
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অগ্রগতির অদম্য গতি কেউ থামাতে পারবে না কারণ, এই দেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠেছে। এই মর্যাদা বজায় রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে সকলকে একযোগে কাজ করে যাওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা আর কখনও কেউ কেউ থামিয়ে দিতে পারবেনা, সেভাবেই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ।’
শেখ হাসিনা বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) এর ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২১-২০২২’ এর গ্রাজুয়েশন প্রদান অনুষ্টানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।-খবর বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাই, আর ২০৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ আমরা উদযাপন করবো কাজেই আমাদের নবীন ট্রেনিং প্রাপ্ত অফিসারদের কাছে আমার একটাই আবেদন থাকবে, ’৪১ সালের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হবে। সব সময় মাথা উঁচু করে চলতে হবে এবং দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে এবং দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারেনা। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ^ দরবারে মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদা ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ঠিক ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার পর যে সম্মান আমরা আন্তর্জাতিকভাবে পেয়েছিলাম এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর যে সম্মান আমরা হারিয়েছিলাম, আজকে আবার আমরা সেই সম্মান পুণরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছি।
সরকার প্রধান আরও বলেন, আমি একটি কথা সকলকে বলতে চাই- এক সময় বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশে অনেক নেতিবাচক কথা ছিল। তবে, এখনও কিছু কিছু লোক আছে বাংলাদেশ সম্পর্কে বদনাম করতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফলে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আমরা যে দক্ষতা দেখিয়েছি তার ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশে^ আজকে উজ্জ্বল হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করিয়ে দেন।
শেখ হাসনিা বলেন, আমি অনুরোধ জানাচ্ছি করোনার আবার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। কাজেই সকলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন। নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবেন।
ডিএসসিএসসি কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
এবারে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১৮টি দেশের ৪৭ জন বিদেশী কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তাসহ মোট ২৫১ জন পিএসসি ডিগ্রী লাভ করেছেন। দডিএসসিএসসি’ এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর মোট ১২৮টি কোর্স পরিচালনা করেছে এবং ৫ হাজার ৬৮৬ জনকে ডিগ্রি প্রদান করেছে। ৪৩টি দেশের ১ হাজার ২৫৫ জন অফিসার এখান থেকে ডিগ্রি লাভ করেছে।
২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনদফা নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়নের নানাবিধ পদেক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। এ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ’৯৬ সালে যখন সরকারে আসি তখনই ‘বিপসট’ প্রতিষ্ঠা করে দেই। পাশাপাশি সিএমএইচগুলোকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করি এবং আরো অনেকগুলো মেডিকেল কলেজ তৈরী করে দেই।
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি- ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’- এর আলোকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করেন তিনি।
ফম/এমএমএ/