চাঁদপুর: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী প্রত্যাশী রস্তম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই অভিযোগ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কায়েম পারভেজ লাভলুর বিরুদ্ধে। তিনি সভাপতি হয়ে তার স্ত্রী আমেনা বেগমকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে সব ধরণের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে কমিটির সদস্যরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিভাবক ও পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে অভিভাবক সদস্য মো. শরিফ হোসেন এবং শিক্ষানুরাগী সদস্য মো. আব্দুর রহমান বেপারী গত ২৩ জুন এই অভিযোগ করেন। অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয় জেলা প্রশাসক বরাবর।
অভিযোগের বিবরণ ও খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য গত ১৯ মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং পূর্বে কমিটির সভায় আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান যোগসাজসে তারা নিয়োগ পক্রিয়া তৈরী করেন। কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে ৬জনের স্বাক্ষর নিলেও এর মধ্যে তিনজন সভায় উপস্থিত ছিলেন না। তাদের কাছ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরবর্তী সময়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়েছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর তদন্ত নোটিশ প্রেরণ করেন। সে আলোকে অভিযোগের বিষয় ৮ জুলাই বেলা ১১টায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। তদন্ত কার্যক্রমে জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ, সহকারী পরিদর্শক সুমন খান, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান, অভিযোগকারী সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্তকালে অভিযোগকারী ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা প্রকাশ্যে সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা প্রত্যেকটি বিষয় বক্তব্যে তুলে ধরেন। কিন্তু সভাপতি সবশেষে কথা বললেও অভিযোগের বিষয়ে সঠিক কোন যুক্তি তুলে ধরতে পারেননি। বরং কমিটির সাবেক সদস্য সোহেল সভাপতির বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন করে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। সভাপতির প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকির মধ্যে থাকতে হয় শিক্ষকদের। এসব কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন অবনতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। যে কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা অর্ধেকের চাইতে কমে আসছে। কারণ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে কমিটিতে কোন আলোচনা হয় না।
জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ ও সহকারী পরিদর্শক সুমন খান তদন্তকালে উভয় পক্ষের অভিযোগগুলো লিখিত গ্রহণ করেন।
অভিযোগকারীদের বক্তব্য হচ্ছে-তারা এই নিয়োগ পক্রিয়া বাতিল চান। কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে বর্তমান খন্ডকালীন শিক্ষক পারভেজ আলম পাটোয়ারী অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন বলে দাবী করেন। কারণ তার কম্পিউটার সনদ ভেরিফিকেশন দেখাতে পারেননি। তাকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া এবং সভাপতির স্ত্রী আমেনা বেগম যাতে কোনভাবে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে না পারে বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তা বরাবর জোর দাবী জানান। গোপনে কিংবা অন্য কোন অবৈধ পন্থায় এই দু’জন নিয়োগ পেলে বিদ্যালয়ে বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টির কথাও জানান তারা।
এদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি ও অভিভাবক সদস্যরা তদন্ত প্রতিবেদন সঠিক না হলে ভিন্ন উপায়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের হুমকি দিয়েছেন। তারা বিদ্যালয়ের অবৈধ নিয়োগ বন্ধ এবং শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, নিয়োগের বিষয়ে যে সভা হয়েছে সেখানে ৬জন উপস্থিত ছিলেন। তাদের কাছ থেকে পরে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে উনারা জানতেন। তদন্তকালে কর্মকর্তারা আমাকে যা প্রশ্ন করেছেন তার লিখিত উত্তর আমি দিয়েছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কায়েম পাররভেজ লাভলু তদন্ত চলাকালে কোন লিখিত বক্তব্য দেননি। তিনি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছেন। তার বক্তব্য হচ্ছে তিনি যা করেছেন সবকিছুই নিয়মের মধ্যে হয়েছে। সভা ডাকা হলে যার ইচ্ছা উপস্থিত হবেন, কেউ উপস্থিত না হলে তার দায়িত্ব তিনি কেন নিবেন।
চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ এই প্রসঙ্গে বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পক্রিয়ায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার কারণে এখন প্রশাসন থেকে কর্মকর্তা দেয়া হচ্ছে। এই পক্রিয়ায় এখন কেউ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নেই। আর আমরা তদন্ত প্রতিবেদন সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করবো।
ফম/এমএমএ/