ফরিদগঞ্জে প্রতারক স্বামীর অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার স্ত্রী

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): একটু সুখের আশায় নিজের অর্জিত নগদ লক্ষ লক্ষ টাকা আর সম্পত্তি স্বামীর হাতে তুলে দিয়েও সুখ পেলেন না অসহায় স্ত্রী খোরশেদা বেগম। কিডনী জটিলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে শোকে আক্রান্ত ও মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত বিচার দাবি করে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চাঁদপুরে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নারী খোরশেদা বেগম। অবশ্য এর আগেও স্থানীয় সালিসদের মাধ্যমে বহুবার চেষ্টা করেছেন সু-বিচার পেতে। কিন্তু পেশী শক্তিসম্পন্ন নারীলোভী, প্রভাবশালী প্রতারক চতুর স্বামী আব্দুস সালাম ভূঁইয়া ও তার দোসর এবং বুদ্ধিদাতা সকল অপকর্মের সঙ্গী চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার আব্দুল করিম ভূঁইয়ার ছেলে মোঃ মফিজুল ইসলামের প্রতারণার কাছে পরাস্ত হয়েছেন বার বার। তাই সুবিচারের আশায় আশ্রয় নিয়েছেন বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের কাছে। তার বিশ্বাস, বিজ্ঞ বিচারক ন্যায়বিচারের মাধ্যমে প্রতারক স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান পূর্বক তাকে মানসিক প্রশস্তি লাভে সহায়তা প্রদান করবেন।

প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার ফরিদগঞ্জ এলাকার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা খোরশেদা বেগম তার আর্জিতে জানান, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া (উত্তর) ইউনিয়নের পশ্চিম ভাওয়াল গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির মৃত- আব্দুল জলিল ভূঁইয়ার ছেলে, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরিরত আব্দুস সালামের সাথে পারিবারিক দেখাশোনার মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর থেকেই স্বামী নামের সালামের লোভ-লালসা আর অনৈতিক কার্যকলাপ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে সহজ সরলমনা স্ত্রী খোরশেদা বেগমের কাছে।

স্বামীর একের পর এক অন্যায় আব্দার পূরণ ও সংসারের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করতে গিয়ে তার সারাজীবনের কষ্টার্জিত ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা তুলে দেন স্বামী নামের অর্থ লোভী সালামের হাতে। তাতেও সালামের মন পেলেন না, পেলেন না সামান্যতম সুখ-শান্তি। প্রতিনিয়তই জুটতো নির্যাতন আর অসহনীয় জ্বালা-যন্ত্রণা। কিন্তু নিজের চাকুরি আর মানসম্মানের ভয়ে তা তেমনভাবে প্রকাশ করতেন না কারো নিকট। এমনি করেই দাম্পত্য জীবন কাটিয়ে আসছিলেন শত অত্যাচার সহ্য করেও। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গলো যখন জানতে পারেন তারই স্বামী তার অজান্তে বিনা অনুমতিতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন ও হাফসা বেগমের কন্যা আয়েশা বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সে ঘরে ২ টি কন্যা সন্তানসহ ১ টি পুত্র সন্তানও রয়েছে। সেই স্ত্রীর সাথেই দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে তারই অজান্তে ঘর সংসার করে আসছেন নির্বিঘ্নে। এখন আবার তারই দেয়া অর্থে কেনা বাড়িঘর সহায়সম্পত্তি দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে লিখেপড়ে দিচ্ছেন।

এমনি পরিস্থিতিতে ঘটনা সম্পর্কে তার স্বামীর কাছে জানতে গিয়ে, নতুন করে আবার স্বামী নামক পশু সালামের অত্যাচারের শিকার হন এবং তার নানা হুমকি ধমকিতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। স্বামী সালাম তার প্রতি ফতোয়া জারি করেন, তার সাথে সংসার করতে হলে তাকে মাসে মাসে এক লাখ টাকা করে মোহরানা দিতে হবে। পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে তা মীমাংসার জন্য সে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের মাধ্যমেও সালিস দরবারে বসেন। কিন্তু কোনো দরবারই তাকে অন্যায়, অত্যাচার, লোভ-লালসা থেকে বিরত রাখতে পরেনি।

নারীলোভী সালাম তার চাকুরিজীবী স্ত্রীর প্রতি নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেন। তিনি খোরশেদা বেগমকে চাকুরি ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন এবং তার প্রফিডেন্ট ফান্ডের জমাকৃত টাকা তাকে না দেয়া হলে প্রথমা স্ত্রী খোরশেদা বেগমকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি প্রদান করেন। তার এ ধরনের হুমকিতে ভীত সন্ত্রস্ত সরকারি চাকুরিজীবী খোরশেদা বেগম নিরূপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নেন। মামলা করেন বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে। আটক হন স্বামী নামের অত্যাচারী আব্দুস সালাম ভূঁইয়া।

আটক হয়ে তিনি বসে নেই, বিভিন্নভাবে স্ত্রী খোরশেদা বেগমকে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন তাকে দেখে নেয়া হবে বলে। এমনি পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী নির্যাতিতা সরলমনা স্ত্রী খোরশেদা বেগম নিজের জীবনের নিরাপত্তাসহ স্বামী আব্দুস সালাম ভূঁইয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বিজ্ঞ আদালতসহ প্রশাসনের কাছে। তার এমন সাজা হোক, যাতে কোনো স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি এমন আচরণ করতে সাহস না পায়।
ফম/এমএমএ/

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম