বঙ্গমাতা ছিলেন জাতির পিতার সকল কর্ম প্রেরণার উৎস : ডিসি চাঁদপুর

বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে  চাঁদপুরে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ

চাঁদপুর: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতা স্থাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জননী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এঁর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮আগষ্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা এবং সেলাই মেশিন, ক্ষুদ্রঋণের চেক ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, চাঁদপুরের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান।
তিনি তার বক্তব্য বলেন, সংগ্রাম-স্বাধীনতা-প্রেরণায় মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। তিনি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সকল কর্ম প্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধুকে ছায়ার মতো আগলে রাখতেন। সাহস, ধৈর্য্য, কষ্ট ও সহিষ্ণুতায় তিনি সর্বদাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেছিলেন। বঙ্গমাতা জানতেন বঙ্গবন্ধু কী চান, সে আদর্শেই নিজের জীবনকে উজ্জীবিত করতেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, বঙ্গমাতার জীবন ও আদর্শ ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনাদর্শ বাস্তবায়নের পথরেখা। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে, তখন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব তার কাছে আসা সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশনার কথা বলতেন। এদেশের মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে বেগম মুজিব যে কর্তব্যনিষ্ঠা, দেশপ্রেম, দূরদর্শী চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তার ফলে জাতির পিতার পাশাপাশি তিনি আজ বঙ্গমাতার আসনে অধিষ্ঠিত। চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন মানুষের মাঝে। তার সেই অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা আমাদের কর্তব্য।
চাঁদপুরের নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (বিপিএম পিপিএম-সেবা) বলেছেন, দেশ ও জাতির জন্য বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অপরিসীম ত্যাগ, তিতিক্ষা ও অবদানের জন্য জাতি তাঁকে বঙ্গমাতা খেতাবে ভূষিত করেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের সার্বিক ক্ষেত্রে বঙ্গমাতার এ অসামান্য অবদানের জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ও সর্বময় প্রেরণাদাত্রী হিসেবে বঙ্গমাতা বাঙালি জাতিকে স্বপ্নের প্রতিটি সিঁড়িতে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু নাঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। এ লড়াই-সংগ্রামে প্রেরণাদাতা ছিলেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। তিনি বঙ্গবন্ধুর গোটা রাজনৈতিক জীবন ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি কাজে প্রেরণার উৎস হয়ে ছিলেন।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বারবার পাকিস্তানি শাসকদের হাতে বন্দি জীবন-যাপন করছিলেন তখন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কাছে ছুটে যেতেন। তিনি তাদের বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন ও লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাতেন।
আবু নাঈম পাটওয়ারী দুলাল আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছায়ার মত অনুসরণ করা বেগম মুজিব জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন। অনেক কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাঁকে। এই মহীয়সী নারী ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সপরিবারে খুনিচক্রের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। বঙ্গমাতার জীবনী চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর চাঁদপুরের উপ-পরিচালক নাছিমা আক্তার এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট ছড়াকার ও সাহিত্যিক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া।
সাংবাদিক মো. রফিকুল ইসলাম বাবুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট রনজিত রায় চৌধুরী, স্বাধীনতার পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দ বদরুন্নাহার চৌধুরী, পুরাণ বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, জাতীয় মহিলা সংস্থা চাঁদপুরের চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা মাকসুদা নুর ও ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ্।
আলোচনা সভা শেষে, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর চাঁদপুরের আয়োজনে, মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম এর আওতায় ক্ষুদ্রঋণপ্রাপ্ত উপকারভোগীর ৯ জনকে পাঁচ লাখ টাকার চেক ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ‘ক’ বিভাগ- শিশু হতে ২য় শ্রেনি ও ‘খ’ বিভাগ-৩য় হতে ৫ শ্রেনি এবং ‘গ’ বিভাগ – ৬ষ্ঠ হতে ১০শ্রেনি পর্যন্ত ৩ জন করে ৯ জনকে পুরস্কার  এবং চাঁদপুর সদরের ৯ জন মহিলা উদ্যোক্তাকে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিগার সুলতানা, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. কাউছার আহমেদ প্রমুখ।
ফম/এমএমএ/

শাহ্ আলম খান | ফোকাস মোহনা.কম