চাঁদপুর: জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের আয়োজনে ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুরের সহযোগিতায় “করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়” শীর্ষক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভা বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ২০২১ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাহাব উদ্দিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাহাব উদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থতির কারণে ৫৪৫ দিন শিক্ষার্থীদের আমরা স্কুলে আনতে পারি নাই। স্কুল খোলার পর আমরা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক স্কুলগুলো পরিচালনা করছি। তিনি বলেন ইতিমধ্যে সনাকের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য ৪৫০টি বর্ণমালার নীতিকথা বই দেওয়া হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে ৫টি উপজেলায় সেই বইগুলো বিতরণ করেছি। তিনি বাকী ৩টি উপজেলায় বর্ণমালার নীতিকথা বই দেওয়ার জন্য সনাকের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সনাককে আরো বেশি সাপোর্ট দিতে হবে। পাশাপাশি অ্যাকটিভ মাদার্স ফোরামগুলোকে আরো কার্যকর করার জন্য তিনি সনাকের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সনাকের কাজের আরো বেশি সম্প্রসারণ করতে হবে। নতুন নতুন পরামর্শ দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সনাক-টিআইবি’র সৃষ্টিশীল ধারণা ও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কাজগুলোকে আরও ত্বরান্বিত করার জন্য মাঝে মধ্যে এধরনের সভা খুবই প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ফরিদ উদ্দিন বলেন, সনাকের এই মিটিংগুলোর মাধ্যমে আমরা বেশ কিছু দিকনির্দেশনা পেতে পারি এবং আমরা একটু তৎপর হই। অন্যান্য দপ্তরের মতো আমরাও অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমাদের মধ্যে মনোসামাজিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে পূর্বের মতো ফিরিয়ে আনার জন্য সকলের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। অধিদপ্তরের নির্দেশনায় এসএমসি ও পিটিএ কমিটিগুলোকে সক্রিয় করার কথা বলা আছে। আমরা সেই মোতাবেক কাজ করছি। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সকলের সহযোগিতা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
স্বাগত বক্তব্য ও সভার লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে সনাকের প্রাক্তন সভাপতি ও সদস্য কাজী শাহাদাত বলেন, সনাক-টিআইবি কোন খবরদারী প্রতিষ্ঠান নয়। আমরা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার চেষ্ঠা করে থাকি। স্কুল কলেজগুলো খুলে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মনে অনেক উচ্ছ্বাস। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তিনি আগামী সভাগুলো যাতে শারিরীক উপস্থিতিতে হয় সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এধরণের ভার্চুয়াল সভা আয়োজন করার জন্য তিনি শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
করোনাকালীন সংকট মোকাবেলায় শিক্ষা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ, বাস্তবায়ন এবং চ্যালেঞ্জ বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও মোঃ আব্দুল হাই। তারা বলেন, ন্যাপ ও এনসিটিবি কর্তৃক পাঠ পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে এবং আমরা সেই মোতাবেক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বিগত দেড় বছওে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যে ঘাটতি হয়েছে তা কিভাবে পূরণ করা যায় সে বিষয়ে ইতিমধ্যে অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা এসেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই স্কুলে ক্লাশগুলো চলছে। স্কুলে আসার পর প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপা হয়। তারা নিয়মিত মাস্ক পরিধান করে স্কুলে আসছে। দুরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের বসানো হচ্ছে। শিপ্টিং অনুযায়ী ক্লাশগুলো পরিচালিত হচ্ছে। আমরাও প্রতিদিন কমপক্ষে ৫টি করে স্কুল পরিদর্শন করছি। তারা আরও বলেন, অধিদপ্তর থেকে বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শিক্ষকরা সেই মোতাবেক পাঠ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তারা সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
টিআইবি’র ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর মোঃ জসীম উদ্দিন বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় আগের অবস্থানে নিয়ে আসা ও শিক্ষার মান আগের অবস্থানে নিয়ে আসাটাই আমাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, টিআইবি’র পরবর্তী প্রকল্পে বেশ ক’টি স্কুল নিয়ে কাজ করা হবে। বিগত দিনগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষা কর্তৃপক্ষ যেভাবে সনাককে সহযোগিতা করে গেছেন আগামী দিনগুলোতে তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে চাঁদপুর জেলা ও ৮টি উপজেলার ওয়েবপোর্টাল স্টাডি করেছি। রিপোর্টে দেখা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ওয়েবসাইটি বেশী হালনাগাদ আছে। তিনি এভাবে প্রতিটি উপজেলা শিক্ষা অফিসের ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ করার জন্য শিক্ষা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম বলেন, করোনাকালীন সময়ে সতের মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ছিলো। করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাশগুলো পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো করে নাই। শিক্ষা ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে হলে শিক্ষকদের অনেক কষ্ট করতে হবে। তিনি অ্যাকটিভ মাদার্স ফোরামকে আরো বেশি কার্যকর করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ মাসুদ রানার সঞ্চালনায় সভায় বিগত সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। তিনি টিআইবি’র পরবর্তী প্যাক্টা প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা কার্যক্রমের সম্প্রসারন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সনাক-চাঁদপুরের সহ-সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ও সবিতা বিশ^াস, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ মোশারেফ হোসেন, সদস্য ইসমত আরা সাফি বন্যা, মোঃ আব্দুল মালেক, রফিক আহমেদ মিন্টু, উত্তর তরপুরচন্ডী কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোদেজা বেগম, ইয়েস গ্রুপের দলনেতা অনয় দেবনাথ প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোল্লা বখতিয়ার হোসেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ইলিয়াস হোসেন, মোঃ মজিবুর রহমান, মো: মনসুর আহমেদ, সনাক-চাঁদপুরের ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ডস গ্রুপের সদস্যবৃৃন্দ এবং টিআইবি কর্মীবৃন্দ।
ফম/এমএমএ/