
।। এস ডি সুব্রত।। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভের পর আষাঢ়ি পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা উৎসব পালন করেন।
প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান।
প্রবারণা শব্দটি দিয়ে ‘আশার তৃপ্তি’, ‘অভিলাষ পূরণ’, ‘ধ্যান বা শিক্ষা সমাপ্তি’ বোঝানো হয়। এ দিনে ভিক্ষুরা হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে চারিত্রিক শুদ্ধির জন্য একে অন্যকে করজোড়ে বলেন, ‘বন্ধু, যদি আমার কোনোরূপ দোষত্রুটি দেখো বা কারও থেকে শুনে থাকো এবং এ কারণে যদি আমার ওপর সন্দেহ হয়ে থাকে তাহলে আমাকে বলো, আমি তার প্রতিকার করব।’ প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে এক মাস দেশের প্রতিটি বৌদ্ধবিহারে শুরু হবে কঠিন চিবর দান উৎসব।
প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষু সংঘের প্রাতরাশ, মঙ্গলসূত্র পাঠ, বুদ্ধপূজা, পঞ্চশিল ও অষ্টাঙ্গ উপসথ শিল গ্রহণ, মহাসংসদান, অতিথি আপ্যায়ন, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ, আলোচনা সভা, প্রদীপ পূজা, আলোকসজ্জা, বিশ্বশান্তি কামনায় সম্মিলিত বুদ্ধোপাসনা, ফানুস ওড়ানো ও বুদ্ধকীর্তন।
এ শুভতিথিতে ভগবান বুদ্ধ দেবলোক থেকে সাংকশ্য নগরে অবতরণ করেছিলেন। ভিক্ষুদের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রতাদি সম্পন্ন হয় এই দিনে। এ কারণে আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধদের একটি পবিত্র দিন।প্রবারণার কার্যসূচি শুরু হয় ভোর রাতে বিশ্বশান্তি কামনায় বিশেষ সূত্রপাঠের মধ্য দিয়ে। প্রদীপ পূজার পাশাপাশি সকালের মতো প্রার্থনা সভাও অনুষ্ঠিত হবে।
ছেলেমেয়েদের বাজি ফুটানো, ফানুস ওড়ানো ও বুদ্ধ কীর্তনে আনন্দে উল্লাস ধ্বনিতে দিনের কার্যসূচির সমাপ্তি ঘটবে। এখানে উল্লেখ্য, আজকের দিন থেকে ভগবান বুদ্ধের আদেশে আদিষ্ট ভিক্ষুসংঘ বুদ্ধবাণী প্রচার করে আসছে সাধারণ জনগণের হিতের ও সুখের জন্য।
ভিক্ষুরা এক সঙ্গে তিনটি চীবর ব্যবহার করতে পারেন। সেগুলো হলো : উত্তরাসঙ্গ, সংঘাটি ও অন্তরবাস। উল্লিখিত এগুলোর যে কোনো একটা দিয়ে ‘কঠিনচীবর দান’ করা যায়। কঠিনচীবর দানের দিন অরুণোদয় থেকে পরদিন অরুণোদয় পর্যন্ত সময়ে সুতা কাটা, কাপড় বোনা, কাপড় কাটা (কর্তন), সেলাই ও রং করা প্রভৃতি কাজ উল্লিখিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে দান করতে হয়। কঠিনচীবর দান প্রদানকারী এবং দান গ্রহণকারী উভয়ের ফল পুণ্যময়। সুখী সুন্দর ও কল্যাণময় হোক আমাদের পৃথিবী । সম্প্রীতির প্রগাঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মানবতার জয়গানে মুখরিত হোক প্রিয় বসুন্ধরা ।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।
০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ ।