তিনি মোহাম্মদ হোসেন খান। অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খান, হাজারো শির্ক্ষাথীর শিক্ষক । মহান পেশায় উদ্বদ্ব হয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৭২ সালে চাঁদপুর কলেজে । তার বিষয় ছিলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান। তিনি ঢা. বি. থেকে সম্মান ও মার্ষ্টাস ডিগ্রি কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। ঢাকায় তিনি ঢাকাস্থ চাঁদপুর সমিতির নেতা ছিলেন। সে যাহোক, তার কর্ম জীবন ছিলো বৈচিত্রময়।
তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তিনি ইচ্ছে করলে অনেক কলেজের অধ্যক্ষও হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। চাঁদপুরকে ভালোবাসতেন, ভালোবাসতেন চাঁদপুরের মানুষদের, চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবকে। তিনি শুধু কলেজ শিক্ষকই ছিলেন না , ছিলেন একজন সমাজসেবি।
এক সময় মহকুমা বা জেলা প্রশাসনের অধিকাংশ অনুষ্ঠানে /প্রোগ্রামে তিনি সর্বদা যুক্ত থাকতেন। তিনি একবার জেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ শিক্ষক নির্বাচিত হন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সমাজসেবার অংশ হিসেবে তিনি সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তরকালে চাঁদপুরে হাতেগোনা যে ক’ জন সাংবাদিক ছিলো তার মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
তিনি প্রথমে দৈনিক র্পূবদেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। থাকতেন তালতলা ইউসুফ ভিলা তে। ১৯৭৩ সালে কোন একদিন এক অসহায় বৃদ্ব লোক আমাকে চাঁদপুর কলেজ মসজিদে নামাজের পর বললো, “আমার পেনশনের টাকা পাচ্ছি না। আপনিতো পত্রিকায় লেখালেখি করেন। আমার জন্য কিছু করন যায় নি? টাকাটা খুব দরকার বাবা। আমি তখন উনাকে বললাম “ আমার লেখায় কাজ হবে না ’’। (আমি তখন “দ্য ডেইলী পিপলস ‘ পত্রিকায় (শাহবাগ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত) লিখতাম বিনে পয়সায় ,স্রেফ ইংরেজি ভাষা চর্চার জন্য )। আপনি বরং আমার সাথে চলেন –“এক তুখুড় সাংবাদিক সাহেবের কাছে নিয়ে যাবো। তিনি তালতলায় বসবাস করেন। নিয়ে গেলাম । তিনি স্যারকে বললেন ,তার পেনশনের বিড়ম্বনার ও বিলম্বের কথা। খান স্যার মনোযোগ দিয়ে বৃদ্বের কথাগুলো শুনলেন। সব তথ্য টুকে নিলেন। সবশেষে বললেন “ এই কাগজে আপনার পুরো নাম -ঠিকানাটা লেখেন ।’’ তিনি অফিসে খোঁজ খবর নিয়ে নিউজ দিলেন। ৩/৪ দিন পরই নিউজ উঠে গেলো র্পূবদেশ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায়, বক্স করে । লোকটি ১০/১২ দিনের মধ্যেই পেনশনের টাকা পেয়ে আমায় দোয়া করতে লাগলেন মসজিদে। আমি বললাম,’’ আমাকে না, ওই স্যারের জন্য দোয়া করেন।’’
এরপরে তিনি বাসস এর সাথে যুক্ত হন এবং জেলা প্রতিনিধি নিযুক্ত হন ।
যখনই চাঁদপুর শহরের কোন স্থানে নদী ভাংগতো , তিনি বাসস কে নিউজ দিতেন । হাইলাইট করতেন। লঞ্চডুবির নিউজও বাদ দিতেন না।
প্রেসক্লাবের নেতা হিসেবে যে কোন অনুষ্ঠানে তিনি একা নিমন্ত্রন গ্রহন করতেন না। আরও কয়েকজনকে নিমন্ত্রন করতে হবে বলে হোস্টদের জানাতেন। তখন আমাকেও ৫/৬ জনের মধ্যে যুক্ত করা হতো। জেলা পুলিশের র্বাষিক বড় খানা । পুরানবাজার জুট মিলের র্বািষক ভোজে আমায়্ও নিয়ে যেতেন এবং সবাইকে সগৌরবে প্রেস ম্যান হিসেবে হোস্টদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেন ।
দীর্ঘ চাকুরী জীবনে ও সাংবাদিকতায় তিনি ছিলেন সৎ ও র্নিলোভ। সন্ধা হলেই ব্যাংক কলোনী থেকে রিক্সায় প্রেসক্লাবে না আসলে তিনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন না। তিনি বলতেন,“ প্রেসক্লাবতো আমাদের সেকেন্ড হোম’’। প্রেসক্লাবের টিনশেড বাঙলো টাইপ ভবন তৈরিতে, তিনি অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। তখন প্রেসক্লাবের তহবিল ছিলো মাত্র ৩৫৬ টাকা।
পরর্বতীতে ১৯৮২- তে প্রেসক্লাব সংলগ্ন উদয়ন শিশু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এবং সেই সময়ে পুরানবাজারে পুরানবাজার কলেজ প্রতিষ্ঠায়ও তিনি টিচার ও সাংবাদিক হিসেবে প্রশংসনীয় ভুমিকা পালন করেন।
সরকারি চাকুরি থেকে অবসরের পরও তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। তার মধ্যে কখনো কোন না- পাওয়ার বেদনা কাজ করেনি। ছিলো না কোন হতাশা বা অভিযোগ। শির্ক্ষাথীদের স্নেহ করতেন , ব্যবহার ছিলো অমায়িক । অনৈতিক বা অন্যায় কাজে কোন আপোষ করেন নি।
তার সহধর্মীনি শিরিন হোসেন খান একজন সুগৃহীনি ও অতিথিপরায়ণ । কখনো কোন সাংবাদিক স্যারের বাসা থেকে আপ্যায়িত না হয়ে এসেছে- এমনটি দেখা যায় নি। শিরিন হোসেন ছিলেন প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত – উদয়ন শিশু বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ।
এরপর এভাবেই চলতে থাকে র্দীঘ প্রায় সাড়ে চার দশক।
বছর পাঁচেক আগে চাঁদপুর ব্যাংক কলোনীর বাসা বিক্রি করে সব কিছু গুটিয়ে তিনি সস্ত্রীক ঢাকার বাসায় চলে যান এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তীতে সেখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে যান।
অবশেষে তিনি হঠাৎ পরকালে !
মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতি করুন, আমিন।
লিখেছেন: অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ, প্রাক্তন ছাত্র , সাবেক অধ্যক্ষ,পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ ও সাবেক সহ-সভাপতি, চাঁদপুর প্রেসক্লাব। জেলা প্রতিনিধি -দ্য ফিনান্শিয়াল এক্সপ্রেস।