলেন, স্কুলের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা থাকতে পারবে না। তবে যারা স্কুল ভবনের কাছাকাছি বালুর ব্যবসা করছেন তাদেরকে অবশ্যই বায়ু দূষনের বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যবসা করতে হবে। বালুর ব্যবসা করতে হলে কাপড় দিয়ে প্রটেকশন করে ব্যবসা করতে হবে। যাতে করে বাতাসে বালু উড়ে গিয়ে বিদ্যালয়ের শিশুদের ক্ষতি না হয়। সাথে যেসকল বসত রয়েছে সেখানে বসবাসকারীদের যেন ক্ষতি না হয়।
বিআইডব্লিউটি চাঁদপুর এর উপ-পরিচালক শাহাদৎ হোসেন বলেন, নদীর তীর ঘেষে যারা বালু ও ইটের স্টক ব্যবসা করছেন তারা কেউই কখনো আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি। শুধু ঢালীর ঘাট এলাকাই নয়, চাঁদপুর সদর থেকে শাহরাস্তি উপজেলা পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর পাড় ঘিরে শত শত বালু ও ইটের খোলা রয়েছে। বিআইডব্লিউটি কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিলে তাদের টেক্স দিতে হতো এবং সরকারের রাজস্ব আদায় হতো।
বালু ও ইট খোলার ব্যবসায়ী মেসার্স আল ফেলানী (রহঃ) এন্টারপ্রাইজ এর পরিচালক মোঃ নূর ই আলম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান স্কুল থেকে অনেক দূরে। স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি বলে আমাদের বালু খোলার বালু উড়ে স্কুলে যায় তা সত্যি নয়। আপনারা দেখেন স্কুলের পাশে আরোও অনেকে ইটবালুর ব্যবসা করছে।
গাজী এন্টার প্রাইজের ম্যানেজার মাহাবুব বলেন, আমরা গত দুই বছর হয় এখানে ব্যবসা পরিচালনা করছি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলার পর আমরা বালু অনেক দূরে সরিয়ে নিয়েছি। বিদ্যালয়ের পাশে দেয়াল ঘেষে যে ইট রাখা হচ্ছে তা আমাদের না। এখানে আরও অনেক স্থানীয় লোকজন ব্যবসা করছে।
ফম/এমএমএ/