চাঁদপুর: ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় চাঁদপুর জেলার অবহিতকরণ সভা সস্পন্ন হয়েছে।
বুধবার (৬ অক্টোবর) সকালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালী সংযুক্ত ছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি (কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলা) বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রান গোপাল দত্ত এমপি।
সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইমাম বা পুরোহিতরা যখন ধর্মীয় কথা বলেন তখন সবাই তাঁর কথাই সত্য হিসেবে ধরে নেন। এইখানে আমাদের যে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে তা হচ্ছে সেবাইত ও পুরোহিতদের প্রশিক্ষিত করা। যেমন আমাদের ইমাম, খাদেমদের প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন একইসাথে পুরোহিত ও সেবাইতদেরও প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন। ধর্মীয় রীতিনীতিতে যেমন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন তেমনি তাদের যে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক কিছু দায়িত্ব সেটাও তাদের জানা দরকার এবং সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
আমাদের ইমামকে বলা হয় নেতা ঠিক পুরোহিতদেরও একই অবস্থান আপনাদের সস্প্রদায়ে। পুরোহিতরা যখন কথা বলে তখন সমাজের বিজ্ঞ থেকে শুরু করে সমাজের ছোট-বড় সবাই তাদের কথা শুনে। যেহেতু তিনি ধর্মীয় লাইনে বেশি জানেন। এই কারণে তাদের একটা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব রয়েছে। উনার কথাটা যেন এমন না হয় যার তরুন সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় বা শান্তি-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটে। কাজেই এ দায়িত্বটা উনাদের নিতে হবে ও বুঝতে হবে, উনাদের অবস্থানটা কোথায় এবং সমাজের কোন জায়গাতে উনারা দাড়িয়ে আছে।
হিন্দু আইন ও পূজা পদ্ধতি নিযে জেলা প্রশাসক বলেন, পুরোহিতদের অনেকেই আছেন যারা হিন্দু আইন ভালোভাবে জানে না। হিন্দু আইনে একজন নারী ও পুরুষের কি অধিকার বা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি কিভাবে বন্টন করা হবে। অনেক সামাজিক বিচারকার্যে তাঁরাও উপস্থিত থাকে। যদি তখন তাঁরা হিন্দু আইন জানে তখন তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিতে পারবে। কাজেই হিন্দু আইন জানা থাকলে উনাদের অবস্থান থেকে কাজটা ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারবে।
জেলা প্রশাসক করোনা ভাইরাস ও আসন্ন পূজা নিয়ে বলেন, সামনে পূজায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সবাই সুস্থ থাকবো এবং ভালোভাবে পূজাটাকে উপভোগ করতে পারবো। আজকের এই অনুষ্ঠানটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচাইতে বড় উৎসব। এই উৎসবটা যেন শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারা আমাদের জন্যে বড় একটা প্রাপ্তি হবে।
কচুয়াতে যে ঘটনাটি ঘটছে তা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ছিলো না। এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমরা চাই না। যার যার কাছে তার ধর্ম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটা বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভাব ও আবেগের জায়গা। কাজেই এ জায়গায় যখন আঘাত আসে তখন আমরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারি না। আমরা চাই সবাই শান্তিতে ও সম্প্রতির সাথে থাকুক। যারাই এ কাজ করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। তাি আপনাদেরো সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, দুর্বৃত্ত সকল সমাজেই আছে। তারা সুযোগের সন্ধানে থাকে। কিন্তু আমরা তাদেরকে সুযোগ দিবো না। এদেশ শান্তির দেশ। সম্প্রতির সাথে যেন বসবাস করতে পারি। গুজবে কান দিবেন না। কেউ গুজব ছড়ালে সাথে সাথে প্রশাসনকে অবহিত করবেন। প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার)। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ধর্মের জায়গাটা অন্তরের। আমরা পুরোহিত বলি, আর ইমাম বলি আমরা তাদের মন থেকে শ্রদ্ধা করি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের জোয়ারে। মূল স্রোত ধারার সাথে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এধরনের কাজে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। চাঁদপুরে সাম্প্রদায়িক শক্তি ভালো আছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেন’র সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিভিল সার্জেন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ প্রমূখ।
এসময় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল ঘোষসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প সম্পর্কে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, প্রকল্পের জুনিয়র কনসালটেন্ট পরিমল মন্ডল। গীতা পাঠ করেন পূজা উদযাপন পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি নরেন্দ্র নারায়ন চক্রবর্তী।
ফম/এমএমএ/