বালিয়া ইউনিয়নে নির্বাচিত না হয়েও পরিষদের সদস্য আহসান তালুকদার

চাঁদপুর: ঋণ খেলাপির কারণে বিধি অনুসারে নির্বাচনে অংশগ্রহনের যোগ্যতা হারায় চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯নম্বর বালিয়া ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী মো. আহসান তালুকদার। ওই ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একমাত্র প্রার্থী মো. নেছার আহাম্মেদ তালুকদার। পরবর্তীতে প্রার্থীতা বহাল রাখার জন্য উচ্চ আদালতে মামলা করেন আহসান তালুকদার। পাল্টা পাল্টি দুই প্রার্থীর মধ্যে মামলা চলমান রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে এই ইউনিয়নের গেজেট প্রকাশ হয়। কিন্তু নির্বাচন স্থগিত এই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আহসান তালুকদারকে সকল কাজে অংশগ্রহন করার সুযোগ করে দিয়েছেন বর্তমান নির্বাচিত পরিষদ। এই বিষয়ে আপত্তি এনে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী প্রার্থী নেছার আহাম্মেদ তালুকদার।

তিনি গত ২২ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। যার অনুলিপি দেয়া হয় নির্বাচন কমিশন সচিব, সচিব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা কুমিল্লা, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।

অভিযোগের বিবরণ থেকে জানাগেছে, আহসান তালুকদার ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ১৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মনোনয়নপত্র যাছাই বাচাই কালে পদ্মা ব্যাংক ফরিদগঞ্জ গৃদকালিন্দিয়া শাখায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ঋণ খেলাপির অভিযোগ আনা হয়। ২১ অক্টোবর পর্যালোচনা শেষে রিটার্নিং অফিসার তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। নিয়মানুসারে তিনি প্রার্থীতা বহালের জন্য জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আপিল করে। সেই আপিলও ২৫ অক্টোবর শুনানি শেষে বাতিল ঘোষণা করা হয়।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ২৬ অক্টোবর ধার্যছিল। পরবর্তীতে ২৭ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দের দিন একমাত্র প্রার্থী থাকায় প্রতিক না দিয়ে নেছার আহাম্মেদ তালুকদারকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা এবং কাগজপত্র হস্তান্তর করেন।
ওই অবস্থায় আহসান তালুকদার সঠিক তথ্য গোপন করে উচ্চ আদালত হতে তার প্রার্থীতা বহাল রাখার আদেশ প্রাপ্ত হয়। তথ্য গোপনের বিষয়টি অবগত করে নেছার আহাম্মেদ তালুকদার উচ্চ আদালতে আপিল করেন। শুনানি শেষে আহসান তালুকদারের আদেশ বাতিল হয়।

এরপর সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচনের পূর্বের দিন অর্থাৎ ১০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় ওই ওয়ার্ডে নির্বাচন হবে না মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত আদেশের জন্য ফুল ব্যাঞ্চে প্রেরণ করেন। চূড়ান্ত আদেশ না হওয়ায় নেছার আহমেদ তালুকদারের নাম গেজেটভুক্ত ও শপথ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখে।

নেছার আহমেদ তালকুদার বলেন, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অতি উৎসাহিত হয়ে ঋণ খেলাপির দায়ে মনোনয়ন বাতিল হওয়া ব্যাক্তিকে ৫নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে দায়িত্ব দিয়ে তার নাম ইউপি কার্যালয়ে নবগঠিত পরিষদের সঙ্গে সংযুক্তক্রমে মাসিক সভা রেজুলেশন বই, নোটিশ বই, হাজিরা বইসহ সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে অনন্তর্ভূক্ত করে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ করার ক্ষমতা প্রদান করেন। এসব বিষয়গুলো ইউনিয়ন পরিষদ অদ্যাদেশ বিধি বর্হিভূত ও স্থানীয় সরকার আইন পরিপন্থি এবং চেয়ারম্যান ও সচিবের মনগড়া সিদ্ধান্ত। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি জোর দাবী জানাচ্ছি।

বালিয়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. রফিকুল্যা পাটওয়ারীকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ঋণ খেলাপির বিষয়টিও আমারা জানা আছে। তিনি ঋণ খেলাপি না, অন্যের জামিনদার ছিলেন। উচ্চ আদালতে মামলা চলমান। তাকে পরিষদের অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য আমাকেত নির্বাচন অফিস থেকে কোন চিঠি দেয়া হয়নি। এই বিষয়ে কি বিধান রয়েছে আমি জেনে নিব।

ফম/এমএমএ/

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম