ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধে শ্রবন প্রতিবন্ধীকে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে আয়েশা বেগম (৫২) নামে প্রভাবশালী এক প্রবাসীর স্ত্রী’র বিরুদ্ধে। ওই মামলাটির মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠানোয় উক্ত প্রতিবেদন সৃজনকারী উপপুলিশ পরির্দশক (এসআই) আনোয়ার হোসেন’র এমন কর্মকান্ডে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বিভিন্ন মহলে। উপজেলার চর দুঃখীয়া পূর্ব ইউনিয়নের দক্ষিণ আলোনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, উপজেলার চরদু:খিয়া পুর্ব ইউনিয়নের দক্ষিণ আলোনিয়া গ্রামের মিজি বাড়ির কাতার প্রবাসী আমির হোসেন ও একই বাড়ির মৃত মুসলিম মিজির ছেলে মনির হোসেনের সাথে বসত বাড়ির জমি নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৫বছর যাবত বিরোধ চলে আসছে। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে আমির হোসেনের স্ত্রী আয়েশা বেগম মনির হোসেনকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০২২ সনের ২১ অক্টোবর আয়েশা বেগম বাদী হয়ে মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ১২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবীর একটি মামলা দায়ের করে। সে মামলাটি তদন্তকারী অফিসার হিসেবে ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর তিনি সরেজমিন তদন্ত না করে মামলার বাদীর সাথে আতাঁত করে চাঁদা দাবীর বিয়ষটি সত্য বলে আদালতে মনগড়া তদন্ত প্রতিবিদন প্রেরণ করেন। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করার পরপরই আদালত থেকে তার কপি সংগ্রহ করে মনির হোসেন। তদন্ত প্রতিবেদনে যাদেরকে স্বাক্ষী হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয়েছে তাদের অনেকেই তা জানেন না। স্বাক্ষীদের কেউ আবার দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে রয়েছে।
গত ৭ মার্চ দুপুরে সরেজমিনে জানা যায়, কাতার প্রবাসী আমির হোসেনের স্ত্রী আয়েশা বেগম বিগত প্রায় ১৫ বছর পুর্বে একই বাড়ির মৃত মুসলিম মিজির ছেলে মনির হোসেনের আংশিক সম্পত্তি দখলে নিয়ে একটি পাকা ভবন নির্মাণের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে মনিরের সাথে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। ফলে মনিরকে শায়েস্তা করতে আয়েশা বেগম আদালতে মনিরের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। একপর্যায়ে মনির হোসেনকে মামলায় জড়িয়ে আয়েশা বেগম তার কার্য সিদ্ধি করে। সেই থেকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে অদ্যাবধি হয়রানী অব্যাহত রেখেছে। ইতিপুর্বে ফরিদগঞ্জ থানায় এবং চাঁদপুর আদালতে ৮/৯টি মামলা দায়ের করে মনিরকে হয়রানী করা হয়েছে। যার সবগুলো মামলার রায় মনিরের পক্ষে এসেছে। সর্বশেষ ২০২২ সনে চাঁদপুরস্থ বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মামলাটি মনিরের পক্ষে রায় হয়। এরপর পুনরায় মনিরকে হয়রানী করার জন্য নতুন করে ফন্দি আঁটে আয়েশা বেগম। সে লক্ষেই বিগত ২০২২ সনের ২১ অক্টোবর আয়েশা বেগম বাদী হয়ে মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ১২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবীর একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় উল্ল্যেখ করা হয়েছে আয়েশা বেগম তার পাকা ভবনের টয়লেটের ময়লা নিস্কাশনের জন্য পাইপ লাইনের সংযোগ দিতে গেলে মনির হোসেন, তার স্ত্রী পারুল বেগম ও ছেলে মাকসুদসহ বাঁধা প্রদান করে এবং ১২ লক্ষ চাঁদা দাবী করে। এছাড়া মামলায় যাদেরকে স্বাক্ষী হিসেবে দেয়া হয়েছে তাদের অনেকেই প্রবাসে রয়েছে। এরপর সেই মামলাটি তদন্তকারী অফিসার হিসেবে ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক সরেজমিন তদন্ত না করেই এবং জমি সংক্রান্ত পুর্ব বিরোধের বিষয়টি আড়ালে রেখে মামলার বাদীর সাথে আতাঁত করে চাঁদা দাবীর বিয়ষটি সত্য বলে আদালতে মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
অপরদিকে, স্বাক্ষীদের মধ্যে কাদির মিস্ত্রি, ইব্রাহিম, ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমান, শরীফসহ স্থানীয় অনেকেই আয়েশা বেগমের সাথে মনির হোসেনের জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে স্বীকার করে জানান, চাঁদা দাবী ও মামলার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। এছাড়া মামলার বিষয়েও তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
ভুক্তভোগী মনির হোসেন জানান, আমি একজন অসহায় মানুষ। দিন চা-পান সিগারেট বিক্রি করে কোন রকম পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছি। তার উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে একেরপর এক হয়রানি করা হচ্ছে। আমি মানুষিক ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি এই মিথ্যা মামলা থেকে পরিত্রাণ চাই। তাই আমি তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে মামলাটি পুন;তদন্ত করার জন্য আদালতের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।
মামলার বাদী আয়েশা বেগমকে বাড়ীতে পাওয়া যায়নি, তিনি মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, মনিরের সাথে জমি সংক্রান্ত পুর্ব বিরোধ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে শালিস বেঠকে বসে সে বিরোধ মিমাংসার কথা বললে মনির ক্ষতিপূরণ দাবী করে। তাই তার বিরুদ্ধে ১২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবীর মামলা করেছি।
বিষয়টি নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, তখন আমার কাছে স্বাক্ষীরা স্বাক্ষ্য দিয়েছে, তাই আমি প্রতিবেদন দিয়েছি। প্রয়োজনে আদালতে স্বাক্ষীরা তাদের সঠিক স্বাক্ষ্য দিলে মামলা নিস্পত্তি হয়ে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মান্নান জানান, উক্ত মামলা ও তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরন আমি ফরিদগঞ্জ থানায় যোগদানের পূর্বে হয়েছে, তাই এ ব্যাপারে আমি অবগত নই। তবে পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে আমি দায়িত্বপালন করছি।
ফম/এমএমএ/