
চাঁদপুর: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি, কারণ আমি একটি স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করেছি। বঙ্গবন্ধুর দেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আর এই বিজয়ের ৫০বছর আপনাদের নিয়ে উদযাপন করতে পারলাম। আজকে আমাদের আরেকটি সৌভাগ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে আজকে শপথ গ্রহণ করাবেন। বিজয়ের ৫০ বছরের এই দিনে আমাদের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার জন্য শপথ করাবেন। আজকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা বড়ই প্রয়োজন। আজকে আমরা যদি স্বাধীনতার চেতনায় নিজেদেরকে উদ্ভুদ্ধ করতে না পারি, তাহলে আমরা আবার পিছিয়ে যাব। যে পিছিয়ে গিয়েছিলাম ১৯৭৫ সালে। ২১টি বছর আমরা উল্টো পথে হেটেছি। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত এবং অসম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা নিয়ে দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে আপনারা যুদ্ধ করেছিলেন, সে দেশটি পিছিয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রদায়িকা শক্তি দেশে জেগে উঠেছিল।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে মহান বিজয় দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমরা কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। আমরা সকল ধর্মের লোকদের নিয়ে একসাথে বাঁচতে চাই। আমরা বলতে চাই, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। আমরা এটা যেমন আমাদের গানে বলব, আমাদের কথায় বলব এবং কাজে সেটা প্রমান করে দেখাব যে আসলেই আমরা বাংলাদেশকে ভালবাসি।

জেলা প্রশাসক বলেন, আজকে আমাদের মধ্যে যে বিভক্তি, এই বিভক্তি আমাদের ক্ষতি করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যে বিভক্তি, সেটা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষতি করবে। বিজয়ের এই ৫০ বছরে আপনাদেরকে অনুরোধ করি, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলতে পছন্দ করি, তারা যদি একতাবদ্ধ না থাকি, আবার দেশ পিছিয়ে যাবে। দেশ পিছিয়ে চলার পিছনে যারা আছে তারা কিন্তু কাজ করে চলছে। আপনার পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়া খুললে তার চিত্র দেখতে পান। আমাদের হাজীগঞ্জে যে ঘটনাটি ঘটল। সাম্প্রদায়িক যে শক্তি তাদের যে থাবা মেরে ধরল। হাজীগঞ্জে কিন্তু তারা সে প্রমাণটা রেখেগেছেন। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি যে আঘাতটি হয়েছে, সেটা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা, তারা কিন্তু করতে পারে না। যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে তারাও কিন্তু করতে পারে না। এটা করেছে যারা আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে চায় তারা। যারা দেশে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায় তারা। এ জন্য আমাদের সর্তক হতে হবে।
ডিসি বলেন, এত বছর পরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলেন, তখন সে পেতাত্মারা আবার তাদের দাঁত খিছিয়ে সামনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। তারা দেশ-বিদেশে দেশের সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য চক্রান্ত শুরু করেছিল। তারা দেশের মধ্যে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। দেশে যেন শান্তি শৃঙ্খলা না থাকে এবং তাদের যেন বিচান না করা হয়, তার জন্য অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে আমাদের এই কার্যক্রমকে নিন্দা প্রস্তাব হিসেবে নেয়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। ওআইসি’র মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল, যাতে তাদের এই বিচারটা না করা যায়। কিন্তু আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা, সাহসী নেত্রী, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সাহসীকতার সাথে যারা স্বাধীনতার শত্রু, বুদ্ধীজীবীদের শত্রু, মুক্তিযোদ্ধাদের শত্রু এবং দেশের শত্রু তাদের বিচার করছেন এবং বিচারের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বর্তমান প্রজন্ম, যারা বড় হচ্ছে তাদেরকে যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বড় করতে না পারি, সঠিক ইতিহাসটা না জানাতে পারি এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের সাথে কি কি অন্যায় ও অত্যাচার করেছে এবং এই দেশের দোষররা তাদেরকে কিভাবে সহায়তা করেছে এবং তারা এখনও আমাদের দেশে টিকে আছে এবং বহাল আছে, ভাল আছে এই জিনিগুলো আমরা যদি তাদেরকে জানাতে না পারি তাহলে কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানবে না সঠিক পথে হাটবে না বরং দেখা যাবে এই সুযোগটা নিয়ে তারা ইতিহাস আবার বিকৃত করবে। আবার বাংলাদেশকে পিছানোর চেষ্টা করবে।

অঞ্জনা খান বলেন, আপনাদের (মুক্তিযোদ্ধা) দেখলে আমার খুবই ভাল লাগে। আমি আপনাদের দিকে অনেক সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি। আর আপনাদের দেখলে সাহস আসে। মনে জোর পাই। এঁরা নিজের জীবনকে বাজি রেখে বঙ্গন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে বাঁচানোর জন্য যুদ্ধে গিয়েছিল। এঁরা সেই বীর সন্তান। এঁরাই আমাদের সাহস দেয়, শক্তি দেয়।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তাঁর কাছে টেনে নিয়েছেন। আপনাদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধিসহ প্রত্যেককে পুনর্বাসন করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। আজকে এখানে আমার সিনিয়র এক কর্মকর্তার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যেন বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হয়। এই বিষয়টি আমিও অনুধাবন করেছি। আমি বিষয়টি সরকারের নজরে আনার চেষ্টা করব। আমরা জানি চিকিৎসার যে খরচ, মুক্তিযোদ্ধাদের যে ভাতা দেয়া হয়, তা দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। যদি বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তারা কিছুদিন হলেও সুস্থ ও ভাল থাকতে পারবেন। আপনারা বেঁচে থাকেন, আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দাউদ হোসেন চৌধুরী, আরডিসি মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় কুমার ভৌমিকের যৌথ সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের সুযোগ্য পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ পিপিএম (বার), চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাফিজ খান, সাবেক সহকারী কমান্ডার ইয়াকুব মাষ্টার, মহসীন পাঠান ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের প্রায় দুই শতাধিক সদস্যকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। একই সময়ে তাদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মানী প্রদান করা হয়।
ফম/এমএমএ/