ফরিদগঞ্জে ১৫ বছর শিকলে বাঁধা কোরআনে হাফেজ খালেকের জীবন

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): চাঁদপুর জেলাধীন ফরিদগঞ্জের পল্লীতে ১৫ বছর যাবত কোরআনের হাফেজ মেধাবী আবদুল খালেকের জীবন শিকলে বাঁধা অবস্থায় অতিবাহিত হচ্ছে। তার পাশে দাড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চাচ্ছে এলাকাবাসী ও পরিবার।

বাবা-মার মৃত্যুরপর জানাজার নামাজে ইমামতি করবে সন্তান, এমন উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে নিজের মেধাবী সন্তানকে পড়িয়েছেন হাফেজি মাদ্রাসায়। সৃষ্টিকর্তার রহমত আর নিজের আপ্রাণ চেষ্টায় পুরো ত্রিশপাড়া পবিত্র কোরআনের ৬ হাজার ৬শ ৬৬ আয়াত মুখস্থ করে নিজের বুকে ধারণ করেছেন আবদুল খালেক। আবদুল খালেক হাফেজী শেষ করলেও স্বপ্ন পুরন হয়নি তার বাবা-মায়ের। হাফেজী শেষ করার কয়েক মাসের মাথায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ১৫ বছর শিকল বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবন যাবন করতে হচ্ছে এই কোরআনের হাফেজ-কে। বর্তমানে আর্থিক অভাব অনটনের কারেন চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়া দিন দিন তার মানসিক ভারসাম্য অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসায় বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন তার পরিবার।

হাফেজ আবদুল খালেক চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং ইউনিয়নের ভোটাল গ্রামের মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জয়শ্রেরী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করে সে। পড়াশোনায় খুব মনোযোগী ছিলো। গত ১৫ বছর পূর্বে সে হাফেজি পড়া শেষ করার কয়েক মাসের মধ্যে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। হারিয়ে ফেলেন তার মানসিক ভারসাম্য। পরিবারের সামার্থ অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা করানো হয়, বর্তমানে বসতঘরের সঙ্গে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

আবুদল খালেকের মা শামছুন্নাহার বলেন, আবদুল খালেক বিভিন্ন সময় ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলেন। বিভিন্ন সময় এদিক সেদিক চলে যায়, পরিবারের পক্ষে সারাক্ষণ তাকে দেখে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এ জন্য তাকে ঘরে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেন মা।

তিনি আরো বলেন, ‘রাতে ছেলের পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় ঘরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু ছেলের এমন অবস্থায় মা হয়ে আমি নিজেও সারারাত ঘুমাতে পারি না। কারণ কখন সে কি করে বসে এই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। আমি গরীব মানুষ। আমার স্বামী শ্রমিকের কাজ করতেন, ছেলে অসুস্থ হওয়া পর সম্পত্তি বিক্রি করেও তার চিকিৎসা করানো হয়েছে। আবদুল খালেক সুস্থ্য না হওয়াতে তার বাবাও কয়েক বছর আগে মারা যায়। বর্তমানে ঠিকমতো সংসার চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ছেলের চিকিৎসা করবো কীভাবে? তাকে উন্নত চিকিৎসা করার সামর্থ্য আমাদের নেই।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা শামসুন নাহার ছেলের চিকিৎসায় বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।

জয়শ্রেরী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার মুহ্তামিম হাফেজ মহসিন মিয়া জানান, আবদুল খালেক খুব মেধাবী ছাত্র ছিলো। সে অসুস্থ হওয়ার পর আমরা মাদ্রাসায় আমাদের তাওফিক অনুযায়ী দোয়া আয়োজন করছি। বর্তমানে সে শিকল বাঁধা অবস্থায় আছে, বিষয়টি অনেক দুঃখজনক। তাকে সুস্থ্য করার জন্য আল্লাহর রহমতের পাশাপাশি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গনি বাবুল পাটওয়ারী বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে মানসিক ভারসাম্যহীন আবুদল খালেকের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করব।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মাহমুদুল হাসান বলেন, তার পরিবারের লোকজন যে চিকিৎসা করেছে সেই সকল কাগজ নিয়ে আসার জন্য দেখি কোন ব্যবস্থ করতে পারি কিনা।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, পরিবারের লোকজন আমাদের কাছে আসলে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারি কিনা।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম